ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

নির্জন চরে শিক্ষা

-

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ১২ মে ২০২৫

নির্জন চরে শিক্ষা

সম্পাদকীয়

আলোকিত হচ্ছে অবহেলিত শিশুরা। নির্জন পদ্মার চরে গড়ে উঠেছে শিক্ষার বাতিঘর। এমন একটি মন ভালো করা প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন জনকণ্ঠের ফরিদপুর প্রতিনিধি। অশিক্ষা, কুশিক্ষা আর শিক্ষাবঞ্চনার এই দেশে শিক্ষার প্রসার ও বিস্তারের নতুন উদ্যোগের খবর পাওয়া গেলে সচেতন দেশবাসী আনন্দিত হন। প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ফরিদপুরের সদরপুরে নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নটি দুর্গম পদ্মার চরে। পিছিয়ে পড়া এ জনপদে মাধ্যমিক বিদ্যালয় কোনোদিন চোখে দেখেনি কেউ।

শিক্ষার বাতিঘর হিসেবে এখানেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এতে এ অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থা ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা ইউনিয়নবাসীর। সদরপুর উপজেলায় রয়েছে ৯টি ইউনিয়ন। এর মধ্যে নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নটি পদ্মা নদীর মাঝে জেগে ওঠা চরে। এ চরে ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও এখানকার অধিবাসীরা আজ পর্যন্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় কী তা জানে না। আশপাশের চরনাছিরপুর, চরমানাইর তিন চরেও নেই মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

ফলে, প্রাথমিকের পর্ব শেষ করে আর এগোতে পারে না চরবাসীর শিক্ষার্থীরা। চরে হাওলাদারকান্দি গ্রামে প্রতিষ্ঠিত সদরপুর উপজেলা প্রশাসন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি হয়ে উঠবে শিক্ষার বাতিঘর- এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয় বাসিন্দাদের।
চরাঞ্চলে শিক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ চলে আসছে নব্বই দশক থেকে। সরকার এবং আন্তর্জাতিক সহায়তায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিছু শুভ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে বাস্তবতা কঠিন। ফসল কাটার সময় চরাঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অঘোষিত বন্ধ থাকে। কারণ, সারাবছরের একটি ফসল ভালোভাবে তুলতে না পারলে খাদ্যনিরাপত্তার হুমকিতে পড়বে ওই এলাকার কৃষক।

তাই শিশুরা ফসল তোলার সময় শ্রমিকের কাজ করে। এছাড়াও যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক সংকট প্রকট। জীবিকার অনিশ্চয়তায় চরের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে মাধ্যমিক শিক্ষা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাই চরাঞ্চলে শিক্ষার প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে সরকারকেই।
দেশের চরাঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে  ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদান কার্যক্রমে কিছুটা তারতম্য দেখা যায়। কেননা, সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর বিধান থাকলেও বেলা ১টার পর এসব বিদ্যালয় খোলা পাওয়া যায় না। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝেও অবহেলার বহির্প্রকাশ দেখা যায়। ফলে, পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া সত্ত্বেও কোনো কোনো ছাত্রছাত্রী বাংলা পর্যন্ত পড়তে পারে না।

পরীক্ষার ফি, উপবৃত্তির টাকা ইত্যাদি নিয়ে চলে পাঁয়তারা। এসব কাটিয়ে ওঠার জন্য সততা ও নিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। যারা নিজেদের নাম লিখতে জানেন না, তারাও কিছু কিছু বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সদস্য হয়ে যান। এই অপসংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসা চাই।
বলা দরকার, ফসল উৎপাদনের সুযোগ কম থাকা, দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা, সরকারি সব ধরনের মৌলিক সেবার অপর্যাপ্ততা, কর্মসংস্থানের স্বল্পতা, পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড না থাকা, খাদ্যাভাব, নদী ভাঙনসহ দুর্যোগপ্রবণ হওয়ার কারণে চরে বসবাসরত মানুষকে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়। তাই চরাঞ্চলে শিক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ অনেক স্বপ্ন ও চ্যালেঞ্জের। এসব সুন্দর উদ্যোগের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে বিত্তবানদেরও।

×