
ঘরে বসে সারাদিন কাজ করার পর প্রিয় খাবার অর্ডার করে প্রিয় সিরিজ দেখা — নিঃসন্দেহে এটি আদর্শ একটি সন্ধ্যা বলে মনে হতে পারে। কিন্তু নিয়মিত এমন জীবনযাপন আসলে আপনার আয়ু কমাতে পারে।
এটা শুধু খাবারের পুষ্টিগুণের জন্য নয় — বরং কারণ, শক্তিশালী ও ইতিবাচক সামাজিক সম্পর্ক দীর্ঘজীবনের অন্যতম প্রধান চাবিকাঠি।
“মানুষ মূলত এক সামাজিক প্রজাতি,” বলেন ড. অমিত কুমার, ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অ্যাট অস্টিন-এর মার্কেটিং ও সাইকোলজির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর। “আমরা সবাই অন্তর্গতভাবে কোথাও না কোথাও ‘অন্তর্ভুক্ত’ হতে চাই।”
নিঃসঙ্গতার ভয়াবহ প্রভাব
সাবেক মার্কিন সার্জন জেনারেল ড. বিবেক এইচ. মার্থি ২০২৩ সালে বলেন, “সামাজিক বিচ্ছিন্নতার প্রভাব দিনে ১৫টা সিগারেট খাওয়ার সমান ক্ষতিকর — এমনকি স্থূলতা বা শারীরিক অক্রিয়তার চেয়েও বেশি।”
নিঃসঙ্গতা মানসিক চাপ, উচ্চ রক্তচাপ, দুর্বল মানসিক সামর্থ্য, এমনকি অকালে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়।
বড়দের জন্য বন্ধুত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন কেন?
অনেকের মনে থাকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয়। কারও থাকে সামাজিক উদ্বেগ। আবার অনেকের আশপাশে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ বা স্থানই নেই।
ড্যানিয়েল বায়ার্ড জ্যাকসন, ‘Women’s Relational Health Institute’-এর পরিচালক বলেন,
“সামাজিক দুর্বলতা কাটাতে ছোট ছোট ‘মাইক্রো-মোমেন্ট’ বা খণ্ডকালীন যোগাযোগের চর্চা শুরু করুন।”
যেমন:
-
দোকানে ক্যাশিয়ারের সঙ্গে কথা বলা
-
রেস্টুরেন্টে বিশেষ অনুরোধ করা (যা নাও মানা হতে পারে)
-
সেলফ-চেকআউটের বদলে কাউন্টারে গিয়ে লেনদেন করা
এগুলো ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
সময় নেই? তাহলে রুটিন বদলান
বড়সড় পরিকল্পনার চেয়ে বন্ধুর সঙ্গে একসাথে বাজার করা, জিমে যাওয়া বা লন্ড্রি ফোল্ড করার মতো দৈনন্দিন কাজ শেয়ার করুন।
ড. লরেন কুক বলেন, “বন্ধুদের সঙ্গে দৈনন্দিনতা ভাগ করাই বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখার মূল কৌশল।”
বন্ধুত্ব গড়তে চাইলে জায়গা পাল্টান, দৃষ্টিভঙ্গি বদলান
অনেকেই ‘থার্ড প্লেস’— অর্থাৎ বাড়ি বা কাজের বাইরে মিলনস্থলের অভাবের কথা বলেন। কিন্তু এসব জায়গা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কম উপস্থিতির কারণে।
জ্যাকসন বলেন, “আমরা কল্পনা করি এক কাপ কফির দোকানে অচেনা কারো সঙ্গে কথা বলে বন্ধু হয়ে যাবো — কিন্তু সেটা তো হবে না যদি আমরা প্রতিবার কেবল মোবাইলে অর্ডার দিয়ে চলে যাই।”
চেষ্টা করুন:
-
লাইব্রেরি, ফার্মার্স মার্কেট, পার্ক
-
বই ক্লাব, ভলান্টিয়ারিং
-
ক্লাসে ভর্তি হওয়া (নাচ, রান্না ইত্যাদি)
-
পুরনো বন্ধুকে হঠাৎ ফোন করা
ড. মারিসা ফ্রাঙ্কো বলেন, “আমরা প্রায়ই ভুল করে ভাবি, পুরনো বন্ধু শুনে খুশি হবে না। বাস্তবতা ভিন্ন — মানুষ সাধারণত খুশিই হয়।”
ছোট আলাপে বিরক্ত হবেন না
ছোট খুঁটিনাটি কথাবার্তাই বড় বন্ধুত্বের শুরু হতে পারে। আপনি কোথায় আছেন তার ওপর ভিত্তি করে প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করুন — যেমন জ্যাজ বারে থাকলে, “আপনার প্রিয় জ্যাজ শিল্পী কে?” প্রশ্নটি করতেই পারেন।
“শোনো ও জুড়ো” কৌশল ব্যবহার করুন। কারো গল্প শুনে নিজের অভিজ্ঞতা যোগ করুন। যেমন কেউ কস্তা রিকায় ঘুরে আসার গল্প করছে, আপনি জিজ্ঞাসা করতে পারেন, “ওখানে কী ধরনের বানর দেখেছেন?”
বন্ধুত্ব ধরে রাখার কৌশল
প্রেমে যেমন নিয়মিত যোগাযোগ জরুরি, বন্ধুত্বেও তাই। মনে রাখুন —
-
খোঁজ নিন
-
শ্রোতা হোন
-
বিচার না করে পাশে থাকুন
-
ছোট খুশি ভাগাভাগি করুন
বন্ধু খুঁজে পাওয়া কঠিন হতে পারে — কিন্তু একাকীত্বের মূল্য তার চেয়েও বেশি। তাই সময় দিন, খোলা মন রাখুন, এবং সম্পর্ক গড়তে সাহস দেখান।
Jahan