ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

গাজায় দুর্ভিক্ষ নয়, বরং একটি পরিকল্পিত গণহত্যা

প্রকাশিত: ২০:০১, ১২ মে ২০২৫; আপডেট: ২০:০২, ১২ মে ২০২৫

গাজায় দুর্ভিক্ষ নয়, বরং একটি পরিকল্পিত গণহত্যা

ছবি: সংগৃহীত

গাজা উপত্যকার পুরো জনগোষ্ঠী এখন দুর্ভিক্ষের “তাৎক্ষণিক ঝুঁকিতে”—এমন ভয়াবহ সতর্কতা উচ্চারণ করেছে আইপিসি (Integrated Food Security Phase Classification)। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরই জাতিসংঘের শীর্ষ দুটি সংস্থা জানিয়ে দিয়েছে, গাজার শিশুরা প্রতিদিন তীব্র অপুষ্টি ও অনাহারের মুখোমুখি হচ্ছে, আর সীমান্তে পড়ে থাকা খাদ্যসামগ্রী ঢুকতে পারছে না রাজনৈতিক ও সামরিক বাধার কারণে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (WFP) নির্বাহী পরিচালক সিন্ডি ম্যাককেইন এক বিবৃতিতে বলেন, গাজার পরিবারগুলো যখন অনাহারে ভুগছে, তখন তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সীমান্তে আটকে রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখনই জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। যদি আমরা শুধু দুর্ভিক্ষ ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করি, তাহলে অনেকের জন্য তা হবে খুব দেরি।

তিনি আরও বলেন, সমস্যাটি সমাধানে এখনই পদক্ষেপ না নিলে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু অনিবার্য হয়ে উঠবে।

জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, দুর্ভিক্ষ হঠাৎ করে আসে না। এটা জন্ম নেয় যখন খাদ্যের প্রবেশ বন্ধ থাকে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে এবং শিশুরা ন্যূনতম বেঁচে থাকার সহায়তা থেকেও বঞ্চিত হয়।

তিনি সতর্ক করে বলেন, গাজার শিশুদের জন্য অনাহার ও তীব্র অপুষ্টি এখন প্রতিদিনের বাস্তবতা। আমরা বহুবার সতর্ক করেছি—এখন আবারও বলছি, সমস্ত পক্ষকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে, নইলে মানবিক বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে উঠবে।


স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, গাজা সীমান্তে হাজার হাজার টন ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী অপেক্ষমাণ রয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তা হুমকি, বোমাবর্ষণ ও রাজনৈতিক বাধার কারণে এসব ত্রাণ অভ্যন্তরে ঢুকতে পারছে না। এতে শিশু, নারী ও বয়স্ক মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।


গত বছরের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান সংঘর্ষে গাজার জীবনব্যবস্থা প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো গুঁড়িয়ে গেছে, খাদ্য মজুদ শেষ হয়ে এসেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি এখন শুধুই যুদ্ধ নয়—এটা মানবতা ও অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।

জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠন বারবার আহ্বান জানিয়ে আসছে যেন গাজার জন্য একটি অবিচ্ছিন্ন মানবিক করিডর খোলা হয়, যার মাধ্যমে নিরাপদে ত্রাণ বিতরণ করা সম্ভব হয়। কিন্তু রাজনৈতিক সমঝোতার অভাবে তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।


মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজায় যা ঘটছে তা দুর্ভিক্ষ নয়, বরং একটি পরিকল্পিত মানবিক সংকট, যেটি যুদ্ধের কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তারা স্মরণ করিয়ে দেয়, ১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডা গণহত্যার মতোই, আমরা কি আবারও দেরি করে ফেলে সেই ভুল পুনরাবৃত্তি করতে যাচ্ছি?


গাজার বর্তমান পরিস্থিতি শুধু একটি ভূ-রাজনৈতিক সংকট নয়, এটি এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। যখন শিশুদের ক্ষুধা নিবারণের পরিবর্তে রাজনৈতিক বক্তব্য আর রণকৌশল মুখ্য হয়ে ওঠে, তখন সমগ্র মানবসভ্যতার আত্মা আহত হয়। জাতিসংঘের নেতৃত্বে বিশ্ব সম্প্রদায়ের এখনই এগিয়ে এসে ত্রাণ প্রবেশ নিশ্চিত করা জরুরি—কারণ সময় ফুরিয়ে আসছে।

এসএফ

×