ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

কৃষ্ণচূড়ায় মাতোয়ারা মন

লাল বেগুনি হলুদ বর্ণে প্রকৃতি সেজেছে নতুন সাজে

কাজী ইসফাক আহমেদ বাবু

প্রকাশিত: ০০:৫০, ১১ মে ২০২৫

লাল বেগুনি হলুদ বর্ণে প্রকৃতি সেজেছে নতুন সাজে

.

দেশের সব স্থানে সবুজের ছায়া ঘেরা গাছের আড়ালে জ্বলে ওঠে কৃষ্ণচূড়া। তার মাঝে বন জারুলের বেগুনি ফুল ও বানর লরি (রাধা চূড়া) হলুদ ফুলে প্রকৃতি সেজেছে যেন নতুন সাজে।
এপ্রিল, মে-জুনের দিকে কৃষ্ণচূড়া তার রক্তবর্ণ ফুল ফুটিয়ে প্রকৃতিকে সাড়া দেয় তার উজ্জ্বল ডালায়। গ্রামের বাড়ির পাশে সবুজ পাতা ঘেরার মাঝে বেগুনি রঙের জারুল গাছের ফুল উঁকি দিয়ে সৌন্দর্যে যুক্ত করে নতুন মাত্রা। মাঝে মাঝে হলুদ বর্ণের বানর লরি রাধা চূড়া ফুলে সত্যিই মধুময় দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে।
গাঁয়ের মেঠোপথে পথিক ক্লান্ত মনে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে একটু বসে বিশ্রাম নেন। আর কৃষ্ণচূড়া তার লাল বর্ণ দিয়ে পথিককে ছায়া দিয়ে ক্লান্তি দূর করে। প্রকৃতি কখনো মানুষকে বঞ্চিত করে না। বন্ধুপ্রতিম প্রকৃতি ভালোবাসা দিয়ে আপন করে নেয় মানুষকে। তার সৌন্দর্য অবলোকন থেকে বঞ্চিত করে না। কৃষ্ণচূড়া রক্তিম রূপ মানুষকে মাতোয়ারা করে। কৃষ্ণচূড়ার পাশাপাশি মিষ্টি রং বেগুন নিয়ে জামরুল ও বানরলরি রাধা চূড়া বাসন্তী রং নিয়ে তাদের রূপ ছড়িয়ে দিয়েছে। দেশ বাসীকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে তাদের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। গ্রাম বাংলার মাঠ-ঘাট, বাড়ির পেছনে, ঝোপে সবখানেই এখন বনজারুল ও বানর লরি গাছের সুন্দর ফুল শোভা পাচ্ছে। কবিরা এই দিনে কৃষ্ণচূড়া, জারুল, রাধাচূড়া ফুল নিয়ে কবিতা লিখে। কবিদের করে দিয়েছে প্রকৃতির এই রং-বেরঙের ফুল।
গ্রামের পথপ্রান্তরে কৃষ্ণচূড়া যেন আগুনেরই উজ্জ্বল প্রতিকৃতি। বসন্তের প্রথম আলোড়নে কৃষ্ণচূড়া জ্বলে ওঠে বিচিত্র এই প্রকৃতির বুকে। এর উজ্জ্বল রং এত অক্লান্ত প্রস্ফুটনের ঐশ্বর্য বৃক্ষকুলে খুবই দুর্লভ। গাঢ়, লাল, কমলা, হলুদ, হাল্কা বর্ণালিতে বিস্তৃত এর পাপড়িরাজি। বাংলাদেশের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে কৃষ্ণচূড়া গাছ জন্মে না। অতি পরিচিত এই বৃক্ষটি পাতা ঝরার দলের। এপ্রিল, মে-জুনের দিকে নতুন পাতা গজিয়ে ওঠে এবং ফুল ফোটে। প্রচণ্ড সূর্যের তাপ উপেক্ষা করে আপন মহিমায় কৃষ্ণচূড়া জ্বলে ওঠে তার উজ্জ্বলতা নিয়ে। পাতার ঐশ্বর্যও কৃষ্ণচূড়ার অনন্য এক সৌন্দর্র্য। গাঢ় সবুজ পাতার ফাঁক দিয়ে লাল রক্ত বর্ণ ফুল সত্যিই মধুময় দৃশ্যের সৃষ্টি করে থাকে।
বাংলাদেশের প্রকৃতিতে কৃষ্ণচূড়ার উপস্থিতি এত প্রবল যে সব গাছ, সব রংকে ¤াøান করে কৃষ্ণচূড়া জেগে ওঠে অনন্যরূপ ও রসে। এই সময়ে অনেক তরুণ-তরুণীর হাতে কৃষ্ণচূড়ার ফুল দেখা যায়। কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য উপলব্ধির জন্য স্কুল, কলেজ,  মন্দির, মসজিদের সামনে গাছ লাগানো হয় এবং রাস্তার ধারে, বাড়ির আঙ্গিনায় বিস্তৃত অঙ্গনেও এ গাছ প্রচুর লাগানো হয়। গ্রামের মানুষ কৃষ্ণচূড়াকে নানা রোগের ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার করে থাকে। বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে কৃষ্ণচূড়া ফুলের উপস্থিতি রয়েছে।
সবুজের ছায়াঘেরা সুন্দর পরিপাটি গ্রামগঞ্জের রাস্তার পাশে সারি সারি বাহারি গাছের সমারোহ। পথচারীকে মগ্ন ও নয়নাভিরাম এসব দৃশ্য হৃদয় জুড়িয়ে যায়। এমন স্বপ্ন লালন করে গ্রামগঞ্জের প্রতিটি মানুষ। সবুজ ঘেরা নয়নাভিরাম কোনো দৃশ্য উপভোগ করা বড়ই দুরূহ।
মানুষ প্রকৃতিতে বঞ্চিত করলেও প্রকৃতি মানুষকে কখনো বঞ্চিত করে না। প্রকৃতি তার বন্ধুপ্রতিম ভালোবাসা নিয়ে মানুষকে আপন করে নেয়। বঞ্চিত করে না তার সৌন্দর্য অবলোকন করা থেকে। তাই প্রকৃতি সেজেছে তার আপন সাজে। রূপ, রং, বৈচিত্র্য এবং মায়াময়ী আকর্ষণ ক্ষমতা দিয়ে প্রকৃতি বেঁধেছে সবাইকে। গ্রীস্মের তাপপ্রবাহের প্রখরতা ভেঙে কৃষ্ণচূড়ার ডগায় ছড়িয়ে দিয়েছে রূপের আগুন। কৃষ্ণচূড়ার পাশাপাশি মিষ্টি রং নিয়ে জারুল, বাগানবিলাসও তাদের রূপ ছড়িয়ে দিয়েছে, সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য।

×