ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান কিনে ফেঁসে গেছে যেসব দেশ

প্রকাশিত: ০৭:১০, ১৩ মে ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান কিনে ফেঁসে গেছে যেসব দেশ

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি যুদ্ধবিমান আধুনিক প্রযুক্তি, দুর্ধর্ষ অস্ত্রসজ্জা ও কৌশলগত সক্ষমতার কারণে বিশ্বজুড়ে বহুল সমাদৃত। কিন্তু এসব যুদ্ধবিমান কেনার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে এমন কিছু কঠোর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক শর্ত, যা অনেক সময়ই যুদ্ধবিমান-ক্রেতা দেশগুলোর জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে যুদ্ধবিমান কিনলে শুধু প্রযুক্তি নয়, সাথে আসে ‘এন্ড ইউজার এগ্রিমেন্ট (EUA)’ নামের চুক্তি, যা স্পষ্ট করে দেয় বিমান কোথায়, কাদের বিরুদ্ধে, কীভাবে ব্যবহার করা যাবে। তাই বিমানটি ক্রেতা দেশের হলেও তার ব্যবহার অনেকটাই নির্ভর করে ওয়াশিংটনের অনুমতির উপর। ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধে পাকিস্তান এফ-১৬ ব্যবহার করতে চাইলেও EUA শর্তে তা বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর যুক্ত হয় আরও জটিল কাঠামো, ইন্টারন্যাশনাল ট্রাফিক ইন আর্মস রেগুলেশনস (ITAR)। এর আওতায় যুদ্ধবিমান, যন্ত্রাংশ, সফটওয়্যার, এমনকি প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাও নিয়ন্ত্রিত হয়। এর ফলে ক্রেতা দেশ যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া মেরামত বা উন্নয়ন কাজ করতে পারে না। ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যের বিএই সিস্টেমসকে ITAR লঙ্ঘনের কারণে দিতে হয় ৪০০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে যুদ্ধবিমান কিনে যেসব দেশ ফেঁসে গেছে

ইরান

১৯৭০-এর দশকে এফ-১৪ টমক্যাট বিমান কেনে। কিন্তু ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর যুক্তরাষ্ট্র সব যন্ত্রাংশ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়বিমানগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়ে।

ভেনেজুয়েলা

১৯৮০-এর দশকে এফ-১৬ কেনে। হুগো শাভেজের আমেরিকাবিরোধী অবস্থানের পর যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তিগত সহায়তা বন্ধ করে দেয়।

ইন্দোনেশিয়া

পূর্ব তিমুরে গণহত্যার অভিযোগে ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওপর সামরিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, ফলে কেনা এফ-৫ বিমানগুলো অকেজো হয়ে পড়ে।

এমনকি এসব বিমান অন্য কোনো দেশে হস্তান্তরও করা যায় নাচুক্তির শর্ত অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া।

তুরস্ক এই নির্ভরতা কাটাতে নিজস্ব প্রযুক্তিতে যুদ্ধবিমান তৈরিতে জোর দিয়েছে। কারণ তারা বুঝে গেছে, যুদ্ধবিমান মানেই শুধু প্রযুক্তি নয়এটি একধরনের রাজনৈতিক বন্ধনও বটে। এই বাস্তবতা অনেক দেশকে বাধ্য করেছে বিকল্প ভাবতে।

ফ্রান্সের রাফাল, সুইডেনের গ্রিপেন, রাশিয়ার এসইউ-৩৫ বা চীনের জেএফ-১৭ এর মতো বিকল্প যুদ্ধবিমানগুলোর চাহিদা বেড়ে গেছে, বিশেষ করে তুলনামূলক স্বাধীনতার সুযোগ থাকায়। তবে এসব বিমানের সাথেও রয়েছে আলাদা রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক সমীকরণ।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুদ্ধবিমান কেনা মানে কেবল আকাশে যুদ্ধের সক্ষমতা অর্জন নয়, বরং ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক ছায়ার নিচে নিজেকে সমর্পণ করা। কারণ এই বিমানগুলোর সাথে আসে যেন কিছু ‘অদৃশ্য ডানা’, যেগুলো প্রয়োজনে বিমানকে আকাশে নয়, বরং মাটিতে আটকে রাখে।

 

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=OvQfi_7nypY

রাকিব

×