ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ‘মেয়েকে হত্যা’, বাবা গ্রেপ্তার

মনোয়ার হোসেন লিটন, কুড়িগ্রাম।

প্রকাশিত: ২০:১১, ১২ মে ২০২৫

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ‘মেয়েকে হত্যা’, বাবা গ্রেপ্তার

জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে স্কুল শিক্ষার্থী জান্নাতিকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। মেয়েকে হত্যার অভিযোগে রবিবার (১১ মে) জান্নাতির বাবা জাহেদুলকে গ্রেপ্তার করেছে কুড়িগ্রাম সদর থানা পুলিশ। একই সাথে জান্নাতির মা মোর্শেদা ও বড় চাচি কহিনুর বেগমকে আটক করা হয়েছে।


কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুল্লাহ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জান্নাতির বাবা জাহেদুলের দেওয়া তথ্য মতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন ওসি।


এর আগে গত শনিবার (১০ মে) সকালে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের কাগজিপাড়া গ্রামে নিজ বসতবাড়ির পাশে কৃষি জমি থেকে জান্নাতির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ঘটনায় জান্নাতির জ্যাঠা খলিল বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন।


জান্নাতির পরিবারের দাবি, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের লোকজন রাতের বেলা জান্নাতিকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে ফেলে রাখে। তবে তাদের এমন দাবির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।


এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, জান্নাতির বাবা জাহেদুল ও জ্যাঠা খলিলের সাথে একই এলাকার মকবুল পাটোয়ারি গংয়ের জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। এছাড়াও খলিল ও জাহেদুলের আপন ছোট ভাই রফিকুলের সাথেও জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলমান। এসব নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে মামলাও রয়েছে। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গরু-ছাগল চুরি, খড়ের গাদায় আগুন দেওয়াসহ পরস্পরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে।


এলাকার একাধিক নিরপেক্ষ সূত্রে জানা গেছে,  জাহেদুল ও তার বড় ভাই খলিল জমি নিয়ে তাদের আপন ভাই রফিকুল ও তার স্ত্রী হালি বেগমকেও মারধর করেন। রফিকুল বাদী হয়ে মামলাও করেছেন। কিন্তু জাহেদুল ও খলিলের ভয়ে তারা কয়েক মাস এলাকাছাড়া ছিলেন। জাহেদুল ও খলিল প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ছোট ভাই রফিকুল ও তার স্ত্রীকে মারার হুমকি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ হালি বেগমের।


হালি বেগম বলেন, ‘স্বামীর আপন ভাই খলিল, জাহেদুল ও একরামুলরা পিটিয়া আমার হাত-পা ভেঙে দিছে। স্বামীসহ আমাক মারার বুদ্ধি করছিল। আমাদেক মারি ফেলে মাইনষক ফাঁসাইবে। এটা জানার পর আমি বাড়ি ছাড়ি গেছিলাম।’


জাহেদুলের বড় ভাই ও জান্নাতির চাচা রফিকুল বলেন, ‘জাহেদুল খুব খারাপ লোক। খলিল আর একরামুল মিলিয়া আমাক মারিয়া পাটোয়ারিসহ খন্দকার গোষ্ঠিক ফাঁসার প্লান করছিল। ওরা আমাক পাইলে এক ঘন্টার মধ্যে মেরে ফেলবে। ওরা নিজের মেয়েক নিজে মারছে। এটার কোনও ভুল নাই। মাইনষেক ফাঁসার জন্যে মারি ফেলাইছে।’


আপন ভাইদের সাথে দ্বন্দ্বের কারণ প্রশ্নে রফিকুল বলেন, ‘আমার পাঁচ বিঘা জমি ওরা আবাদ করতে দেয়না। আমি বন্ধক রাখছি। সেই বন্ধক নেওয়া লোকদেরও জমিতে নামতে দেয় না। এ নিয়ে আমাক ও আমার স্ত্রীক মারধর করি মারি ফেলাইতে ধরছে। আমি মামলাও করছি।’


জাহেদুলকে গ্রেফতারের খবরে এলাকাবাসীর অভিযোগ, জান্নাতিকে হত্যা করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর পেছনে শুধু জাহেদুল নয় তার বড় ভাই খলিলের প্রত্যক্ষ মদদ থাকতে পারে। এলাকায় খলিলের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত রুহল আমিন ওরফে উকিল এবং আব্দুল কাদের নামে দুই প্রতিবেশী খলিল ও জাহেদুলকে সকল ধরণের পরামর্শ দিয়ে থাকে। এ ঘটনায় তাদের কোনও সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। তবে এ নিয়ে নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করে কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি।


জান্নাতি হত্যাকাণ্ডের দিন তার জ্যাঠা খলিল প্রতিপক্ষের কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে দাবি করেন, ‘আমরা হত্যাকারীদেরকে চিনি। তারা জান্নাতিকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারি ফেলছে।’ তবে জাহিদুল, তার স্ত্রী মোর্শেদা ও খলিলের স্ত্রী কহিনুরকে পুলিশ আটক করার পর থেকে খলিলের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তিনি পলাতক রয়েছেন বলে এলাকাবাসী সূূত্রে জানা গেছে।


ওসি হাবিবল্লাহ বলেন, ‘তদন্তে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় জান্নাতির বাবা জাহেদুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে হত্যাকান্ডের কিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে। এছাড়াও জান্নাতির মা ও চাচীকে জিজ্ঞসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় আর কারও সম্পৃক্তা আছে কিনা তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। তদন্তের স্বার্থে এই মহূর্তে বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়।’

রিফাত

×