ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

কঠিন হচ্ছে যুক্তরাজ্যের ভিসা নীতি, বৈধ অভিবাসনও এবার টার্গেটে!

প্রকাশিত: ০৭:৩২, ১২ মে ২০২৫

কঠিন হচ্ছে যুক্তরাজ্যের ভিসা নীতি, বৈধ অভিবাসনও এবার টার্গেটে!

যুক্তরাজ্যে বৈধ পথে আসা অভিবাসীর সংখ্যা কমাতে এবার কঠোর হচ্ছে ব্রিটিশ সরকার। নতুন একটি ইমিগ্রেশন হোয়াইট পেপারে প্রস্তাব করা হয়েছে, উচ্চশিক্ষিত দক্ষ কর্মীদের ভিসা পাওয়ার শর্ত আরও কঠোর করা হবে, আর কম দক্ষতার কাজের ভিসা সীমিত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার দেশজুড়ে অভিবাসন নিয়ে বেড়ে ওঠা ক্ষোভ ও রিফর্ম ইউকে পার্টির জনপ্রিয়তা মোকাবিলায় এ উদ্যোগ নিচ্ছেন।

গত গ্রীষ্মে লেবার সরকার ক্ষমতায় আসার পর অভিবাসন ইস্যুতে প্রতিবাদ দেখা দেয়, যা পরে ডানপন্থীদের সহিংসতায় রূপ নেয়। এরপর থেকেই জনমত সামলাতে কৌশল পাল্টেছে সরকার। এবার অভিবাসন ব্যবস্থার সঙ্গে দেশীয় প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নকে যুক্ত করতে চায় তারা।

হোম অফিস জানিয়েছে, একটি বিশেষ দল খতিয়ে দেখবে, কোন কোন খাত বিদেশি শ্রমিকের ওপর অতিরিক্তভাবে নির্ভর করছে। খুব নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে, শ্রমঘাটতির প্রমাণ এবং দেশীয় কর্মী নিয়োগের প্রতিশ্রুতি থাকলেই কম দক্ষতার সাময়িক ভিসা দেওয়া হবে। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েভেট কুপার বলেন, “এটা অভিবাসন ব্যবস্থায় মৌলিক পরিবর্তনের সূচনা। আমরা চাই যুক্তরাজ্যের দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার সঙ্গেই অভিবাসন নীতি মিলুক।” এই পরিবর্তনের ফলে আগামী বছরে ৫০ হাজার কম দক্ষ ভিসা কমে যাবে বলেই আশা করা হচ্ছে।

বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে কেয়ার সেক্টরের ওপর। কেয়ার ওয়ার্ক ভিসার মেয়াদ বাড়ানো যাবে, তবে নিয়োগদাতাদের বিদেশ থেকে নতুন কর্মী নেওয়ার অনুমতি আর থাকবে না। অথচ এই খাতে বহু প্রতিষ্ঠান বিদেশি কর্মীর ওপর নির্ভরশীল। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে পরিচর্যা খাতে বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে।

২০২০ সালে বরিস জনসনের সরকার দক্ষ কর্মীদের জন্য যে ভিসা প্রোগ্রাম চালু করেছিল, তার পর থেকে ভিসার সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে। যদিও এতে বিভিন্ন শিল্পে শ্রমের ঘাটতি কিছুটা মেটানো সম্ভব হয়, তবুও অভিবাসনের হার এখনো ঐতিহাসিকভাবে অনেক উঁচুতে। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরে যুক্তরাজ্যে নিট অভিবাসন পৌঁছেছে ৯ লাখ ৬ হাজারে। ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে স্থায়ীভাবে বসবাসের সংখ্যা বেড়েছে ৮০ শতাংশ, আর তাদের ওপর নির্ভরশীল অভিবাসীদের সংখ্যা বেড়েছে ৩৬০ শতাংশ।

তবে এই পরিবর্তনের মধ্যেও সরকারের ওপর একাংশের সমালোচনা থাকছেই। অনেকেই বলছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর প্রভাব না ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কেয়ার সেক্টরে মানবপাচার ও ঋণভিত্তিক চুক্তির কারণে বিদেশি শ্রমিকদের শোষণের অভিযোগও ক্রমে বাড়ছে।

সোমবার হোম অফিস জানাবে যুক্তরাজ্যে অবস্থানকারী যেসব বিদেশি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে, তাদের তথ্য শুধু কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের নয়, বরং অন্যান্য অপরাধীদের ক্ষেত্রেও সরকারের হাতে থাকবে। এতে করে নতুন আসা যেসব বিদেশি ইতিমধ্যেই অপরাধ করেছে, তাদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর পথ খুলে যাবে।

এই নতুন পরিকল্পনাগুলোকে পর্যাপ্ত নয় বলে সমালোচনা করেছে কনজারভেটিভ পার্টি। দলটির ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস ফিলিপ দাবি করেছেন, লেবার সরকার অভিবাসন রোধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। তিনি চাইছেন অভিবাসনের ওপর বাধ্যতামূলক সীমা আরোপ এবং অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয় থেকে মানবাধিকার আইন পুরোপুরি বাদ দেওয়া হোক।

এদিকে কুপার জানিয়েছেন, কোনো নিট অভিবাসন লক্ষ্য নির্ধারণ করবেন না তারা, কারণ পূর্ববর্তী সরকারগুলো সেই লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। তবে তিনি এটাও বলেন, “আমাদের অবশ্যই অভিবাসনের সংখ্যা কমাতে হবে এখনই।”

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/22pr7824

আফরোজা

×