ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

বাংলাদেশে পৈত্রিক ভিটা হলেও তিনজনের জন্ম ভারতে

বিএসএফের ফেলে যাওয়া ৭৫ বাংলাদেশী ও  তিন ভারতীয়কে পুলিশে সোপর্দ

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ০১:৩০, ১৩ মে ২০২৫

বিএসএফের ফেলে যাওয়া ৭৫ বাংলাদেশী ও  তিন ভারতীয়কে পুলিশে সোপর্দ

বিএসএফের রেখে যাওয়া ৭৫ বাংলাদেশী ও তিন ভারতীয় নাগরিক

সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের রেখে যাওয়া ৭৫ বাংলাদেশী ও তিন ভারতীয় নাগরিককে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। কোস্টগার্ড রবিবার রাত সাড়ে  ১১টার দিকে তাদেরকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় সোপর্দ করে। উদ্ধারকৃত বাংলাদেশীদের বাড়ি নড়াইল, খুলনা, যশোর ও বরিশাল জেলায়। তাদের অধিকাংশই দুই মাস থেকে ৩৭ বছর ধরে বিভিন্ন মেয়াদে ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদ ও সুরাট শহরে বসবাস করত।
এদিকে দায়েরকৃত মামলার আসামিরা হলেন- খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের খালিদ শেখের ছেলে আব্দুর রহমান (২০), নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের মুন্না শাহের ছেলে হাসান শাহ (২০) ও একই গ্রামের সোহেল শেখের ছেলে সাইফুল শেখ (১৯)। এদের বাবা-মা বাংলাদেশী হলেও জন্ম ভারতের গুজরাট প্রদেশের আহমেদাবাদ জেলার যথাক্রমে নেহেরীনগর, জোপারপাচ্চি ও ফুলবাড়িয়ায়।
 কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের মোংলা মিডিয়া সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, বিএসএফের ‘পুশ ইন’ করা ৭৮ জনের মধ্যে ৭৫ জন বাংলাদেশী। অপর তিনজনের  পৈত্রিক বাড়ি বাংলাদেশে হলেও তাদের জন্ম ভারতে। সে কারণে ওই তিনজনের বিরুদ্ধে কোস্টগার্ড বাদী হয়ে ররিবার রাতেই শ্যামনগর থানায় মামলা দায়ের করেছে।

৭৫ জন বাংলাদেশীকেও একই সঙ্গে শ্যামনগর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৬৭ জনের বাড়ি নড়াইল জেলায়, ৬ জনের খুলনায়, দুইজনের যশোরে, একজনের বরিশালে ও একজনের সাতক্ষীরায়। পুশ ইন হওয়া একাধিক ব্যক্তি জানান, তারা সকলেই ভারতের গুজরাটের সুরাট বস্তিতে থাকতেন এবং ছোটখাট কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গত ২৬ এপ্রিল তাদের বস্তি ভেঙে-গুঁড়িয়ে দেয় স্থানীয় প্রশাসন।

ওইদিন রাতেই তাদের আটক করা হয়। সেখান থেকে তাদের হাত ও চোখ বেঁধে নেওয়া হয় পুলিশ ক্যাম্পে। সেখানে চারদিন রাখার পর তাদের বিমানে করে কলকাতায় আনা হয়। কলকাতা থেকে তাদের জাহাজে করে সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া এলাকায় নিয়ে চোখ বেঁধে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে তাদের মান্দারবাড়িয়া ফরেস্ট ক্যাম্পে আশ্রয় দেওয়া হয় ।
সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিথুন সরকার জানান, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সাতক্ষীরার শ্যামনগরের সুন্দরবন সংলগ্ন মান্দারবাড়িয়া এলাকায় ঠেলে দেওয়া ৭৮ বাংলাভাষীকে রবিবার রাত ১১টার দিকে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন  মোংলা থেকে শ্যামনগর থানায় সোপর্দ করে। বাংলাদেশে  পৈত্রিক ভিটা হলেও তিনজনের জন্ম ভারতে।

কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের মোংলা জোনাল অফিসের পিও মশিউর রহমান বাদী হয়ে রবিবার রাতে ওই তিনজনের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে (১১সি ধারায়) থানায় মামলা দায়ের করেছেন। তাদেরকে সোমবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়। বাকি ৭৫ জনকে তাদের স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ৮ মে সন্ধ্যায় ভারতীয় বিএসএফ ৭৮ জনকে বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন গভীর সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া এলাকায় একটি চরে ঠেলে দিয়ে যায়।

সেখান থেকে তারা হেঁটে বন বিভাগের মান্দারবাড়িয়া টহল ফাঁড়িতে চলে আসে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রবিবার বিকেলে সমুদ্রপথে একটি জাহাজ ও একটি স্পিডবোটে বাগেরহাটের  মোংলা কোস্টগার্ড অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৭৫ বাংলাদেশী ও তিনজন ভারতীয় বলে জানা যায়। রবিবার রাতে তাদেরকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় সোপর্দ করা হয়।

×