বস্তায় আদা চাষ ॥ সীতাকুণ্ডে কৃষিতে নতুন সংযোজন

বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার চাষিরা। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন কৃষক প্রথমবারের মতো উপজেলায় এভাবে এক একর আদা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। তাদের সফলতায় আগামীতে এই পদ্ধতির চাষাবাদ আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশা করছে উপজেলা কৃষি অফিস।
উপজেলা কৃষি বিভাগ ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষিসমৃদ্ধ সীতাকুণ্ড উপজেলায় এবার নতুন এক পদ্ধতিতে আদা চাষ হয়েছে। পরিত্যক্ত জায়গায় বস্তায় আদা চাষের এই পদ্ধতিতে প্রায় এক একর আদা চাষ হওয়ায় কৃষকরা লাখ লাখ টাকা বাড়তি আয় করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বস্তায় আদা চাষ বিষয়ে উপজেলার নুনাছড়া গ্রামের কৃষক আবু তাহের বলেন, কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে পরীক্ষামূলকভাবে ১০০টি জিও ব্যাগে আদা চাষ করেছেন। এ পদ্ধতিতে প্রতিবস্তায় আড়াই থেকে তিন কেজি করে আদা হবে। সেই হিসেবে একশ’ বস্তায় আদা হবে ৩০০ কেজির মতো। এ থেকে ৪৫ হাজার টাকার মতো আদা হবে। যার মধ্যে খরচ বাদ দিলেও ৩৫-৪০ হাজার টাকা লাভ হবে বলে আশা করছেন কৃষক আবু তাহের। লাভজনক হওয়ায় আগামী বছর এক হাজার বস্তায় আদা চাষ করবেন বলে জানালেন এই কৃষক। 
একইভাবে বস্তায় আদা চাষ করেছেন বাড়বকু- ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়ার কৃষক এহসান হাবীব চৌধুরী, টেরিয়াইলের কৃষক নবী। আগে ধান, শিম, টমেটো, কাঁচামরিচ, লাউ, কুমড়া, বরবটি, কাঁকরোল, করলাসহ নানান শস্য ও সবজি উৎপাদন করতেন। কিন্তু কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবার তারা পরীক্ষামূলকভাবে বস্তায় আদা চাষ করেছেন।
এই পদ্ধতির সুফল বলতে গিয়ে কৃষক নবী জানান, বাড়ির সামনে কিংবা পেছনে সবারই কিছু জায়গা পতিত অবস্থায় থাকে। যদি একটি বড় আম, জাম বা অন্য কোনো ফলের গাছ থাকে, তবে তার নিচের জায়গাটা খালিই পড়ে থাকে। সেই খালি জায়গায় আমরা বস্তায় আদা চাষ করতে পারি। আবার কোনোরকম প্রয়োজনে বস্তাগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া যায়। তাতে জায়গাটি যেমন স্থায়ীভাবে আবদ্ধ হয়ে যায় না, তেমনি অব্যবহৃত জায়গায় আদা চাষে হাজার হাজার টাকা বাড়তি আয় হবে। তারা আরও জানান, একটি বস্তায় ৭০ থেকে ৮০ গ্রাম আদার বীজ বপন করা হয়। কিন্তু এখান থেকে আড়াই-তিন কেজি পর্যন্ত আদা উৎপাদন হবে।
পরিত্যক্ত জমিতে নানারকমের সবজি ও ফল চাষে কৃষকদের ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করছে সীতাকু- উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা। আর তাদের তৎপরতায় ও সহযোগিতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাড়ির উঠোন কিংবা পেছনের পরিত্যক্ত জমিতে শুরু হয়েছে নানারকমের চাষাবাদ। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘বস্তায় আদা চাষ’। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ হাবিবুল্লাহ বলেন, এ বছর সীতাকু-ে ১২ একর জমিতে আদার চাষ হয়েছে। তার মধ্যে বস্তায় আদা চাষ হয়েছে এক একর জমিতে।

ছায়াযুক্ত পরিত্যক্ত জমিগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য কৃষকদের বস্তায় আদা চাষের পরামর্শ প্রদান করেছি আমরা। এতে আবু তাহের, নবী, এহসানসহ কৃষকরা বস্তায় এক একর জমি পরিমাণ আদা চাষ করেছেন। সবাই সফল হয়ে বাড়তি আয় করায় আগামীতে এ চাষ আরও বাড়বে বলে আমাদের বিশ্বাস। তিনি আরও জানান, বস্তায় আদা চাষ করলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না। একবার আদা তুলে ফেললে সেই বস্তায় কোনো সার দেওয়া ছাড়া আবার আদা চাষ করা যায়। এতে খরচ একেবারে কমে যায়।