
ছবি: সংগৃহীত
তিন দিনের সীমান্ত লড়াইয়ে ভারতের ওপর চাপ বাড়িয়ে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে পাকিস্তান। সেই মুহূর্তেই প্রতিবেশী দেশটিকে আরও কোণঠাসা করতে বড়সড় কৌশলগত পদক্ষেপ নিল ইসলামাবাদ। সম্প্রতি কাবুলে চীন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের শীর্ষ নেতাদের এক গোপন ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে নেওয়া হয়েছে এক অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত। বৈঠকে ঠিক হয়েছে, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (CPEC) সম্প্রসারিত হয়ে আফগানিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।
এই ত্রিপক্ষীয় হাত মিলিয়ে এক নতুন ভূরাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করতে চলেছে, যার প্রেক্ষিতে একাধিক কূটনৈতিক মহল মনে করছে — বহু যোজন পিছিয়ে যেতে পারে ভারত। ভারতের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব খর্ব করাই যে এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য, সে কথাই উঠে এসেছে পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন-এর এক চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদনে।
গোপন ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকী, চীনের বিশেষ দূত ইউ জিয়াওং এবং পাকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি মোহাম্মদ সাদিক। সূত্র অনুযায়ী, বৈঠকে একমত হওয়া হয়েছে যে আফগানিস্তানে ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে সুকৌশলে নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।
এই নতুন কৌশলগত সমীকরণে উত্তেজনা ছড়িয়েছে আরও একটি বিস্ফোরক অভিযোগকে কেন্দ্র করে। পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র আহমদ শরীফ চৌধুরী দাবি করেছেন, ভারতের ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র আফগান ভূখণ্ডে আঘাত হেনেছে। যদিও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তালেবান-নেতৃত্বাধীন আফগান সরকার উভয়ই এই অভিযোগ স্পষ্ট ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছে। আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, দেশে এমন কোনও হামলার ঘটনা ঘটেনি এবং আফগানিস্তান এখন নিরাপদ ও স্থিতিশীল।
অন্যদিকে, গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার তদন্তে পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়ার ক্ষেত্রে তালেবান নেতৃত্বের নীরব সমর্থন ভারতের প্রতি এক ধরনের অবিশ্বাসই প্রকাশ করছে বলে মত আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের।
বৈঠকের পর, চীন ও পাকিস্তান স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা আফগানিস্তানের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে বদ্ধপরিকর। এই প্রক্রিয়ায় পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাব কার্যত উপেক্ষিত থাকবে। এরই অংশ হিসেবে চীন ও পাকিস্তানের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা আফগান বাণিজ্যমন্ত্রী আজিজির সঙ্গেও এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশ নেন, যা আঞ্চলিক বাণিজ্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধির দিকেও ইঙ্গিত দেয়।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের মে মাসে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে আফগানিস্তানে সিপিইসি সম্প্রসারণের একটি প্রাথমিক সমঝোতা হয়। কাবুলের এই গোপন বৈঠক সেই সমঝোতাকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে চূড়ান্ত সম্মতির রূপ দিয়েছে — যা নিঃসন্দেহে ভারতের কূটনৈতিক মহলে নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=GQXOskzPoZ4
এম.কে.