ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

ভারতের ওপর বিশ্বাস নেই, তবু ফিরছেন তারা,মজুদ থাকছে বাঙ্কারে!

প্রকাশিত: ০৭:৫১, ১২ মে ২০২৫

ভারতের ওপর বিশ্বাস নেই, তবু ফিরছেন তারা,মজুদ থাকছে বাঙ্কারে!

ছবি: আজাদ কাশ্মীর সীমান্তে আতঙ্কের ছায়ায় ঘরে ফেরা হাজারো পরিবার

চার দিন ধরে সীমান্তে তীব্র গোলাগুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন ৬০ জনের বেশি মানুষ। শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এলেও আজাদ জম্মু ও কাশ্মীর (এজেকেএ)-এর গ্রামগুলোতে রয়ে গেছে উদ্বেগের ছায়া। রোববার কিছুটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মানুষ ফিরেছেন নিজেদের ঘরে, তবে বাঙ্কারগুলো রেখেছেন মজুদ করে ,যেন আবার হঠাৎ কিছু ঘটে গেলেও প্রাণটা বাঁচানো যায়।

নিলম নদীর ধারে অবস্থিত চাকোঠি গ্রামের বাসিন্দা কালা খানের বিশ্বাস নেই ভারতের উপর। তাঁর কথায়, “আমার ভারতের ওপর কোনো আস্থা নেই। ওরা আবারও হামলা করবে, আমি নিশ্চিত। এই এলাকায় বাঁচতে হলে ঘরের পাশে নিরাপদ বাঙ্কার থাকা জরুরি।”

কালা খানের আট সদস্যের পরিবার গত কয়েকদিন ধরে দিন-রাত পার করেছে ২০ ইঞ্চি পুরু কংক্রিট ছাদের নিচে নির্মিত দুটি বাঙ্কারে। তিনি বলেন, “যখনই ভারতীয় গোলাবর্ষণ শুরু হয়েছে, আমি সঙ্গে সঙ্গে পরিবারকে বাঙ্কারে নিয়ে গেছি। সেখানে মজুদ করে রেখেছি চৌকি, চাল-আটা, শুকনো খাবার, এমনকি কিছু মূল্যবান জিনিসও।”

স্থানীয় প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানান, সীমান্ত এলাকায় এখন পর্যন্ত এক হাজারের বেশি বাঙ্কার নির্মাণ হয়েছে; যার এক-তৃতীয়াংশ তৈরি করেছে সরকার নিজে থেকেই, বাকি অংশ জনগণ নিজেরা।

শান্তি নেই, নিশ্চয়তা নেই
পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে কাশ্মীর ইস্যুতে বহুবার যুদ্ধ হয়েছে। ভারতীয় অংশে স্বাধীনতাকামীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘর্ষ এ উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু। দিল্লির দাবি, পাকিস্তান এই বিদ্রোহীদের মদত দেয় এপ্রিল মাসে পর্যটকদের ওপর হামলার পর থেকেই নতুন করে উত্তপ্ত হয় পরিস্থিতি। পাকিস্তান তা অস্বীকার করে নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

শনিবার গভীর রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত সীমিত গোলাগুলির খবর এলেও আতঙ্কের কারণে অনেক পরিবার ফিরতে পারেনি ঘরে।চাকোঠির ৫৩ বছর বয়সী সরকারি কর্মচারী মোহাম্মদ মুনীর বলেন, “পাঁচ দশক ধরে সীমান্তে বাস করছি। যুদ্ধবিরতির ঘোষণা হয়, কিন্তু কয়েকদিন পরেই আবার গুলি শুরু হয়। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় দরিদ্ররা। আমরা জানি, এই যুদ্ধবিরতিও স্থায়ী হবে না।”

২৫ বছর বয়সী নির্মাণশ্রমিক কাশিফ মিনহাস জানান, গোলাগুলির সময় স্ত্রী ও তিন সন্তানকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বহু কিলোমিটার হেঁটে গাড়ির খোঁজে বের হতে হয়েছিল তাঁকে। তাঁর ভাষায়, “ভারত-পাকিস্তানের এই যুদ্ধবিরতি শুধু কাগজে-কলমে। যে কোনো সময় আবারও গোলাগুলি শুরু হতে পারে। শুরু হলে আবারও পরিবারকে নিয়ে পালাতে হবে।”

আতঙ্ক দুই পাশেই
আজাদ কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে একটি মসজিদে তিনজন নিহত হওয়ার পর, রোববার সকাল থেকে নতুন কোনো গোলাগুলির খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন সেখানকার এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা।

দুই দেশের চার দিনব্যাপী সংঘর্ষ বহু বছর পর প্রথমবারের মতো রাজধানী শহরগুলোকেও নাড়িয়ে দিয়েছে — প্রাণহানির বেশিরভাগই ঘটেছে পাকিস্তানে, এবং অধিকাংশই ছিলেন সাধারণ মানুষ।

এদিকে, ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরেও ধীরে ধীরে ফিরতে শুরু করেছেন হাজার হাজার বাসিন্দা , কিন্তু তাদের মুখেও সেই একই আশঙ্কা।
চাকোঠির ৫৬ বছর বয়সী ট্যাক্সি চালক মোহাম্মদ আখলাক বলেন, “এই যুদ্ধবিরতি কোনো স্থায়ী শান্তির গ্যারান্টি নয়। আমি খুব সন্দেহের চোখে দেখছি একে। কারণ দুই দেশের শত্রুতা যেটা থেকে জন্ম নিয়েছে , সেটা তো এখনো মিটেইনি। সেই ইস্যুটা কাশ্মীর।”

 

 

সূত্র:Geo News

আফরোজা

×