
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বৃহস্পতিবার এক টেলিভিশন ভাষণে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিজয়ের ঘোষণা দিয়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে "তীব্র চপেটাঘাত" দেওয়ার দাবি করেছেন। ইরান-ইসরায়েল ১২ দিনের যুদ্ধ শেষে যুদ্ধবিরতির পর এটিই ছিল তার প্রথম প্রকাশ্য বক্তব্য।
ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিও বার্তায় খামেনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়েছে, বিশ্বাস করেছিল হস্তক্ষেপ না করলে জায়নিস্ট শাসন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু এই যুদ্ধ থেকে তারা কিছুই পায়নি। ইসলামি প্রজাতন্ত্র বিজয়ী হয়েছে এবং প্রতিশোধ হিসেবে আমেরিকাকে তীব্র চপেটাঘাত দিয়েছে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি আবার কোনো আগ্রাসন ঘটে, শত্রুকে তার চড়া মূল্য দিতে হবে।”
এই বক্তব্য এসেছে এমন এক সময়, যখন রোববার যুক্তরাষ্ট্র তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় বাংকার-বাস্টার বোমা ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। এরপর সোমবার ইরান পাল্টা হামলা চালিয়ে কাতারে একটি মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
একই দিন, ইরানের গার্ডিয়ান কাউন্সিল একটি বিল অনুমোদন করে, যাতে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)-র সঙ্গে সবধরনের সহযোগিতা স্থগিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কাউন্সিলের মুখপাত্র হাদি তাহান নাজিফ বলেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক “শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার” প্রতিক্রিয়ায়।
৮৬ বছর বয়সী খামেনি যুদ্ধ শুরুর পর থেকে জনসম্মুখে দেখা দেননি। তিনি গোপন আশ্রয়ে ছিলেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, যুদ্ধবিরতির পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তিনি ইরানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করবেন। বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ আলোচনায় নেতৃত্ব দেবেন বলে জানিয়েছেন।
যুদ্ধের সময় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানে ‘শাসন পরিবর্তন’ ঘটানোর সম্ভাবনার কথা বললেও, তা না হওয়ায় ইরান নিজেকে বিজয়ী বলছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেছে। বুধবার পর্যন্ত “ইসরায়েলের ভাড়াটে” অভিযোগে ৭০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ইসরায়েলের হামলায় ইরানে ৬২৭ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে। আর ইরানের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছে ২৮ জন।
শনিবার নিহত শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের সম্মানে তেহরানে রাষ্ট্রীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
তবে, মার্কিন গোয়েন্দা ও সামরিক বিশ্লেষকদের মধ্যে হামলার প্রকৃত ফলাফল নিয়ে বিভক্ত মত রয়েছে। কিছু রিপোর্ট বলছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কেবল কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে গেছে। অন্যদিকে, ট্রাম্প দাবি করেছেন যে এই হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো “সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস” হয়েছে এবং “দশকের জন্য পিছিয়ে” গেছে।
তিনি বলেন, “ফোর্ডোর মতো গুরুত্বপূর্ণ সাইটও ধ্বংস হয়েছে, কেউ যদি এটি পুনর্গঠন করতে চায়, আমরা সেই প্রচেষ্টা ঠেকাতে আগের মতোই কঠোর হব।”
ইরান এখনো পরমাণু অস্ত্র তৈরি করার ইচ্ছা অস্বীকার করে আসছে এবং শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তির ব্যবহারকে “ন্যায্য অধিকার” বলে দাবি করছে। পাশাপাশি তারা ওয়াশিংটনের সঙ্গে পুনরায় আলোচনায় বসার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছে।
সূত্র: ফ্রান্স ২৪
মুমু