
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান সমাজে প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারে শিশুদের মধ্যে দিন দিন সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, আত্মকেন্দ্রিকতা ও বিষণ্ণতার প্রবণতা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুর মানসিক বিকাশ ও সামাজিক দক্ষতা গঠনের পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পরিবার। তাই শিশুর আত্মবিশ্বাস, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মেলামেশা ও ইতিবাচক আচরণ গঠনে বাবা-মাকে হতে হবে সচেতন ও সহনশীল।
শিশুর সামাজিক দক্ষতা বাড়াতে যা করবেন
১. সংলাপভিত্তিক সময় কাটানো: শিশুর সঙ্গে প্রতিদিন কিছু সময় কথা বলুন—সে কী ভাবছে, স্কুলে কী হলো, কোনো বন্ধু কষ্ট দিয়েছে কিনা—এসব বিষয়ে আগ্রহ দেখান। এতে শিশুর মনের দুয়ার খুলে যাবে।
২. খেলাধুলা ও দলগত কার্যক্রমে উৎসাহ: শিশুকে খেলাধুলা, দলগত খেলা বা নাট্যচর্চার মতো সামাজিক কার্যক্রমে অংশ নিতে উৎসাহ দিন। এতে সে দলগত কাজ, দায়িত্ববোধ ও পারস্পরিক সহমর্মিতা শিখবে।
৩. ভদ্রতা ও শিষ্টাচার শেখানো: ছোটবেলা থেকেই “ধন্যবাদ”, “দয়া করে”, “সরি”—এই শব্দগুলোর ব্যবহার শেখান। এতে শিশুর মধ্যে নম্রতা ও সামাজিক সৌজন্যবোধ গড়ে উঠবে।
৪. সুযোগ দিন নিজেকে প্রকাশ করার: শিশুকে শুধু আদেশ-নির্দেশ না দিয়ে তার মতামতের মূল্য দিন। তাতে সে নিজের ভাবনা ব্যক্ত করতে শিখবে, যা ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আত্মবিশ্বাস গঠনে সাহায্য করবে।
বিষণ্ণতা দূর করতে সন্তানের প্রতি করণীয়
১. শোনার মানুষ হোন: শিশুর মন খারাপ থাকলে তাকে বকাবকি না করে বরং তার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করুন। অনুভব করুন—তার দুঃখকে ছোট করে দেখা নয়, বরং তাকে বোঝার চেষ্টাই সবচেয়ে বেশি জরুরি।
২. প্রশংসা করুন সাফল্যের চেয়ে প্রচেষ্টাকে: সবসময় ফলাফল নয়, চেষ্টাকে মূল্যায়ন করলে শিশু ব্যর্থতার ভয় থেকে মুক্ত থাকে। এতে আত্মসম্মানবোধ তৈরি হয়।
৩. ডিভাইসের নির্ভরতা কমান: টিভি, মোবাইল বা ট্যাবের বদলে বাস্তবিক খেলা ও আড্ডার পরিবেশ দিন। ডিজিটাল নির্ভরতা শিশুকে আরও বিচ্ছিন্ন করে তোলে।
৪. পর্যাপ্ত ঘুম ও স্বাস্থ্যকর খাবার: শিশুর বিষণ্ণতা প্রতিরোধে প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম, সুষম আহার ও রুটিন মেনে চলা।
৫. প্রয়োজনে পেশাদার সহায়তা নিন: দীর্ঘ সময় ধরে শিশু নিরব, আগ্রহহীন বা withdrawn হলে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে দেরি করবেন না।
শিশুর সামাজিক ও মানসিক বিকাশ কোনো একদিনে ঘটে না। এটি ধৈর্য, ভালোবাসা, এবং সময়ের ব্যাপার। বাবা-মায়ের আন্তরিক মনোযোগ, নিয়মিত যোগাযোগ এবং ইতিবাচক পরিবেশই পারে শিশুকে একজন আত্মবিশ্বাসী, সামাজিক ও মানসিকভাবে সুস্থ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে।
এসএফ