ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

ইসরায়েলের সঙ্গে অংশীদারিত্ব চুক্তি বাতিলের দাবি, ইইউ’র প্রতি আহ্বান ১১৪ এনজিও’র

প্রকাশিত: ১১:০৫, ২৬ জুন ২০২৫; আপডেট: ১১:০৫, ২৬ জুন ২০২৫

ইসরায়েলের সঙ্গে অংশীদারিত্ব চুক্তি বাতিলের দাবি, ইইউ’র প্রতি আহ্বান ১১৪ এনজিও’র

ছবি: সংগৃহীত

গাজায় চলমান সহিংসতা, মানবিক সংকট ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে ইসরায়েলের অংশীদারিত্বমূলক চুক্তি বাতিলের জোর দাবি জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW), অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ ১১৪টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈদেশিক কার্যক্রম বিভাগ (EU External Action Service) বর্তমানে ইসরায়েলের সঙ্গে Association Agreement পুনর্মূল্যায়ন করছে। এই চুক্তির ২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবেযা স্পষ্টতই লঙ্ঘিত হয়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।

‘ইসরায়েল চরমভাবে মানবাধিকারের শর্ত লঙ্ঘন করেছে’জোরালো অভিযোগ

ইইউ-ইসরায়েল অংশীদারিত্ব পর্যালোচনার আগে এক যৌথ বিবৃতিতে ১১৪টি এনজিও বলেছে, ‘সত্যিকার পর্যালোচনায় এটাই প্রমাণিত হবে যে ইসরায়েল চরমভাবে মানবাধিকার শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। এখনই চুক্তি স্থগিত করা উচিত।’

HRW-এর ইইউ পরিচালক ক্লডিও ফ্রান্সাভিলা বলেন, ‘গাজা নিয়ে সব ধরনের সংলাপ ব্যর্থ হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের সময় ইইউ যে নীতিগত উচ্চতা দেখিয়েছিল, গাজা ইস্যুতে আমরা তাদের কাছ থেকে দেখেছি ইতিহাসের সর্বনিম্ন অবস্থান।’

তিনি যোগ করেন, ‘৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু করে আজ অবধি ইইউ কোনোবারই ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের ন্যূনতম নিন্দাও জানায়নি। ২৭ সদস্যের সম্মতিপত্রে এমন কোনো বক্তব্য নেই।’

ইউরোপজুড়ে ফিলিস্তিন সংহতি আন্দোলন ও বিক্ষোভ

ফ্রান্সাভিলা বলেন, ইউরোপজুড়ে কয়েক মাস ধরে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতির বিক্ষোভ চলছে।

‘মানুষ এখন প্রকাশ্যে বলছে, এটা গণহত্যা, এটা মানবতাবিরোধী অপরাধ। এর বিপরীতে ইইউ সরকারের প্রতিক্রিয়া ছিল ভীষণ দেরিতে ও হতাশাজনক।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ তথাকথিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের অধীনে যে খাদ্য বিতরণ চলেছে, সেখানে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর হামলা হয়েছেএটা রীতিমতো ভয়ানক। মানুষ এখন সরকারের ওপর চাপ দিচ্ছে যেন তারা কিছু করে।’

‘ষাট হাজার জীবনের পরে জেগেছে ইউরোপ’HRW

ইইউ সরকারগুলোর ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে ফ্রান্সাভিলা বলেন, তারা ৬০,০০০ প্রাণের মৃত্যুর পরে নড়েচড়ে বসেছে। এটা প্রচণ্ড যন্ত্রণার পরে তাদের দেরিতে জেগে ওঠা।’

তিনি বলেন, ইইউ কিছু অবৈধ ইহুদি বসতিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও পুরো ইসরায়েল রাষ্ট্রকেই দায়মুক্তি দিচ্ছে।

‘ওয়েস্ট ব্যাংকে বসতি স্থাপনকারীদের অপরাধের দণ্ডদানের হার মাত্র ৩%—যা ইসরায়েলি এনজিওর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।’

‘গাজা নয়, পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং লেবাননের বিষয়েও চুক্তি প্রযোজ্য’

ফ্রান্সাভিলা স্পষ্ট করে বলেন, ইইউ-ইসরায়েল অ্যাসোসিয়েশন অ্যাগ্রিমেন্ট শুধু গাজা নয়, বরং ওয়েস্ট ব্যাংক, পূর্ব জেরুজালেম এবং লেবাননের ক্ষেত্রেও মানবাধিকার সংরক্ষণের শর্তে বাধ্যবাধকতা তৈরি করে।

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘চুক্তির বাণিজ্যিক দিক স্থগিত না করলে এই পর্যালোচনা প্রক্রিয়া নিছক আইওয়াশ হয়ে থাকবে।’

ফ্রান্সাভিলা আরও বলেন, “ইসরায়েল দখলকৃত সব এলাকায় যে ‘আপারথেইড’ (বর্ণবৈষম্যমূলক শাসন) চালাচ্ছে, তা ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর স্বীকার করা উচিত। ইইউ সরকারগুলোর উচিত সব কূটনৈতিক হাতিয়ার ব্যবহার করে গাজায় গণহত্যা রোধ করা।’

বিশ্লেষকদের মতে, এই যৌথ বিবৃতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর গুরুতর নৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছে। তবে চূড়ান্ত পদক্ষেপ কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করবে আজকের পররাষ্ট্র পরিষদের বৈঠকে ইউরোপীয় সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অবস্থানের ওপর।

 

সূত্র: আনাদোলু।

রাকিব

×