
ছবি: সংগৃহীত
১৯ বছর বয়সে আমার জীবন সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিল—আমি ছিলাম গৃহহীন ও নিঃস্ব। আমার ছোট ছেলে থাকত আমার নির্যাতনকারী মায়ের কাছে, আর আমি ছিলাম হেরোইনের আসক্ত। শৈশবটাও ছিল অসুস্থ ও অস্থিতিশীল, খুব অল্প বয়সেই বাবাকে হারিয়ে মায়ের তত্ত্বাবধানে বড় হই। ১৬ বছর বয়সে গৃহের সহিংসতা সহ্য করতে না পেরে সিডনিতে পালিয়ে আশ্রয় নিই। সময়টা ছিল ১৯৯৬ সাল।
তখন আমি যার সঙ্গে ড্রাগ নিতে পারতাম, তার সঙ্গেই বসবাস করতাম। এক সময় সেই সম্পর্কগুলোও ভেঙে যেত। একদিন এক ছেলেকে পাই, যাকে আগে ড্রাগ নেওয়ার সময় চিনেছিলাম। আমরা আত্মহত্যার পরিকল্পনা করি—কারণ আমাদের জীবনে তখন আর কোনো আশার আলো ছিল না। শেষ পর্যন্ত সেটা ঘটেনি—সে ভর্তি হয় আইসিইউতে, আর আমি মানসিক রোগীদের ওয়ার্ডে। তখন আমার যাওয়ার কোনো জায়গা ছিল না।
ঠিক তখনই জোয়ান নামের একজন নারী আমার জীবনে আসেন। তিনি ছিলেন এক বন্ধুর বন্ধু। আগেও একবার দেখা হয়েছিল। তিনি আমাকে দেখতে এলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন—“তুমি এখন কী করবে?” আমি বললাম—“আমি জানি না।” তখনই তিনি অবিশ্বাস্য কাজটি করলেন—তিনি বললেন, “এসো, আমার বাসায় থাকো। আমি তোমার যত্ন নেব এবং আমরা তোমাকে পুনর্বাসনে পাঠাব।”
আমি ছিলাম গৃহহীন ও আসক্ত, আর তিনি আমাকে বাসায় ডাকলেন। তিনি আমাকে তার বারান্দায় একটি ম্যাট্রেসে থাকতে দেন, আর প্রতিদিন শুকনো ফলে ভরা পোরিজ খাওয়ান। আমি চাইলে সবকিছু চুরি করে চলে যেতে পারতাম, কিন্তু করিনি। কারণ আমি বুঝেছিলাম—আমাকে এই জীবন থেকে বের হতে হবে এবং কেউ একজন যদি পথ দেখায়, আমি সে পথেই হাঁটব।
জোয়ান একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেন। সিডনির সব ডিটক্স ও আবাসিক পুনর্বাসন কেন্দ্রের তালিকা তৈরি করেন। কারণ তিনি জানতেন, আমি আমার ছেলেকে ফিরে পেতে চাই। তিনি এমন একটি কেন্দ্র খুঁজে পান, যেখানে সন্তান নিয়ে থাকা যায়। প্রথমে আমি একটি মেডিকেটেড ডিটক্স প্রোগ্রামে যাই—যেখানে একসঙ্গে হেরোইন ও মেথাডন ছাড়ানো হয়। এরপর আমি এক বছর মেয়াদি একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে থাকি, যেখানে সন্তান নিয়েই থাকা যায়।
সেই অভিজ্ঞতাই আমার জীবন বদলে দেয়। জীবনে প্রথমবার আমি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও গ্রহণযোগ্যতা পাই—যেভাবে জোয়ান আমাকে গ্রহণ করেছিলেন।
তিনি পুনর্বাসন কেন্দ্রে থেকে যাওয়ার সময় আমাকে দেখতে আসতেন, উৎসাহ দিতেন এবং পুরনো কিছু জামাকাপড় এনে দিতেন। পরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলি। অনেকবার ভেবেছি যদি তাঁকে জানাতে পারতাম, তিনি আমার জন্য কী করেছিলেন।
এরপর আমার জীবন বদলে যায়। আমি বহু বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। সেখানেই পরে শিক্ষকতা করার সুযোগ পাই। পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করি, একটি বই লিখি। অবশ্য, ট্রমায় বেড়ে ওঠা মানুষের জীবনে চ্যালেঞ্জ থাকেই।
তবু, আমার ছেলে এখন ৩০ বছরে পা দিয়েছে। সে আমার সঙ্গেই থাকে। আমাদের সম্পর্ক, একজন পিতা ও সন্তানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অনন্য উদাহরণ। মানসিক ওয়ার্ডে বসে তখন আমি কখনও ভাবিনি, এমন কিছু সম্ভব।
জোয়ান শুধু আমার জীবন নয়, আমার ছেলের জীবনও বাঁচিয়েছেন। জোয়ানের আগে আমি সমাজে অদৃশ্য ছিলাম—যেমনটা সাধারণত গৃহহীনদের হয়। তিনি আমার আসক্তি দেখেননি, দেখেছিলেন এক আহত মানুষকে। তিনি যা করেছিলেন, ছিল নিখুঁত। তিনি আমাকে নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছিলেন, ভবিষ্যতের জন্য আশা খুঁজে পেতে সাহায্য করেছিলেন।
আমি এখন প্রায় ৫০। গত ৩০ বছর ধরে জোয়ানের মতো একজন সহানুভূতিশীল মানুষ হওয়ার চেষ্টাই করে গেছি।
এখনও যখন মন খারাপ হয়, আমি নিজের জন্য পোরিজ তৈরি করি। শুকনো ফল কেটে জোয়ানের মতোই যত্ন করে বাটিতে রাখি—এটাই আমার নিরাপদ আশ্রয়।
শহীদ