
ছবি আলজাজিরা
গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চল খান ইউনুসে নাসের হাসপাতালে ১১ মে এক শিশুর শোক প্রকাশের দৃশ্য যেন তুলে ধরে গাজার ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর টানা হামলায় রোববার সকাল থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকজন শিশু ও নারী।
খান ইউনুসের পশ্চিমে আবাসিক টাওয়ারের কাছে এক বোমা হামলায় দুইজন নিহত হন, আর একটি গাড়িতে ড্রোন হামলায় মারা যান তিনজন। গাজা শহরের উত্তরাঞ্চলীয় জেইতুন এলাকায় একটি বাড়িতে গোলাবর্ষণের ফলে আরও দুইজন প্রাণ হারান। এছাড়া মধ্য গাজার বুরেইজ শরণার্থী শিবিরের কাছে শনিবারের বিমান হামলার পর উদ্ধার করা হয়েছে এক ব্যক্তির মরদেহ।
ইসরায়েলি বাহিনী খন ইউনুসে অবস্থিত ইসলামিক ইউনিভার্সিটির ভবনেও হামলা চালিয়েছে।
এই হামলাগুলো ঘটে এমন এক সময়ে, যখন গাজা উপত্যকায় টানা ৭০ দিন ধরে কোনো খাদ্য, পানি, ওষুধ বা জ্বালানি প্রবেশ করতে পারছে না ইসরায়েলের অবরোধের কারণে। ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি এখন অনাহার-সঙ্কটের মুখে, মানবিক সহায়তার রান্নাঘরগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে খাদ্যের অভাবে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (UNRWA) রোববার সতর্ক করে বলেছে, অবরোধ যত দীর্ঘায়িত হবে, গাজার মানুষের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব ততই অপ্রতিকারযোগ্য হয়ে উঠবে।
সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “UNRWA-এর হাজার হাজার ট্রাক প্রস্তুত আছে গাজায় প্রবেশের জন্য এবং আমাদের টিমগুলো সহায়তা পৌঁছে দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত।”
এদিকে হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলের এসব কর্মকাণ্ড একটি “জটিল যুদ্ধাপরাধ”।
চলতি মাসেই ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা সম্পূর্ণ দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে, যার অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনিদের আরেক দফা ব্যাপকভাবে বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
ইসরায়েল ভবিষ্যতে গাজায় মানবিক সহায়তার বিতরণ নিজেরা নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রস্তাব দিয়েছে, যার অংশ হিসেবে সামরিক নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল তৈরি করার কথা বলছে তারা। তবে জাতিসংঘসহ মানবিক সহায়তা ফোরাম হুঁশিয়ারি দিয়েছে, এই পরিকল্পনা মানবিক নীতিমালার সম্পূর্ণ লঙ্ঘন এবং এটি জীবনরক্ষাকারী উপকরণের ওপর নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে ফিলিস্তিনিদের উপর চাপ সৃষ্টি করার একটি সামরিক কৌশল।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার রোববার জানিয়েছেন, দেশটি একটি নতুন মার্কিন ব্যবস্থাকে গ্রহণ করবে যা গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে সহায়তা করবে। প্রস্তাবিত এই পরিকল্পনায় রয়েছে মার্কিন নিরাপত্তা ঠিকাদার, সাবেক সেনা কর্মকর্তা এবং মানবিক সহায়তা বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল, যারা গাজায় খাবার ও ওষুধ বিতরণ করবে—ইসরায়েল-প্রণীত মডেলের অনুকরণে।
তবে এই পরিকল্পনা জাতিসংঘ ও অভিজ্ঞ মানবিক সংস্থাগুলিকে বাইপাস করার জন্য সমালোচিত হয়েছে। এতে মাত্র চারটি বিতরণ কেন্দ্র রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে, যার ফলে বহু ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণ গাজায় দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে বাধ্য করা হবে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েলে আক্রমণের পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় গাজায় অন্তত ৫২,৮২৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,১৯,৫৫৪ জন আহত হয়েছেন। ওই আক্রমণে ইসরায়েলে আনুমানিক ১,১৩৯ জন নিহত হন এবং দুই শতাধিক মানুষ গাজায় বন্দি করা হয়।
রোমে সদ্য নির্বাচিত পোপ লিও চতুর্দশ তার প্রথম রোববারের আশীর্বাদ বার্তায় গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, মানবিক সহায়তার প্রবেশ এবং বন্দিদের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন।
এসএফ