ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

শেষেও জিতে গেল সহানুভূতি? Squid Game সিজন ৩ ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে

প্রকাশিত: ২১:৫৬, ১ জুলাই ২০২৫

শেষেও জিতে গেল সহানুভূতি? Squid Game সিজন ৩ ঘিরে  বিতর্ক তুঙ্গে

স্কুইড গেম – এমি অ্যাওয়ার্ড জয়ী জনপ্রিয় সিরিজটি – শেষ সিজন দিয়ে বিদায় জানাচ্ছে, আর এর সঙ্গে মিলিয়ন মিলিয়ন ভক্তও এক আবেগঘন বিদায় নিচ্ছেন। এই সিরিজ শুধুমাত্র নেটফ্লিক্সে রেকর্ড গড়েই থেমে থাকেনি, এটি দক্ষিণ কোরিয়ার হলিউড জয়যাত্রার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

এই কাল্পনিক সিরিজে আর্থিক সংকটে থাকা খেলোয়াড়রা বেঁচে থাকার জন্য একের পর এক কোরিয়ান শিশুদের ঐতিহ্যবাহী খেলায় অংশ নেয়। কিন্তু প্রতিটি রাউন্ডে যারা হেরে যায়, তাদেরকে হত্যা করা হয়।

২০২১ সালে মুক্তির পর থেকেই রঙিন সেট ডিজাইন ও পুঁজিবাদ ও মানবতার অন্ধকার দিক তুলে ধরা বার্তার জন্য স্কুইড গেম দর্শকদের মন কেড়েছে। আর এখন, গত শুক্রবার মুক্তিপ্রাপ্ত তৃতীয় ও শেষ সিজনের পর, দর্শকরা সেই নির্মম বাস্তবতায় ফিরে আসছেন।

তবে দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক দর্শক সিরিজটির সমাজ-অনুপ্রাণিত ব্যাকড্রপ নিয়ে গভীরভাবে ভাবছেন।

ইউটিউবে সিজন থ্রির একটি ক্লিপের নিচে এক মন্তব্যে লেখা হয়েছে:
"স্কুইড গেম ৩ যেন কোরিয়ানদের প্রকৃত অনুভূতি ও না বলা কথাগুলো তুলে ধরেছে। বাস্তব জীবনের অফিস পরিবেশও এমনই, যেখানে সবাই একে অপরকে পিষে ফেলার জন্য প্রস্তুত। এই সিরিজ বাস্তবতাকে চমৎকারভাবে ধরেছে।"

বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি

স্কুইড গেমের পটভূমি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিযোগিতামূলক ও অসম সমাজব্যবস্থা – যেখানে মানুষ এতটাই মানসিক চাপে থাকে যে সন্তান নেওয়ার ইচ্ছাও হারিয়ে ফেলে, আর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা জীবনের ‘বাঁচা-মরার’ বিষয় হিসেবে বিবেচিত।

সিরিজের বিভিন্ন চরিত্র – যেমন একজন বেতনভোগী কর্মচারী, অভিবাসী শ্রমিক বা একজন ক্রিপ্টো স্ক্যামার – দক্ষিণ কোরিয়ানদের পরিচিত চেহারার মতোই।

প্রধান চরিত্র সিওং গি-হুন একজন গাড়ি কারখানার শ্রমিক, যিনি ছাঁটাই হয়ে ধর্মঘটে যান – এই চরিত্রের পটভূমিও বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে: ২০০৯ সালে স্যাংইয়ং মোটর কারখানার শ্রমিকরা ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন, যা কোরিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শ্রমিক আন্দোলনের একটি।

একজন দর্শক লিখেছেন,
"এই নাটক হয়তো কল্পনানির্ভর, কিন্তু এটি বাস্তবের থেকেও বেশি বাস্তব মনে হয়। অনিরাপদ শ্রম, যুব বেকারত্ব, ভাঙা পরিবার – এগুলো কোনো গল্পের উপাদান নয়, বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বাস্তবতা।"

উল্লাস ও সমালোচনার দোলাচলে শেষ সিজন

গত শনিবার, সিওলের রাস্তায় বিশাল এক শোভাযাত্রার মাধ্যমে সিরিজটির শেষ সিজন উদযাপন করা হয় – যেখানে ছিল সেই বিশাল খুনি পুতুল, মুখোশধারী গার্ড এবং অন্যান্য পরিচিত প্রতীক।

দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট লি জে-মিয়ং এই জনপ্রিয় সিরিজ, বিটিএস এবং অস্কারজয়ী ‘প্যারাসাইট’–কে ব্যবহার করে ‘কে-কালচার’ রফতানিতে মনোযোগী হতে চান।

সিরিজের শেষ দৃশ্যে কেট ব্ল্যানচেটকে একটি কোরিয়ান খেলা খেলতে দেখা যায় লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি গলিতে – যা অনেকের মধ্যে সম্ভাব্য আমেরিকান স্পিনঅফের গুঞ্জন তৈরি করেছে।

নায়ক লি জং-জে বলেন,
"সিরিজটি এমনভাবে শেষ হয়েছে যে অনেক প্রশ্ন রেখে দিয়েছে। আমি চাই মানুষ এই প্রশ্নগুলো নিয়ে ভাবুক এবং নিজেকে খুঁজে পেতে চেষ্টা করুক।"

বিতর্কিত সমাপ্তি

সিরিজের শেষ দিকে, গি-হুন ‘ভিআইপি’দের ধ্বংস করতে লড়াই করে ব্যর্থ হন এবং শেষমেশ অন্য এক খেলোয়াড়ের শিশুকে বাঁচাতে আত্মত্যাগ করেন – যা দর্শকদের মাঝে তীব্র মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।

একজন সমালোচক লিখেছেন:
"চরিত্রদের অতি-সহানুভূতি অনেক সময় অস্বাভাবিক লেগেছে – যেন নিজের পরিবারকে বাদ দিয়ে অচেনাদের জন্য অতিরিক্ত দয়া দেখানো হচ্ছে।"

অন্য একজন বলেন:
"আমরা গি-হুনকে ফ্রন্টম্যান ও ভিআইপি’দের ধ্বংস করতে দেখার আশা করেছিলাম, কিন্তু এই দুনিয়ায় – গি-হুনের দুনিয়ায় – সেই আদর্শের কোনো স্থান নেই।"

স্রষ্টা হোয়াং ডং-হিউক স্বীকার করেছেন,
"প্রথম সিজনে কোনো প্রত্যাশা ছিল না, তাই চমক কাজ করেছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয় সিজনে প্রত্যাশা ছিল আকাশচুম্বী – এবং প্রত্যেক দর্শক ভিন্ন কিছু চেয়েছেন। কেউ চাইছেন আরও গেম, কেউ গভীর বার্তা, আবার কেউ চরিত্রগুলোর পরিণতিতে মনোযোগ দিয়েছেন।"

মানবতার প্রতিচ্ছবি

অন্তিম মুহূর্তে গি-হুনের আত্মত্যাগ অনেকের কাছে আশার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

চলচ্চিত্র সমালোচক জং চেওল সাং বলেন:
"নির্মমতা আর মমতার সহাবস্থানের এই দ্বৈততা-ই সমাপ্তিকে এত আবেগঘন করে তুলেছে। আমি বারবার ভাবি – সত্যিই কি সহানুভূতি কিছু বদলাতে পারে? এই প্রশ্নই আমাকে এই গল্পে বেঁধে রেখেছে। তাই আমি এই সমাপ্তিকে সুন্দর বলি।"

Jahan

×