
ছবি : সংগৃহীত
"আমি তো আমার জন্য কিছু করি নাই। আমার কোনো আইডেন্টিটি নাই।"—একজন মায়ের শান্ত অথচ ভেতরে অশান্ত কণ্ঠে বলা এই কথাটি যেন হাজারো মায়ের না-বলা এক অভিমানকে তুলে ধরে।
সন্তানের জন্য নিজের স্বপ্নগুলোকে পেছনে ফেলে যে মায়েরা একটি জীবন পার করে দেন, তাদের কষ্ট, ত্যাগ আর অপূর্ণতা নিয়ে আমরা কতটা ভাবি? মা আমাদের শেখান কিভাবে অনুভব করতে হয়, কিন্তু তার নিজের অনুভূতির খবর আমরা কজন রাখি?
সহকর্মী ফারহানা নানসি তুলে ধরেছেন এমনই কয়েকজন মায়ের না-পূরণ হওয়া ইচ্ছের গল্প—যেখানে প্রতিটি গল্পই একেকটি আত্মত্যাগের উপাখ্যান।
একজন মা বলেন, “আমার ছেলের সাথে থাকার খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ও বিদেশে চলে গেল। আমি এখন মেয়ের সাথে থাকি। এই বাড়ি ছেড়ে আসাটা সহজ ছিল না।”
অন্য আরেকজন বলেন, “বিয়ের পর, বিশেষ করে মা হওয়ার পর, আমি পড়াশোনা শেষ করেছি ঠিকই, কিন্তু নিজের কোনো পরিচয় গড়তে পারিনি। এখন কোথাও গেলে ‘হাউসওয়াইফ’ লিখতে হয়, আর সেটা আমাকে কষ্ট দেয়। আমার তো হাউসওয়াইফ থাকার কথা ছিল না। আমি চাকরি করতে পারতাম, পড়াশোনা করেছিলাম।”
এমনও একজন ছিলেন যিনি বললেন, “আমি পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু সন্তানদের বড় করতে গিয়ে কখন যে নিজের স্বপ্নটা পিছিয়ে গেলাম, বুঝতেই পারিনি। এখন মনে হয়, আরেকটু চেষ্টা করলে হয়তো কমপ্লিট করতে পারতাম।”
তবে এই আফসোসে থেমে নেই তাদের ভালোবাসা। সন্তানদের সফলতা তাদের জন্যই পরম তৃপ্তি। একজন মা বলেন, “হয়তো নিজে পড়াশোনা শেষ করতে পারিনি, কিন্তু বাচ্চারা মানুষ হয়েছে—এটাই আমার বড় প্রাপ্তি।”
এই সব মায়ের কথায় ফুটে ওঠে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, যার পরিমাপ নেই, প্রকাশের সীমানাও নেই। জীবনের সঞ্চিত না-পাওয়ার ভেতর থেকেও সন্তানের পাওয়াগুলোতে খুঁজে নেন পরিপূর্ণতা।
মাকে ভালোবাসতে কোনো নির্দিষ্ট দিন লাগে না, কিন্তু একটি দিন যেন স্মরণ করিয়ে দেয়—'মা, তুমিই আমার পৃথিবী জুড়ে আছো।'
সেই ভালোবাসা জানাতেই আজ মাকে অভিবাদন।
আঁখি