
ছবি: সংগৃহীত
সহকর্মী যখন হঠাৎ এক টুকরো কুকি এগিয়ে দেন, তখন একটু ভালো লাগলেও, যদি আরেকজন সেইদিনই আপনার কাজ নিয়ে তির্যক মন্তব্য করে, তাহলে দিনের শেষে কোনটা বেশি মনে থাকে? বেশিরভাগ মানুষই স্বীকার করবেন—নেতিবাচক ঘটনাই বেশি তাড়া করে।
এই প্রবণতার পেছনে রয়েছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটি হচ্ছে নেগেটিভিটি বায়াস—মস্তিষ্কের স্বাভাবিক এক ঝোঁক, যা নেতিবাচক তথ্যকে বেশি গুরুত্ব দেয় এবং দীর্ঘদিন মনে রাখে।
কেন এমন হয়?
যুক্তরাষ্ট্রের সুস্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেতিবাচকতা-মুখীনতা মানুষের বিবর্তনগত একটি স্বভাব। স্বার্থমোর কলেজের মনোবিজ্ঞানী ক্যাথরিন নরিস বলেন, “মানুষের প্রধান লক্ষ্য হলো বেঁচে থাকা। ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে তা থেকে সরে আসতে আমাদের মস্তিষ্ক নেতিবাচক সংকেতগুলো বেশি গুরুত্ব দিয়ে নেয়।”
বিজ্ঞানীরা বলেন, একসময় বন্য প্রাণীর আক্রমণ থেকে বাঁচতে নেতিবাচকতার প্রতি এই সংবেদনশীলতা দরকার ছিল। আজকের যুগে সে ভয় না থাকলেও চাকরি হারানো, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া বা স্বাস্থ্যগত সংকটকে আমাদের মস্তিষ্ক একইভাবে সংকট হিসেবে বিবেচনা করে।
নেতিবাচকতা কেবল ক্ষতিকর নয়
বিশেষজ্ঞদের মতে, নেতিবাচক অনুভূতি সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় নয়। বরং অনেক সময় সমস্যার সমাধান ও নিজের আচরণ পরিবর্তনের জন্য এ ধরনের অনুভূতিই দরকার হয়। তবে অতিরিক্ত নেতিবাচক চিন্তা মানসিক চাপ ও উদ্বেগের জন্ম দিতে পারে।
কীভাবে সামলাবেন নেতিবাচকতা?
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও থেরাপিস্টরা বলছেন, নেতিবাচক চিন্তাকে দমন নয়, বরং তাকে সচেতনভাবে সামঞ্জস্য করতে হবে। এর জন্য কিছু কার্যকর পদ্ধতির পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা—
১. ইতিবাচকতার দিকে মনোযোগ সরান: নেতিবাচক চিন্তা যখন মনে আসে, তখন ইচ্ছাকৃতভাবে ভালো কিছু স্মরণ করুন। যেমন—যদি কেউ কাজ ভুলে যান, মনে রাখুন তিনি আগের দিন আপনাকে সাহায্য করেছিলেন।
২. কৃতজ্ঞতার চর্চা করুন: প্রতিদিন তিনটি ভালো জিনিস লিখে রাখুন যেগুলোর জন্য আপনি কৃতজ্ঞ। এটি মস্তিষ্কে ইতিবাচকতার এক নতুন অভ্যাস তৈরি করে।
৩. খারাপ অভ্যাস বদলাতে নেতিবাচক দিক চিন্তা করুন: ধূমপান ছাড়তে চাইলে এর কুপ্রভাব নিয়ে ভাবুন। যেমন—ক্যানসার, বাজে গন্ধ বা পরিবারে প্রভাব।
৪. অন্যের জন্য কিছু করুন: নেতিবাচক অনুভূতি অনেক সময় আমাদের আত্মকেন্দ্রিক করে তোলে। এই অবস্থা থেকে বের হতে অন্যের উপকার করুন—চাকরি খোঁজা বন্ধুকে রেফার করুন বা প্রতিবেশীর বাজার করে দিন।
৫. নেতিবাচক আবেগকে কাজে লাগান: কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাগ জমলে তা পরিবর্তনে কাজে লাগান। যেমন—সামাজিক উদ্যোগে যুক্ত হোন, প্রতিবাদ জানান।
এসএফ