
যেদিন প্রথম পৃথিবীর আলো দেখি, সেদিন থেকেই আমার চারপাশে একটি অদৃশ্য অথচ গভীর সুরক্ষার দেয়াল তৈরি হয়েছিল তা ছিল মায়ের ভালোবাসা। মা শুধু একজন মানুষ নন, তিনি এক অনুভব, এক আশ্রয়, এক নীরব ত্যাগের নাম। একজন মায়ের ভালোবাসা তুলনাহীন। মায়েরা নিজের সুখ-দুঃখ, চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে ওঠে সন্তানের জন্য রাত জেগে অপেক্ষা করেন, অভুক্ত থাকেন, ভয়ানক দুশ্চিন্তায় দিন কাটান। অথচ বিনিময়ে চেয়ে নেন না কিছুই। শুধু সন্তানের মুখে একটুখানি হাসিই তার জীবনের সব চেয়ে বড় প্রাপ্তি হয়ে ওঠে। গতকাল ছিল বিশ্ব মা দিবস। তাই তো বারবার মনে হয় প্রতিদিনই হোক ‘মা দিবস’।
দার্শনিক ও মনীষীরাও মায়ের ভূমিকা অনুধাবন করে অসংখ্য মূল্যবান কথা বলেছেন। যেমন-
‘ঈশ্বর সর্বত্র থাকতে পারেন না বলেই মা সৃষ্টি করেছেন।’ -রুডইয়ার্ড কিপলিং
‘মায়ের প্রার্থনার চেয়ে শক্তিশালী কিছু নেই।’ -পোপ জন পল
‘আমার সাফল্যের সব কৃতিত্ব আমি আমার মাকে দিতে চাই।’ -জর্জ ওয়াশিংটন।
মায়ের দায়িত্ব শুধু সন্তান জন্মদানে সীমাবদ্ধ নয়। একজন মা সন্তানকে ধীরে ধীরে মানুষ করে তোলেন। তিনি প্রথম শিক্ষক, প্রথম বন্ধু, প্রথম অনুপ্রেরণা। সংসারের প্রতিটি কাজের মাঝে এক অনন্য দক্ষতায় সামলান সন্তান, পরিবার এবং স্বপ্নের ভার। মা মানে পরম নিশ্চয়তা একটি মুখ, যার হাসিতে ভরসা পাই, এক জোড়া চোখ, যেখানে নিজের ব্যথা খুঁজে পাওয়া যায়। মায়ের উপস্থিতি মানেই এক নিঃশব্দ প্রশান্তি, একটি নরম আলিঙ্গন, যা সমস্ত ক্লান্তি দূর করে। তবু আমরা অনেক সময় মাকে ভালোবাসার কথা বলতে ভুলে যাই। ভাবি, মা তো জানেনই! অথচ মাকে বলার সুযোগ সবসময় থাকে না। আজ এই লেখার মাধ্যমে আমি বলতে চাই-
মা, ও মা! তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি।
তোমার হাতের আদর, চোখের করুণা, কণ্ঠের স্নেহ সবকিছুই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ। শেষে বলি, ‘মা হচ্ছে সেই মানুষ, যিনি নিজে অন্ধকারে থেকে আমাদের জন্য আলো জ্বালিয়ে দেন।’
মা এমন এক সত্তা যাকে সংজ্ঞায়িত করা যায় না কোনো অভিধানে, তার পরিচয় মেলে না কোনো ছকে।
তিনি যেন এক সমুদ্র- যার গভীরতা মাপার সাধ্য কারও নেই, এক আকাশ যার প্রান্ত খুঁজে পায় না চোখ।
মা হচ্ছেন সেই শব্দ, যার উচ্চারণে হৃদয় ভিজে যায় নরম মমতায়।
তিনি কোনো একটি সম্পর্ক নন-তিনি সম্পর্কের আদি ও অন্ত।
মায়ের কোলে ঘুম আসে সহজে, তার কণ্ঠে লুকিয়ে থাকে ঘুমপাড়ানির সবচেয়ে সুরেলা গান।
তার ছোঁয়ায় দগ্ধ হৃদয় শান্ত হয়, তার চোখে সন্তানের কষ্টই সবচেয়ে বড় বেদনা।
মা নিজেকে ভুলে যান প্রতিনিয়ত- কখনো ভাঙা চুড়ির শব্দে, কখনো নিঃশব্দ দীর্ঘশ্বাসে।
তবু মুখে হাসি লেগেই থাকে এই পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র মুখাবয়বে।
তাই প্রতিটি সন্তানের কর্তব্য মায়ের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা, শুধু একটি দিনে নয়, প্রতিটি নিঃশ্বাসে।
প্যানেল