ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

চেনাবের পানি ছেড়েছে দিল্লি, ভারতে ৩২ বিমানবন্দর চালু

কাশ্মীরে নেই গোলাগুলি জঙ্গি বিমানের ওড়াউড়ি ঘরে ফিরছে মানুষ

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৪০, ১২ মে ২০২৫

কাশ্মীরে নেই গোলাগুলি জঙ্গি বিমানের ওড়াউড়ি ঘরে ফিরছে মানুষ

কাশ্মীরে নেই গোলাগুলি জঙ্গি বিমানের ওড়াউড়ি

কিছুক্ষণ পর পর গোলাগুলি। ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও জঙ্গি বিমানের ওড়াউড়ি, লোকজনের মৃত্যু। কিছুদিন ধরে এসব দেখে আসছিল কাশ্মীরের মানুষ। কিন্তু চিরবৈরী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বিরতি হওয়ায় রবিবারের রাতটি কাশ্মীরবাসীর কাছে ছিল শান্তির। হামলা-পাল্টাহামলার কোনো ঘটনা না থাকায় কাশ্মীরবাসীর মনে স্বস্তি ফিরে আসে।
সোমবার ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, রবিবার রাতে কাশ্মীরসহ আন্তর্জাতিক সীমান্তজুড়ে কোথাও কোনো গোলাগুলির খবর পাওয়া যায়নি। এটিই ছিল সাম্প্রতিক প্রথম ‘পুরোপুরি শান্তির’ রাত। পাক কর্তৃপক্ষও একই তথ্য দিয়েছে। পাক-ভারত যুদ্ধ বিরতির পর সোমবার প্রথমবারের মতো চেনাব নদীর বাঁধ খুলে দেয় মোদি সরকার। ফলে চেনাবের পানি ইতোমধ্যে পাকিস্তানের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে।  
সোমবার থেকে ভারত ৩২টি বিমানবন্দর পুনরায় খুলে দিয়েছে। ভারতের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, কাশ্মীরের শ্রীনগর থেকে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের ভুজ পর্যন্ত ৩২টি বিমানবন্দর বেসামরিক ফ্লাইট চলাচলের জন্য সম্পূর্ণভাবে উন্মুক্ত করা হয়েছে। ভারত-পাকিস্তান তীব্র যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গত সপ্তাহে বিমানবন্দরগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভারতের শীর্ষস্থানীয় বিমান সংস্থা ইন্ডিগো জানায়,  তারা পূর্বে বন্ধ থাকা রুটগুলো ধীরে ধীরে চালু করবে।

এদিকে ভারত-পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে সোমবার সন্ধ্যায় আলোচনা হয়েছে। পাক-ভারত উত্তেজনা ও যুদ্ধ বিরতির পর প্রথমবারের মতো উভয় দেশের সামরিক কর্মকর্তারা হটলাইনে কথা বললেন। তবে এই আলোচনায় কি নিয়ে কথা হয়েছে তা আপাতত জানা যায়নি। খবর আলজাজিরা, বিবিসি ও সিএনএন অনলাইনের। 
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চারদিনের তীব্র হামলা এবং ওয়াশিংটনের কূটনীতি ও চাপের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার জানান, দুই দেশ যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হয়েছে। এদিন হঠাৎ করেই ট্রাম্পের ডাকে যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হয় উভয়পক্ষ। এর আগে পাল্টাপাল্টি হামলায় অন্তত ৬০ জন প্রাণ হারান। কয়েক হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। এমন ভয়াবহতা ১৯৯৯ সালের পর আর দেখা যায়নি। পরমাণু শক্তিধর এই প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে নতুন করে যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার শঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে গোটাবিশ্ব। 
যদিও যুদ্ধ বিরতি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা ভঙ্গের অভিযোগে একে অপরকে দোষারোপ করে ভারত ও পাকিস্তান। এতে শান্তির সম্ভাবনা নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়। তবে সোমবার ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, যুদ্ধ বিরতি ঘোষণার পর ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ একটি রাত কেটেছে। এটিকে ‘নীরব ও সংঘর্ষমুক্ত রাত’ বলেও উল্লেখ করা হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘গত কয়েকদিনের মধ্যে একমাত্র গতরাতেই কোনো সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সীমান্ত শহর পুঞ্চে টানা দ্বিতীয় রাতের মতো গোলাগুলি বা শেল হামলার ঘটনা ঘটেনি। সাম্প্রতিক সংঘাতে এলাকাটির অন্তত ১২ বাসিন্দা নিহত হন। এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন ৬০ হাজারের বেশি। কিছু বাসিন্দা শহরে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে তাদের চোখে-মুখে এখনো আতঙ্ক। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এই যুদ্ধ বিরতি হয়ত টিকবে না।
বুধবার ভোরে কাশ্মীরের পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত অংশে সন্ত্রাসী ঘাঁটি ধ্বংস করতে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে পরিস্থিতি মোড় নেয় পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে। ১৯৯৯ সালের পর এটিই ছিল পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা, যা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নিতে পারে শঙ্কায় বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ তৈরি হয়। ২২ এপ্রিল ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়।

পাকিস্তানের ওপর এ হামলার দায় চাপায় ভারত। যদিও  সে অভিযোগ অস্বীকার করে ইসলামাবাদ। মূলত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরকে ভারত ও পাকিস্তান  উভয়ই নিজেদের অংশ বলে দাবি করে আসছে। ১৯৪৭ সাল থেকে কাশ্মীর ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে একাধিকবার যুদ্ধও হয়েছে। এবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বিরতি নিয়ে একটি চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির আইএসপিআর-এর  মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ সোমবার দাবি করেন, তারা ভারতকে যুদ্ধ বিরতির অনুরোধ জানাননি, বরং ভারতই যুদ্ধ বিরতির বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। 
এর আগে রবিবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা যুদ্ধ বিরতির প্রতিশ্রুতি কঠোরভাবে মেনে চলছে। আবার একজন ভারতীয় পাইলট তাদের জিম্মায় রয়েছে, এ বিষয়টিও সত্য নয় বলে দাবি ইসলামাবাদের। লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ বলেছেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, ভারতীয় কোনো পাইলট পাকিস্তানের হেফাজতে নেই। ব্রিফিংকালে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদ দাবি করেন, সংঘর্ষ চলাকালে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ভারতীয় বেশকিছু সামরিক স্থাপনা ও ‘সন্ত্রাসী’ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ধ্বংস করেছে। 
এছাড়া আকাশ পথের যুদ্ধে ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিরুদ্ধে ছয়-শূন্য ব্যবধানে পাকিস্তান জয়লাভ করেছে। ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষে পাকিস্তান তার সামরিক শক্তির সামান্য ঝলক দেখিয়েছে বলে মন্তব্য করেন আহমেদ শরীফ। তিনি বলেন, ‘এটা মনে রাখা উচিত যে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর আধুনিক যুদ্ধক্ষমতা রয়েছে, যার মধ্যে সামান্যই ভারতের বিরুদ্ধে  ব্যবহার করা হয়েছে। বাকিটা ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। তবে ভারত ও পাকিস্তানের পারমাণবিক যুদ্ধে জড়ানোটা ‘নিছক বোকামি হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

×