
টি২০ বিশ্বকাপ জয়ের পর একসঙ্গে অবসর নিয়েছিলেন বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা
রোহিত শর্মা টেস্ট ছাড়ছেন- বেশ কিছুদিন ধরেই গুঞ্জনটা চলছিল। এমনিতে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ফর্মে ছিলেন না ভারত অধিনায়ক। ফলে তার বিদায় ঘিরে এতটা আলোচনা হয়নি যতটা হলো বিরাট কোহলির বেলায়। শচীন টেন্ডুলকর থেকে ব্রায়ান লারা, খোদ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধেও নাকি সিদ্ধান্তটা বদলায়নি। আগামী মাসে গুরুত্বপূর্ণ ইংল্যান্ড সফরের দিকে তাকিয়ে ইন্ডিয়ান বোর্ডও (বিসিসিআই) তাকে ফেরানোর চেষ্টা করেছিল।
হাজারও অনুরোধ উপেক্ষা করে সাদা পোশাকের ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন ৩৬ বছর বয়সী সুপারস্টার। শুধু সুপারস্টার নয়, কিংবদন্তিও। টেস্টে ৫১টি সেঞ্চুরি, ওয়ানডেতে ৩০, টি২০তে ১- আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় ২৮ হাজার রান, আরও অনেক অনেক রেকর্ড তার নামের পাশে। প্রায় দুই দশকের ক্যারিয়ারে কত সাফল্য, কত অর্জন। একসঙ্গে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যানের অভাব ভারত কিভাবে পূরণ করবে, উঠছে সেই প্রশ্নও।
‘টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাগি ব্লু (ক্যাপ) মাথায় চাপানোর পর পেরিয়ে গেছে ১৪ বছর। সত্যি বলতে, কখনও কল্পনাও করতে পারিনি, এই সংস্করণ এমন পথচলায় আমাকে এগিয়ে নেবে। এটা আমার পরীক্ষা নিয়েছে, আমাকে গড়ে দিয়েছে এবং শিক্ষা দিয়েছে, যা আমি বয়ে নেব আজীবন। সাদা পোশাকে খেলার ব্যাপারটি ছিল আমার হৃদয়ের একান্তই কাছাকাছি।
নিঃশব্দে নিজেকে ভেঙে গড়া, দীর্ঘ দিনগুলো এবং ছোট ছোট মুহূর্ত, যা কখনও কেউ দেখে না, কিন্তু নিজের সঙ্গে রয়ে যায় চিরদিন।’ সোমবার সামাজিক মাধ্যমে বিদায়ী বার্তায় জানান কোহলি। উল্লেখ করেন,‘এই সংস্করণ থেকে আমার এই সরে যাওয়া, এটা সহজ নয়, তবে মনে হচ্ছে সঠিক। এখানে আমার সবটুকু উজাড় করে দিয়েছি আমি এবং এটা আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে আমার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি কিছু।
কৃতজ্ঞতায় ভরা হৃদয় দিয়ে সরে যাচ্ছি আমি- খেলাটির প্রতি, মাঠে যাদের সঙ্গে নেমেছি তাদের প্রতি এবং প্রতিটি মানুষের জন্য, এই পথচলায় যারা আমাকে স্বীকৃতির অনুভূতি দিয়েছে।’ গত বছর টি২০ বিশ্বকাপের পর রোহিতের সঙ্গে ছোট্ট ফরম্যাটের ক্রিকেটকে বিদায় জানানো কোহলিকে এখন কেবল ওয়ানডেতে দেখা যাবে। যে সংস্করণে তার রেকর্ড সবচেয়ে সমৃদ্ধ।
২০১১ সালের জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট অভিষেক। ২০১৯ সালে পুনেতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৫৪ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটি খেলার সময় তার টেস্ট ব্যাটিং গড় ছিল ৫৫.১০। পরে ক্রমেই তা নেমে আসে। শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ার শেষ করলেন তিনি ৪৬.৮৫ গড় নিয়ে। সব মিলিয়ে ১২৩ টেস্টে ৩০ সেঞ্চুরি আর ৩১ ফিফটি তার রান ৯২৩০। ৮৪ টেস্ট খেলে সেঞ্চুরি ছিল ২৭টি। শেষ ৩৯ টেস্টে সেঞ্চুরি মোটে তিনটি। এই সময়ে ব্যাটিং গড় ৩০.৭২। তাই হয়ত শেষের ডাক শুনতে পাচ্ছিলেন।
তার অধিনায়কত্বে ৬৮ টেস্টের ৪০টিই জিতেছে ভারত, হেরেছে কেবল ১৭টিতে। সৌরভ গাঙ্গুলি (৪৯ টেস্টে ২১ জয়) ও ধোনিকে (৬০ টেস্টে ২৭ জয়) ছাপিয়ে ভারতের ইতিহাসের সফলতম টেস্ট অধিনায়ক তিনিই। টেস্ট ইতিহাসেই অধিনায়ক কোহলির চেয়ে এগিয়ে কেবল দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম স্মিথ (১০৯ টেস্টে ৫৩ জয়), অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং (৭৭ টেস্টে ৪৮ জয়) ও স্টিভ ওয়াহ (৫৭ টেস্টে ৪১ জয়)।