ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

অদ্ভুত শর্ত যুক্তরাষ্ট্রের, কিনলেও ব্যবহার করা যাবে না যুদ্ধবিমান!

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ১৩ মে ২০২৫

অদ্ভুত শর্ত যুক্তরাষ্ট্রের, কিনলেও ব্যবহার করা যাবে না যুদ্ধবিমান!

ছবি: প্রতীকী

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি যুদ্ধবিমান বিশ্বজুড়ে পরিচিত তাদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, উচ্চ ক্ষমতা ও কার্যকর অস্ত্রসজ্জার কারণে। মার্কিন বিমান পাওয়া অনেক দেশের কাছেই সামরিক মর্যাদা ও নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। তবে এসব যুদ্ধবিমান কেনার আড়ালে থাকে এমন কিছু রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক শর্ত, যা অনেক সময়ই ক্রেতা দেশের সামরিক স্বাধীনতার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনো যুদ্ধবিমান কিনলে শুধু একটি অস্ত্রসজ্জিত প্রযুক্তি নয়, সাথে আসে জটিল চুক্তিপত্র, বিধিনিষেধ এবং একগুচ্ছ নিয়মকানুন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো ‘এন্ড ইউজার এগ্রিমেন্ট’ (EUA)। এই চুক্তি অনুযায়ী বিমানটি কোথায়, কাদের বিরুদ্ধে, কীভাবে ব্যবহার করা যাবে তা নির্ধারণ করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র নিজেই। ফলে বিমানটি কাগজে-কলমে ক্রেতা দেশের হলেও, ব্যবহারিক নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশেই থাকে ওয়াশিংটনের হাতে।

১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধে পাকিস্তান তাদের এফ-১৬ বিমান ব্যবহার করতে চাইলেও EUA এর বিধিনিষেধের কারণে তা সম্ভব হয়নি।

এরপর আসে আরেকটি শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক কাঠামোইন্টারন্যাশনাল ট্রাফিক ইন আর্মস রেগুলেশনস (ITAR)। এই বিধি অনুযায়ী মার্কিন যুদ্ধবিমান, তার যন্ত্রাংশ, সফটওয়্যার এবং এমনকি প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য পরিষেবা ব্যবহার করতেও যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি নিতে হয়। ফলে কোনো দেশ স্বাধীনভাবে মেরামত বা উন্নয়ন কাজ চালাতে পারে না। এমনকি যুক্তরাজ্যের মতো ঘনিষ্ঠ মিত্রও এ বিধির বাইরে নয়, ২০১০ সালে আইটিএআর লঙ্ঘনের দায়ে বিএই সিস্টেমসকে গুণতে হয়েছিল ৪০০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা।

এই বাস্তবতা অনেক দেশকে বাধ্য করেছে বিকল্প ভাবতে। ফ্রান্সের রাফাল, সুইডেনের গ্রিপেন, রাশিয়ার এসইউ-৩৫ বা চীনের জেএফ-১৭ এর মতো বিকল্প যুদ্ধবিমানগুলোর চাহিদা বেড়ে গেছে, বিশেষ করে তুলনামূলক স্বাধীনতার সুযোগ থাকায়। তবে এসব বিমানের সাথেও রয়েছে আলাদা রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক সমীকরণ।

তুরস্ক এই নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করছে। তারা নিজস্ব প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করে স্থানীয়ভাবে যুদ্ধবিমান তৈরি করছেএটা বুঝেই যে যুদ্ধবিমান মানেই শুধু প্রযুক্তি নয়, এটা এক ধরনের রাজনৈতিক বন্ধনও বটে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুদ্ধবিমান কেনা মানে কেবল আকাশে যুদ্ধের সক্ষমতা অর্জন নয়, বরং ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক ছায়ার নিচে নিজেকে সমর্পণ করা। কারণ এই বিমানগুলোর সাথে আসে যেন কিছু ‘অদৃশ্য ডানা’, যেগুলো প্রয়োজনে বিমানকে আকাশে নয়, বরং মাটিতে আটকে রাখে।

 

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=OvQfi_7nypY

রাকিব

×