ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

সিরিয়ার উপকূলজুড়ে রক্তাক্ত প্রতিশোধ, আলাওয়ি জনগোষ্ঠীর ১,৫০০ জন নিহত

প্রকাশিত: ১৭:০৯, ১ জুলাই ২০২৫

সিরিয়ার উপকূলজুড়ে রক্তাক্ত প্রতিশোধ, আলাওয়ি জনগোষ্ঠীর ১,৫০০ জন নিহত

ছবি:সংগৃহীত

মাত্র তিন দিনে সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে আলাওয়ি সম্প্রদায়ের উপর এক ভয়াবহ গণহত্যা সংঘটিত হয়। আনুমানিক ১,৪৭৯ জন আলাওয়ি নিহত, বহু লোক নিখোঁজ এবং ৪০টি স্থানে এই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। রয়টার্সের অনুসন্ধানে স্পষ্ট হয় যে, এই হামলাগুলো পরিকল্পিত ছিল এবং সরাসরি দামেস্কের নেতৃত্বাধীন একটি শৃঙ্খলের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

কেন ঘটল এই হত্যাকাণ্ড?
এই সহিংসতার সূচনা হয় যখন আসাদপন্থী প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তারা বিদ্রোহ শুরু করেন, যা একদিনের মাথায় প্রায় ২০০ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হওয়ার দাবি তোলে নতুন সরকার। এর প্রতিশোধ হিসেবে সুন্নি যোদ্ধাদের একটি জোট—যারা আগে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট ছিল, যেমন হায়াত তাহরির আল-শাম (HTS)—আলাওয়ি জনগণের উপর ব্যাপক হামলা চালায়।

মূল তথ্য সংক্ষেপে:

  • ৪০টি গণহত্যার স্থান
  • ১,৪৭৯ জন নিহত, যার মধ্যে নারী, শিশু, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীরাও ছিল
  • হামলাকারীরা আলাওয়ি পরিবারের নামের তালিকা নিয়ে গিয়েছিল
  • বাড়িঘরে আগুন, লুটপাট এবং ভয়ানক গ্রাফিতি—যেমন: "তোমরা সংখ্যালঘু ছিলে, এখন তোমরা বিরল"।

ব্যক্তিগত কাহিনি:
২৫ বছর বয়সী সুলাইমান রাশিদ সাদের হৃদয় তার শরীর থেকে কেটে বের করে বুকের উপর রেখে দেওয়া হয়। তার বাবাকে তার নিজের ফোনে কল করে সেই দৃশ্য দেখাতে ডাকা হয়। "বুকটা খোলা ছিল। হৃদয়টা বের করে তার উপর রাখা ছিল," বলেন তার পিতা।

সরকারের ভূমিকা ও প্রতিক্রিয়া:
রয়টার্সের তদন্তে দেখা গেছে, এই হামলাগুলোর পেছনে নতুন সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সাবেক HTS ইউনিটগুলোর সরাসরি ভূমিকা ছিল। টেলিগ্রাম চ্যাটে দেখা যায়, বাহিনীগুলোর সমন্বয় করছিলেন এক প্রতিরক্ষা মুখপাত্র, আবু আহদ নামে পরিচিত।

অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাআ বলেন, এই সহিংসতা জাতীয় ঐক্যকে হুমকির মুখে ফেলেছে। তিনি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন—“অপরাধীদের শাস্তি দেয়া হবে, তারা যতই শক্তিশালী হোক না কেন।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:

  • ইউরোপীয় ইউনিয়ন কেবল কিছু তুর্কি-সমর্থিত মিলিশিয়া নেতাদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে
  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনো এই হত্যাকাণ্ডের উপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি

ভবিষ্যৎ কী?
এই হত্যাকাণ্ড সিরিয়ার নতুন সরকারের উপর আস্থা ধ্বংস করেছে, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের মধ্যে। বহু আলাওয়ি পরিবার আজও ঘরে ফিরতে ভয় পাচ্ছে, শত শত মানুষ হামেইমিম বিমানঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছে। আগুনে পোড়া বাড়ি, ফাঁকা গ্রাম, এবং এক গভীর আতঙ্কের ছায়া এখন ওই অঞ্চলজুড়ে।

একটি প্রশ্ন থেকে যায়
কিভাবে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, যখন একটি সম্প্রদায়ের উপর এরকম নির্মম গণহত্যা ঘটে?

মারিয়া

×