ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

নাঙ্গলকোট

সৌন্দর্য ছড়ানো সোনালু ফুল বিলুপ্তির পথে

সংবাদদাতা, নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা

প্রকাশিত: ২২:২৩, ১২ মে ২০২৫

সৌন্দর্য ছড়ানো সোনালু ফুল বিলুপ্তির পথে

সোনালু ফুলটি দেখা মিললেও তা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে

সোনালি রং ছড়িয়ে দিচ্ছে সোনালু ফুল। দেখতে কিশোরীর কানের দুলের মতো মৃদু বাতাসে দুলছে। বর্তমানে এই ফুলটি  বিলুপ্তির পথে এক সময়ে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে সড়কের পাশে ও বন বাদাড়ে এই সোনালি ফুলটি দেখা মিললেও তা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। কানের দুলের মতো  হলুদের আভা মাতোয়ারা করে রাখেছে চারপাশ। সবুজ কচিপাতার ফাঁকে ঝলমলে ফুল প্রকৃতিকে যেন সাজিয়ে তুলেছে নিজের মতো করে। 
নাঙ্গলকোটে এই ফুল সোনালু ফুল নামে বেশ পরিচিত। সোনালুকে অনেকে আঞ্চলিক ভাষায় বানরলাঠি বা বাঁদরলাঠি নামেও ডাকে। এই ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে ক্যাশিয়া ফিস্টুলা। ইংরেজি নাম গোল্ডেন শাওয়ার। সোনালি রঙের ফুলের বাহার থেকেই ‘সোনালু’ নামে নামকরণ করা হয়েছে। এ ফুলের আদি নিবাস হিমালয় অঞ্চল ধরা হলেও বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমার অঞ্চলজুড়ে রয়েছে এর বিস্তৃতি।

অস্ট্রেলিয়ায় নিউ সাউথ ওয়েলস ও কুইন্সল্যান্ডের উষ্ণ অঞ্চলে এদের প্রচুর দেখা মেলে। কুমিল্লা জেলার সব উপজেলাতেই সোনালু গাছটি একসময় অনেকের চোখে পরত কিন্তু কালের বিবর্তনে গাছটি এখন আর কেউ রোপণ করে না দেখে বিলুপ্তপ্রায়। তবে বন বাঁদারে এই বৃক্ষটি তার ফলের বীজ থেকেই প্রাকৃতিক নিয়মে ঝোপজঙ্গল পথে-প্রান্তরে জন্মে ওঠে। নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে এই বৃক্ষটি এখন বিলুপ্তর পথে।
নাঙ্গলকোটের বক্সগঞ্জ ইউপির মদনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাস্তার পাশে এই সোনালু ফুলের দেখা মিলছে। গ্রীষ্মের প্রকৃতিতে প্রাণের সজীবতা নিয়ে যেসব ফুল ফোটে তার মধ্যে সোনালু অন্যতম। তীব্র খরতাপে পথের পথিকের দৃষ্টি কাড়ছে এই ফুল। অনেকেই দাঁড়িয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করেছন। অনেকেই আবার বিমোহিত হয়ে গাছ থেকে ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছেন ফুল।

সোনালুর রূপ দেখে মনে হয় কোনো রূপসীকন্যা এইমাত্র হলুদের পিঁড়িতে বসেছেন। পুরো গাছ থেকে হলুদ যেন বাতাসে মিশে উড়ে যাচ্ছে। শীতে সমস্ত পাতা ঝরে গিয়ে সোনালু গাছ থাকে পত্রশূন্য এবং বসন্তের শেষে ফুলকলি ধরার আগে গাছে নতুন পাতা গজায়। গ্রীষ্মকালে যখন সব গাছে একসঙ্গে সোনালি ফুল ফোটে, তখন মনে হয় চারপাশ আলোকিত হয়ে যায়। সোনালু গাছ আকারে ছোট হলেও ডালপালা ছড়ানো-ছিটানো।

দীর্ঘ মঞ্জুরিদ-ে ঝুলে থাকা ফুলগুলোর পাপড়ির সংখ্যা পাঁচটি। সবুজ রঙের একমাত্র গর্ভকেশরটি কাস্তের মতো বাঁকানো। এ গাছের ফল বেশ লম্বা, লাঠির মতো। উপজেলার বাসিন্দা রিজোয়ান বলেন, এই উপজেলার মদনপুর স্কুলের এ পথ দিয়েই আমার আসা-যাওয়া। প্রতিদিনই আসা-যাওয়ার পথে সোনালু ফুলের হলুদ সৌন্দর্য উপভোগ করছি। মন আর প্রাণ যেন জুড়িয়ে যায় সৌন্দর্যে।

মদনপুর গ্রামের শাহ আলম বলেন, আমাদের স্কুলের পাশে সোনালু ফুলের গাছ রয়েছে। প্রতিদিন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা তা দেখে আনন্দ পায় আবার অনেকে গাছের পাশে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলে।  যখন এ ফুল হলুদ আভা ছড়ায়, তখন  ছাত্র-ছাত্রীদের এ দৃশ্য মনপ্রাণ কেড়ে নেয়, প্রকৃতির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলে।

×