ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

তিন মাসে মারা যায় ২১ বাচ্চা

ধুঁকছে দেশের একমাত্র মহিষ প্রজনন খামার

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট

প্রকাশিত: ০১:২৫, ১৩ মে ২০২৫

ধুঁকছে দেশের একমাত্র মহিষ প্রজনন খামার

মহিষ প্রজনন খামার

দেশের একমাত্র সরকারি মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারটি আক্ষরিক অর্থে ধুঁকছে। খামারে বিভিন্ন জাতের মহিষ থাকলেও তীব্র জনবল সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত এ খামরটি। পরিচর্যার অভাবে মহিষের রুগ্নতা ও মৃত্যুর হার বাড়ছে। গত অক্টোবর মাসে ১৮টি মহিষ মারা যায়। এর আগে গত ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে মারা যায় ২১টি বাচ্চা মহিষ। এ ঘটনায় তখন উচ্চপর্যায়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

এ অবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের মাংস ও দুগ্ধ উৎপাদনে। বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার খুলনা-মোংলা মহাসড়কে পাশে সুখদাড়ায় দেশের একমাত্র মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারটি গড়ে উঠেছে। ১৯৮৪-৮৫ অর্থবছরে সালে ১১১টি বিভিন্ন জাতের মহিষ নিয়ে এ খামরের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে প্রায় ১০০ একর জমিতে মুররা, নিলিরাভিসহ অন্যান্য জাতের মিলে ছোট-বড় ৪১৮টি মহিষ আছে। খামারের মূল উদ্দেশ্য ৫০ শতাংশ ভর্তুকি মূল্যে চাষিদের ষাঁড়-মহিষ সরবরাহ করা।

গত অর্থবছরে ১৪২টি মহিষ বিক্রি হয়েছে। তবে ৪১৮টি মহিষের সরাসরি পরিচর্যার জন্য চতুর্থ শ্রেণির ৩৮টি পদের বিপরীতে মাত্র ৪ জন আছেন। ফলে মহিষগুলোর যথাযথ পরিচর্যা, শেড পরিষ্কার করা, সময়মতো খাবার দেওয়া ও যতœ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দুধ সংগ্রহ ও বিক্রয়সহ সকল কাজও ব্যাহত হচ্ছে।
সরেজমিন মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে দেখা যায়, একাধিক শেডে মহিষ রাখা হয়েছে। ষাঁড় ও মা মহিষের পাশাপাশি শাবকদের জন্যও রয়েছে আলাদা শেড। মহিষের স্বাস্থ্য দেখলেই পরিচর্যার ঘাটতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মহিষের খাবারের জন্য খামার চত্বরে বিশেষভাবে ঘাস রোপণ করা হয়েছে।

এখানকার উৎপাদিত দুধের গুণগতমান ভালো হওয়ায় প্রতিদিন সকালে ক্রেতাদের লাইন পড়ে। মহিষের দুধ গরুর দুধের চেয়ে চারগুণ বেশি পুষ্টিমান সমৃদ্ধ হওয়ায় ক্রেতারা ভিড় করেন। বর্তমানে প্রতি লিটার দুধ ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এখানে বছরে ৭০-৮০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদিত হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহরাপ হোসেন ও শেখর চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘গরুর দুধের তুলনায় মহিষের দুধ ঘন হওয়ায় আমরা এখান থেকে দুধ কিনি। কিন্তু অনেক সময় লাইনে দাঁড়িয়েও আমরা দুধ পাই না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খামারের একজন কর্মচারী বলেন, ‘জনবল কম থাকায় ঠিকমতো মহিষের পরিচর্যা করা সম্ভব হয় না। ঠিকমতো খাবার খাওয়াতে পারি না। এজন্য অনেক মহিষ রুগ্ন হয়ে পড়ছে। মৃত্যুর হারও বাড়ছে।’
এ বিষয়ে মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারের সিনিয়র সহকারী পরিচালক শেখ আল মামুন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি শুরুর সময় ৫২ জন জনবল দেওয়া হয়েছিল। তবে গত ৪-৫ বছরে অবসরজনিত কারণে জনবলের সংখ্যা কমে গেছে। ‘মহিষ উন্নয়ন প্রকল্পের জনবল’ থাকায় এতদিন এই অভাব অনুভূত হয়নি।

কিন্তু প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জনবল সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তবে চিঠি পাঠানোর ৮-৯ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো নতুন জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। যথাযথ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বর্তমানে অন্তত ৩০ জন নতুন জনবল খুবই প্রয়োজন। আশা করি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।’

×