
ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশিন চ্যানেলের টকশো অনুষ্ঠানে ‘আয়নাঘরের বন্দিশালা’ শীর্ষক আলোচনায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের শাসনামলে গুম ও খুনের ঘটনার অনুসন্ধানকারীরাও হুমকির মুখে আছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী মো. নূর খান লিটন।
তিনি বলেন, ‘আমরা পরপর বেশ সহযোগিতাসুলভ কাজ পেয়েছি, কিন্তু তারপর দেখলাম যে একটা মন্থর গতি। তারপর দেখলাম এটিকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য কখনো কখনো হুমকি-ধমকি। আমরা সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছি, আবার অনেক ক্ষেত্রে একেবারে বিপরীত বিষয়টা আমাদের সামনে এসেছে।’
টকশো উপস্থাপকের ‘বাংলাদেশে গুম এবং বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংস্কৃতিটা কবে থেকে মোটাদাগে শুরু হলো’ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যদি বলেন যে গুম এবং খুনের সংস্কৃতি, তাহলে বলব স্বাধীনতার পরপর থেকে শুরু হয়েছে। আর যদি বলেন মোটাদাগে, অর্থাৎ ব্যাপক মাত্রায় এবং অনেক গভীরে প্রথিতভাবে এই জিনিসটা কবে থেকে শুরু হয়েছে, তাহলে স্পষ্টভাবেই বলতে চাই যে গত স্বৈরাচার শাসকের আমলে, এই যে ১৫ থেকে সাড়ে ১৫ বছর যে স্বৈরশাসক ছিল, তাদের এই আমলটায় রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে গুমের রাজনীতি, তারপরে আন্দোলনকে দমিয়ে দেওয়ার হাতিয়ার হিসেবে এই গুমের কালচারটা ব্যবহার হয়েছে।’
‘১৬ বছরে কমবেশি ১৯০০ মানুষ গুমের অভিযোগ এসেছে’ উল্লেখ করে মো. নূর খান লিটন আরও বলেন, ‘তাদের একটা বড় অংশ কিন্তু ফেরত আসছে, একটা অংশের লাশ আমরা পেয়েছি। আরেকটা অংশের কিন্তু এখন পর্যন্ত হদিস পাইনি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এখন পর্যন্ত যাদের আমরা হদিস করতে পারিনি, অর্থাৎ তারা জীবিত না মৃত, কারা তাদেরকে উঠিয়ে নিয়েছে, তাদের জীবনের সমাপ্তিটা কীভাবে এসেছে বা এখন তারা কোথায়, এই বিষয়গুলো তো কয়েকটা প্রশ্নের ভিতরেই সীমাবদ্ধ না, এটার ব্যাপ্তি কিন্তু ব্যাপক এবং এটার গভীরতাও ব্যাপক।’
টকশো অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার হওয়া সদস্যদের পরিবারের প্ল্যাটফর্ম ‘মায়ের ডাক’ এর সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি। তিনি দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি ধরে সময় ধরে তার গুমের শিকার ভাই সাজিদুল ইসলাম সুমনকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। সুমনকে তার পরিবার ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর থেকে খোঁজা শুরু করেছেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘কারা নিয়ে গেছে এটা তো আমরা জানি, খুবই ক্লিয়ার।’
এছাড়া, অন্তর্বর্তী সরকারের গুম সম্পর্কিত তদন্ত কমিশন প্রসঙ্গে, ভাই সুমনকে খুঁজে না পাওয়া সানজিদা ইসলাম তুলি আরও বলেন, ‘অলরেডি আমরা এই সরকারের নয় মাস পার করে ফেলেছি, নয় মাস সময়টা কিন্তু কম না। তো কমিশনের কাজের ক্ষেত্রে বা তারা যে ইনভেস্টিগেশন করলো উইথ অল এভিডেন্সেস, এতো কিছু জানার পরেও আমরা নয় মাস পরে বিচারিক জায়গায় বা ওই সত্যটা অন্তত সামনে আনার জায়গা পর্যন্ত আসতে পারিনি।’
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=UBZkNrtGh98
রাকিব