
ছবি আলজাজিরা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক অভিযান ‘শুধু সাময়িকভাবে থামানো হয়েছে’, যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি। ভারতের অভ্যন্তরে পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর গত সপ্তাহের তীব্র সামরিক সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে দুই পারমাণবিক প্রতিবেশীর মধ্যে একটি নাজুক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, মোদির ভাষণে ফের উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে মোদি বলেন, সন্ত্রাসবাদের পেছনে কে আছে, সেটা আমরা আলাদা করে দেখি না—সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হোক বা সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়া সরকার, তাদের প্রতি আমাদের অবস্থান একই। ভারতের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে যদি আবার কোনো সন্ত্রাসী হামলা হয়, তার জবাব আমরা নিজেদের শর্তেই দেব।
গত ৬ মে ভারতের সেনাবাহিনী পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যেগুলোকে ভারতীয় বাহিনী ‘সন্ত্রাসবাদী অবকাঠামো’ বলে দাবি করে। তবে ইসলামাবাদ এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে।
মোদি বলেন, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার বদলে ভারত আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছে। আমরা পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল বরদাস্ত করবো না। এটা যুদ্ধের সময় নয়, কিন্তু সন্ত্রাসবাদের যুগও নয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা পাকিস্তানের প্রতিটি পদক্ষেপ নজরদারি করব।
জল ও রক্ত একসঙ্গে বইতে পারে না
ইন্দাস পানি চুক্তি প্রসঙ্গে মোদি বলেন, সন্ত্রাস ও বাণিজ্য একসাথে চলতে পারে না, জল ও রক্ত একসাথে বইতে পারে না।উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত এই চুক্তির আওতায় পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের নদীর পানির ওপর নির্ভর করে এসেছে। তবে সম্প্রতি ভারত পাকিস্তানের দিকে পানি প্রবাহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা এক কূটনৈতিক মোড় বদলের ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভারতের এই একতরফা পদক্ষেপ ফিরিয়ে নেওয়া উচিত।
যুদ্ধবিরতি, তবে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে
সোমবার সন্ধ্যায় ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি পর্যালোচনায় বসার কথা ছিল। আলোচনায় মূলত সীমান্তে উত্তেজনা এড়াতে কারিগরি দিকগুলো নিয়ে মতবিনিময় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে একটি সামান্য ভুল পদক্ষেপও পারমাণবিক বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
উভয় পক্ষের ‘জয়’-এর দাবি
ভারত ও পাকিস্তান উভয় পক্ষই নিজ নিজ সামরিক অভিযানকে সাফল্য বলে দাবি করেছে। পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, আমরা যুদ্ধে কৌশলগত সাফল্য অর্জন করেছি।” অপরদিকে, ভারতের লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘোষ বলেন, “ভারত অতি সংযম দেখিয়েছে, কিন্তু কোনো হুমকি এলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
সাম্প্রতিক সংঘর্ষের জেরে পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করে তাঁর প্রশাসন একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক সংঘাত ঠেকিয়েছে।
এদিকে ভারতের অভিযোগ, ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পাহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলায় পাকিস্তান-সমর্থিত গোষ্ঠী জড়িত ছিল, যেখানে ২৬ জন নিহত হন। পাকিস্তান অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
যদিও সাময়িক শান্তি ফিরে এসেছে, তবুও ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা এখনও বিদ্যমান এবং আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগের সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
এসএফ