
ছবি :সংগৃহীত
১২ মে ১৮৬৩ সালে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা ছাপাখানার পথিকৃৎ উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী । তিনি ছিলেন বিখ্যাত বাঙালি শিশুসাহিত্যিক, চিত্রকর, সুরকার ও শখের জ্যোতির্বিদ । তিনি জনপ্রিয় ‘সন্দেশ’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা, যা পরে তার পুত্র সুকুমার রায় এবং পৌত্র সত্যজিৎ রায় সম্পাদনা করেন। তার লেখা গুপি গাইন বাঘা বাইন, টুনটুনির বই সহ অসংখ্য রচনা বাংলা শিশুসাহিত্যে অমর হয়ে আছে।
মাত্র একুশ বছর বয়সে বিএ পাশ করার পর ছবি আঁকা শেখা শুরু করেন উপেন্দ্রকিশোর। ব্রাহ্ম সমাজে যোগদানের কারণে সে সময় তার অনেক আত্মীয়ের সঙ্গে মতবিরোধও তৈরি হয়। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি শিশুদের জন্য লেখা শুরু করেন। তার প্রথম লেখাগুলো প্রকাশিত হয় সখা, সাথী, মুকুল ও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত বালক পত্রিকায়। শুরুতে তিনি জীববিজ্ঞানভিত্তিক প্রবন্ধ লিখলেও পরে গল্পে চিত্র অলঙ্করণ যুক্ত করেন।
১৮৮৬ সালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি বিয়ে করেন ব্রাহ্ম সমাজের বিশিষ্ট সমাজসংস্কারক দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের কন্যা বিধুমুখীকে। তারা কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের একটি ভাড়া বাড়িতে সংসার জীবন শুরু করেন। তাদের ছয় সন্তান—তিন ছেলে: সুকুমার, সুবিনয় ও সুবিমল; এবং তিন মেয়ে: সুখলতা, পুণ্যলতা ও শান্তিলতা—প্রত্যেকেই শিশুসাহিত্যে কোনো না কোনোভাবে অবদান রেখেছেন।
তার প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ছিল ছেলেদের রামায়ণ, যা প্রকাশিত হয় যোগীন্দ্রনাথ সরকারের সিটি বুক সোসাইটি থেকে। বইটি পাঠকমহলে প্রশংসিত হলেও মুদ্রণের মানে অসন্তুষ্ট হয়ে উপেন্দ্রকিশোর ১৮৮৫ সালে বিদেশ থেকে আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র আমদানি করেন। এরপর তিনি শিবনারায়ণ দাস লেনে ইউ. রায় অ্যান্ড সন্স নামে ছাপাখানা স্থাপন করেন, যেখানে তিনি হাফটোন ব্লক প্রিন্টিং নিয়ে গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান।
১৯১১ সালে তিনি তার পুত্র সুকুমার রায়কে বিলেতে পাঠান ফটোগ্রাফি ও মুদ্রণ বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে। উপেন্দ্রকিশোর শুধু একজন সৃজনশীল লেখক ছিলেন না, তিনি ছাপাখানার গুণগত মান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষেও বিশেষ মনোযোগী ছিলেন।
দুর্ভাগ্যবশত, ১৯১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর, মাত্র ৫২ বছর বয়সে উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী পরলোকগমন করেন। ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের ছাত্র হিসেবে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় বৃত্তি পেয়েছিলেন, পরে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ছোটবেলা থেকেই তার পড়াশোনার চেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল সঙ্গীত, বেহালা ও বাঁশির প্রতি।
সা/ই