
ছবি : সংগৃহীত
এই প্রশ্নটি যুগ যুগ ধরে চলে আসা পারিবারিক ও সামাজিক বিতর্কের একটি পুরোনো অধ্যায়। বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে এটি শুধু একটি পারিবারিক আলোচনার বিষয় নয়, বরং মানসিক ভারসাম্য, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও সামাজিক কাঠামোর গভীরে প্রোথিত একটি চিরন্তন দ্বন্দ্ব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২২ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়,
পারিবারিক দ্বন্দ্বের ৪৫% ক্ষেত্রেই মা ও স্ত্রীর মধ্যকার ভুল বোঝাবুঝি বড় ভূমিকা রাখে। তবে গবেষকরা বলছেন, এটি আসলে গুরুত্বের লড়াই নয়, বরং বোঝাপড়ার অভাব।
পরিবার বিশেষজ্ঞ ড. শাহনাজ পারভীন বলেন:
“মা হচ্ছেন একজন পুরোনো অভিভাবক, যিনি সন্তানকে বড় করেছেন। স্ত্রী হলেন জীবনের পরবর্তী অধ্যায়ে সঙ্গী, যাঁর সঙ্গে ভবিষ্যৎ তৈরি হয়। একজনের অবদান অতীতে, আরেকজনের বর্তমান ও ভবিষ্যতে।”
ইসলাম, হিন্দু ধর্মসহ বিভিন্ন ধর্মে মায়ের মর্যাদাকে অত্যন্ত উচ্চস্থানে রাখা হয়েছে। হাদীসে বলা হয়, “মা’র পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।” অন্যদিকে, বিবাহিত জীবনে স্বামীর জন্য স্ত্রী একান্ত সহযোগী এবং জীবনের উত্তাল সময়ে পাশে থাকা সঙ্গী।
ধর্মীয় চিন্তাবিদ মাওলানা জুবায়ের আহমদ বলেন:
“মাকে সম্মান দিতে হবে নিঃসন্দেহে। কিন্তু স্ত্রীকেও সম্মান ও ভালোবাসা দিতে হবে। কারণ স্ত্রী হলেন সেই নারী যিনি নিজের পরিবার ছেড়ে একজন পুরুষের ঘরে এসে জীবন গড়ে তোলেন।”
সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষকদের মতে, মা ও স্ত্রী—দুজনই একজন পুরুষের জীবনে অপরিহার্য। কিন্তু অগ্রাধিকার নয়, প্রয়োজন অনুপাতে দায়িত্ববণ্টন ও সম্পর্ক রক্ষা করাই উচিত।
মনোবিজ্ঞানী ডা. মনিরুল ইসলাম বলেন:
“যখন একজন পুরুষ পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়ে, তখনই সম্পর্ক নষ্ট হয়। সঠিক সমঝোতা ও সময় বণ্টন—এই দুটি বিষয় ঠিক থাকলে মা ও বউ দুজনই সন্তুষ্ট থাকেন।”
এই প্রশ্নের কোনো একক সঠিক উত্তর নেই। মা ও স্ত্রী, দুজনই জীবন নামক যাত্রার গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। একজন দেয় শেকড়, আরেকজন দেয় ডানা। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ভারসাম্যই পারে পরিবারে শান্তি আনতে।
“মা না বউ—এই তুলনা নয়, বরং সম্মান ও বোঝাপড়ার মাধ্যমেই পরিবার হয় শক্তিশালী।”
আঁখি