ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্রের মরদেহ মিলল পুকুরে

সাগর হোসেন, কুষ্টিয়া

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ১১ মে ২০২৫

এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্রের মরদেহ মিলল পুকুরে

ছ‌বি: জনকণ্ঠ

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে এক ছাত্রের আগুনে পোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার (১১ মে) সকাল ৬টার দিকে উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের সিংদাহ গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরের একটি ডোবা পুকুর থেকে মরদেহটি উদ্ধার করেন স্বজনরা। এরপর দুপুরে খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।

ওই ছাত্রের নাম শাহরিয়ার অন্নব রিউশা (১৭)। তিনি ওই গ্রামের সোহেল রানার ছেলে।

স্বজনদের দাবি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত রিউশা ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্তত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়। তবে একটিতেও ভর্তির সুযোগ না পাওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল সে। তাদের ভাষ্য, চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেও ভর্তির সুযোগ না পেয়ে সে শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

পুলিশ ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অত্যন্ত মেধাবী ও বিনয়ী ছাত্র রিউশা কুষ্টিয়া এডুকেয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০২৩ সালে এসএসসি পাস করে ঢাকা রামপুরা এলাকায় খালার বাড়িতে চলে যায়। সেখানে ঢাকা কলেজ থেকে ২০২৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত রিউশা ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পরীক্ষা দেয়। এরপর ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়। সর্বশেষ ২৭ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠানে সুযোগ না পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং একাকীত্ব জীবন কাটাচ্ছিল সে।

স্বজনরা জানায়, গত শুক্রবার সে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি আসে। সেখানেও মানসিক অস্থিরতায় ভুগছিল। শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে মা মুক্তা খাতুন তার বাবার বাড়িতে রিউশার জামাকাপড় আনতে যান। এরপর রাত সোয়া নয়টার পর থেকে রিউশাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সম্ভাব্য সব জায়গায় খুঁজেও তাকে পাওয়া যায়নি।

পরদিন রোববার সকাল ছয়টার দিকে বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরের একটি ডোবা পুকুরে পোড়া ও বিবস্ত্র অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করেন স্বজনরা।

রিউশার খালা, আইনজীবী রত্না খাতুন বলেন, “ও খুব মেধাবী, বিনয়ী ও ভদ্র ছেলে ছিল। চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়েও ভর্তি হতে পারেনি। খুব মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। আমরা ওকে সাহস দিতাম। তবুও শেষ রক্ষা হলো না।” তার মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে হয়তো সে শরীরে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

রিউশার মা মুক্তা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার বাবা কই রে... কেমনে থাকব আমি? আমার বাবার থুই কেমনে শোবো!” তিনি আরও বলেন, “রাতে বাবার বাড়িতে রিউশার জামাকাপড় আনতে গিয়েছিলাম। সোয়া ৯টার দিকে বাড়ি ফিরে দেখি ছেলে নেই। সারা রাত খুঁজেও পাইনি। সকালে দেখি পুকুরে বিবস্ত্র অবস্থায় পড়ে আছে, সারা শরীর পুড়া।”

রিউশার চাচা ইকবাল বিশ্বাস বলেন, “বাগানে থাকা পরিত্যক্ত টিনশেড ঘর এবং পুকুরপাড়ে আগুনের ছাই ও পোড়া প্যান্টের অংশবিশেষ পড়ে আছে। ধারণা করা হচ্ছে, গায়ে পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করেছে।”

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলায়মান হোসেন বলেন, “খবর পেয়ে আগুনে পোড়া এক ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পেরে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।”

এম.কে.

×