
শহরের এক কোণে, ধুলোমাখা গলির পাশে শৈশব দুলছে দড়ির দোলনায়—নিয়মের বাইরে, নির্মল আনন্দে। -রিজওয়ান করিম
"আমার ছেলেবেলা ফিরিয়ে দাও..." — জীবনানন্দ দাশের এই অমর পঙক্তিটি যেন বাস্তব হয়ে ওঠে ছবির প্রতিটি ফ্রেমে। শহরের কোলাহল আর ধুলোমাখা গলির ভেতরে বড় একটি গাছের ডালে বাঁধা দড়ির দোলনায় দুলছে কয়েকজন শিশু। মুখে তাদের চঞ্চল হাসি, চোখে উচ্ছ্বাসের দীপ্তি। না, এ কোন পার্কের দৃশ্য নয়, এ যেন শৈশবের নিজস্ব রাজ্য—যেখানে নিয়ম নেই, নেই কোনো বাধা, কেবল খেলা আর প্রাণের স্পন্দন।
প্রতিদিনই আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি শিশুদের মোবাইল ফোনে মুখ গুঁজে থাকার দৃশ্যে। অথচ এই ছবির শিশুগুলো—তাদের কারও গায়ে ছেঁড়া জামা, কারও পায়ে জুতো নেই—তবুও এদের মুখে যে আনন্দ, তা হয়তো দামি খেলনার ভাণ্ডারেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। দড়ির দোলনা, মাটির ধুলো, আর আকাশের নীলে মিশে থাকা হাসির এই রূপ সত্যিই দুর্লভ।
এই ছবিটি যেন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আনন্দ জিনিসটি সত্যিই খুব সহজ। এক টুকরো কাপড়, একটা দড়ি আর কয়েকজন বন্ধু থাকলেই হয়ে যায় শৈশবের রাজ্য। শিশুটির মুখে হাসি যখন দোলনার ছন্দে বাতাস ছুঁয়ে যায়, তখন চারপাশের টিনের ঘর, ভাঙা রাস্তা বা বৈদ্যুতিক তারের জট—কোনোটাই আর চোখে পড়ে না।
এই দৃশ্য আমাদের সামাজিক প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করায়—শিশুদের জন্য আমরা কী রেখে যাচ্ছি? প্রযুক্তি আর প্রতিযোগিতার আবর্তে তারা হারিয়ে ফেলছে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার সহজাত আনন্দ। আমরা কি তাদের দিচ্ছি এমন এক ভবিষ্যৎ, যেখানে খোলা মাঠ নেই, নেই ছায়াময় গাছ, নেই দোলনা?
একসময় সব শিশুই এমনই নির্মল আনন্দে বড় হতো। আজ সেই ছবিগুলো যেন অতীত। অথচ এই একটি ছবি আশা জাগায়—সব হারিয়ে যায়নি। এখনো কোথাও, কোনো গলিতে, শৈশব দুলছে দড়ির দোলনায়।
শিশুদের জন্য খোলা আকাশ, দোলা দেওয়া গাছ আর ছোট্ট একটু জায়গা—এই তো চাওয়া। হয়তো এটুকুই দিতে পারলেই তারা গেয়ে উঠবে—
"আমার শৈশব ফিরে পেয়েছি..."
এসইউ