
সম্পাদকীয়
এবার লঞ্চে দুই তরুণীর লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত শুক্রবার অপরাহ্নে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে এমভি ক্যাপ্টেন নামের একটি লঞ্চ ছেড়ে যায়। রাত ৮টার দিকে মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে থামে নৌযানটি। স্থানীয় লোকজন লঞ্চের ভিতরে গিয়ে তল্লাশি চালান।
এক পর্যায়ে তারা নৌযানটিতে ভাঙচুর এবং কয়েকজনকে মারধর করে। ধারণকৃত একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায় যে লঞ্চের সামনের দিকে দুই তরুণীকে বেল্ট দিয়ে পেটাচ্ছেন এক তরুণ। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন মুঠোফোনে সেই দৃশ্য ধারণসহ উল্লাস করছেন। অনেকে সেøাগানও দিচ্ছিলেন।
ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হলে শনিবার দুপুরে পুলিশ মারধরকারী তরুণকে আটক করে। তার নাম নেহাল আহমেদ (জিহাদ)। পুলিশ হেফাজতে নেহাল সাংবাদিকদের ‘আমার ভুল হয়েছে’ বলে স্বীকার করেন।
সাম্প্রতিককালে নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি বিদ্বেষ ও সহিংসতা বেড়েছে বহুলাংশে। পথেঘাটে নারীরা এখন এমনকি দিনের বেলায়ও চলতে-ফিরতে ভোগেন নিরাপত্তাহীনতায়। রাস্তাঘাট, ঘরে নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতন, নিপীড়ন ও হেনস্তার ঘটনা ঘটছে প্রায় প্রতিদিনই। সেসব স্থানও পাচ্ছে গণমাধ্যমে। এসবই নারীর মনে এবং ভুক্তভোগী পরিবারগুলোতে ভয় ও শঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে।
৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীকে ওড়না না পরায় হেনস্তা করা হয়। ঐ নারী কর্তৃক অভিযুক্ত করা হয় ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের এক সহকারী বাইন্ডারকে। মেয়েটি মামলা করায় উক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারও করা হয়। তবে অনতিপরেই অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে এবং নারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে তৎপর হয়ে ওঠে একটি গোষ্ঠী। এটি অবশ্যই নিন্দনীয় ও দুঃখজনক।
এর আগে চলন্ত বাসে নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণ, দুটি এলাকায় নারী ফুটবল দলের খেলা বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। তারও আগে নরসিংদী রেলস্টেশনে এক তরুণীর তথাকথিত আপত্তিকর পোশাক পরার অভিযোগে লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটেছে । এর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে নারী-শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। নারীদের ওপর সাইবার হামলার ঘটনাও কম নয়।
জুলাই-আগস্টের পটপরিবর্তনের পর গত কয়েক মাসে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নারী সংগঠন এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে ব্যাপক ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে। ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে বিভিন্ন সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে গণপদযাত্রা, বিক্ষোভ মিছিল, মশাল মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন অব্যাহত থাকার মধ্যেও প্রায় প্রতিদিন ঘটছে নতুন নতুন ঘটনা।
এসবেই অত্যন্ত দুঃখজনক ও পীড়াদায়ক। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তি ও দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা আবশ্যক। নারীর জন্য সমাজে স্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা চাই।
সাম্প্রতিককালে নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতন-নিপীড়ন ও বিদ্বেষের কিছু ঘটনা জনমনে গভীর শঙ্কা জাগিয়েছে। এসবই জুলাই-আগস্টের সফল গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী চেতনা ও ছাত্র-জনতার আশা-আকাক্সক্ষার পরিপন্থি। অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে নারী অধিকার ও উন্নয়নে কিছু সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। নারী নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে নিয়েছে কঠোর অবস্থান।
সে অবস্থায় সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নারী ও কন্যা শিশুর সার্বিক নিরাপত্তা বিধানকল্পে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে একান্ত প্রত্যাশা। তা না হলে জনজীবনে শঙ্কা বেড়েই চলবে।