
ছবিঃ সংগৃহীত
‘মেইড ইন ইউএসএ’—এই স্লোগানে বাজারে আসার ঘোষণা দিয়েছিল ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের নতুন স্মার্টফোন ব্র্যান্ড ট্রাম্প মোবাইল। তবে ওয়েবসাইট থেকে ইতোমধ্যে সেই কথাটি সরিয়ে ফেললেও, প্রতিষ্ঠানটি এখনো দাবি করছে যে তাদের ‘T1 8002’ মডেলের ফোনটি ‘গর্বের সঙ্গে আমেরিকাতেই তৈরি’।
ইন্টারনেট আর্কাইভের সংরক্ষিত সংস্করণ অনুযায়ী, ২২ জুনের আশেপাশে ট্রাম্প মোবাইল তাদের ওয়েবসাইটে ভাষার পরিবর্তন আনে। ২৫ জুন পর্যন্ত ওয়েবসাইটে লেখা ছিল, ফোনটি ‘আমেরিকান মূল্যবোধকে কেন্দ্র করে ডিজাইন করা হয়েছে’। অথচ তার আগের সংস্করণে বলা হয়েছিল, এটি ‘মেইড ইন দ্য ইউএসএ’।
প্রথম এই পরিবর্তনের বিষয়টি প্রকাশ করে প্রযুক্তি সংবাদমাধ্যম দ্য ভার্জ। পরে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন নিশ্চিত করে, তারা আগেই একটি স্ক্রিনশটে পুরনো দাবির প্রমাণ পেয়েছে।
চীনা ফোনের সঙ্গে মিল, ভাঙছে বিশ্বাস
বিশ্লেষকদের একাংশ শুরু থেকেই ফোনটির উৎপত্তি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে আসছিলেন। প্রযুক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান Creative Strategies-এর বিশ্লেষক ম্যাক্স ওয়েইনবাখ এবং Purism-এর প্রধান নির্বাহী টড উইভার বলেন, ফোনটির স্পেসিফিকেশন অনেকটাই চীনা প্রতিষ্ঠান Wingtech নির্মিত ‘Revvl 7 Pro 5G’ ফোনের মতো।
ওই ফোনটি বর্তমানে অ্যামাজনে ১৬৯ ডলারে বিক্রি হচ্ছে এবং এটি একটি চীন-ভিত্তিক ফোন যা মার্কিন বাজারে রিব্র্যান্ড করে বিক্রি করা হয়। অথচ ট্রাম্প মোবাইলের ফোনের মূল্য ধরা হয়েছে ৪৯৯ ডলার।
এখনও ‘আমেরিকান’ দাবি
যদিও ওয়েবসাইট থেকে সরানো হয়েছে ‘Made in USA’ লাইনটি, ট্রাম্প মোবাইল এক বিবৃতিতে সিএনএন-কে জানায়, ‘আমাদের ফোনগুলো গর্বের সঙ্গে আমেরিকাতেই তৈরি হচ্ছে।’ তারা আরও দাবি করে, ‘ভিন্নমতের যেকোনো জল্পনা-অনুমান অসত্য ও বিভ্রান্তিকর।’
ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এখনও বলা হচ্ছে, ফোনটি ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডিজাইন ও নির্মিত’। ১৬ জুন ট্রাম্প টাওয়ারে ফোনটির ঘোষণায় পার্টনার প্যাট ও’ব্রায়েন বলেন, ‘এই ফোনগুলো আমরা আমেরিকাতেই তৈরি করব।’ তবে এরই মধ্যে ট্রাম্পের ছেলে এরিক ট্রাম্প এক সাক্ষাৎকারে জানান, ‘ভবিষ্যতে সব ফোনই আমেরিকায় তৈরি হতে পারে।’
স্পেসিফিকেশনেও রহস্য
ট্রাম্প মোবাইল ওয়েবসাইটে ফোনটির স্ক্রিনের আকারও বদলে গেছে। শুরুতে বলা হয়েছিল ৬.৭৮ ইঞ্চির স্ক্রিন, এখন লেখা হচ্ছে ৬.২৫ ইঞ্চি—যা আইফোন ১৬ ও আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্সের মধ্যে পার্থক্যের মতোই বড়। এছাড়া ফোনের মেমোরি সম্পর্কেও এখন কিছু বলা হচ্ছে না, যা সাধারণত পারফরম্যান্সের গুরুত্বপূর্ণ সূচক।
‘ডিজাইন’ আর ‘নির্মাণ’—দুটি শব্দেই বিভ্রান্তি
IDC-এর গবেষণা পরিচালক রায়ান রেইথ বলেন, ‘ডিজাইন করা আর তৈরি করা—এই শব্দ দুটি যথেষ্ট অস্পষ্ট। অ্যাপল যেমন ক্যালিফোর্নিয়ায় ডিজাইন করে, কিন্তু চীন ও ভারতে যন্ত্রাংশ এনে অ্যাসেম্বলি করে। একই রকম কিছু ঘটছে ট্রাম্প মোবাইলের ক্ষেত্রেও।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে এমন কোনো ফোন নেই, যেটি পুরোপুরি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমেরিকায় তৈরি হচ্ছে।’
প্রযুক্তি খাতে রাজনৈতিক চাপ?
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প অ্যাপল ও স্যামসাং-এর মতো প্রযুক্তি জায়ান্টদের ওপর চাপ দিয়েছিলেন যেন তারা যুক্তরাষ্ট্রে স্মার্টফোন তৈরি করে। ট্রাম্প মোবাইলের এই প্রকল্প অনেকাংশে সেই রাজনৈতিক অবস্থানেরই প্রতিফলন। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন ভূখণ্ডে পূর্ণাঙ্গ মোবাইল উৎপাদন এখনো বাস্তবতাসম্মত নয়, বিশেষ করে যে সময়ের মধ্যে ফোনটি বাজারে আনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
Purism-এর প্রধান নির্বাহী টড উইভার বলেন, ‘ট্রাম্প পরিবার যদি গোপনে বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে একটি নিরাপদ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে না তুলে থাকে, তবে এই ধরনের ফোন তৈরির প্রতিশ্রুতি কার্যত অসম্ভব।’
সূত্র: সিএনএন।
রাকিব