
ছবিঃ হিন্দুস্তান টাইমস
পাকিস্তান থেকে পরিচালিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর মাধ্যমে একটি নতুন কৌশলগত এবং রাজনৈতিক ‘নতুন মানদণ্ড’ (new normal) প্রতিষ্ঠা করেছে। এই অপারেশনের মাধ্যমে নয়টি স্থানে সন্ত্রাসী ঘাঁটি লক্ষ্য করে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা কেবলমাত্র সামরিক সাফল্য অর্জন করেনি, বরং মনস্তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক দিক থেকেও বার্তা দিয়েছে যে, সীমান্ত পারাপার সন্ত্রাসের মাশুল এবার পাকিস্তানকেই দিতে হবে।
সরকার-ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানায়, ৭ মে মাঝরাতে প্রথম হামলার ১৫ মিনিটের মধ্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ডিজিএমও-কে জানানো হয়, হামলা কেবল সন্ত্রাসী কাঠামোর ওপর এবং ভারত আলোচনায় প্রস্তুত। এর পেছনে কারণ ছিল ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন সাধারণ মানুষের মৃত্যু।
এরপরও পাকিস্তান পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না আসায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নির্দেশ দেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী যদি পাল্টা আক্রমণ করে, তবে জবাব হবে “আরও বড় ও শক্তিশালী”। মোদী বলেন, “ওদিক থেকে গুলি চললে, এদিক থেকে গোলা চলবে।”
৭ মে ভারতের এই হামলায় মূল লক্ষ্য ছিল জইশ-ই-মোহাম্মদের বাহাওয়ালপুর ঘাঁটি, লস্কর-ই-তৈয়বার মুরিদকে বেস, ও হরকত-উল-মুজাহিদিন এবং হরকত-উল-আনসারের মুজাফফরাবাদ ঘাঁটি — যেগুলো পাকিস্তানি সেনা ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রত্যক্ষ মদদপুষ্ট বলে জানা যায়। হামলায় রাহিম ইয়ার খান বিমানঘাঁটির রানওয়ে ধ্বংস হয়ে যায়।
৮-১০ মে পাকিস্তান তিন দফায় ভারতীয় সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালানোর চেষ্টা করে। সর্বশেষ ১০ মে পাকিস্তান ২৬টি স্থানে ভারী অস্ত্রে হামলা চালায়, যার প্রেক্ষিতে ভারত জবাবে আটটি মূল পাকিস্তানি বিমানঘাঁটিতে নির্ভুল অস্ত্রে পাল্টা হামলা চালায়।
ভারতীয় পক্ষ জানায়, অপারেশন সিন্দুরের মাধ্যমে পাকিস্তানকে বোঝানো হয়েছে, “এই যুদ্ধ তাদের পক্ষে লাভজনক হবে না”। ভারতীয় প্রযুক্তি ও নির্ভুল অস্ত্র ব্যবহারে সামরিক ভারসাম্য স্পষ্টভাবে ভারতের পক্ষে চলে গেছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ভারতের এই পাল্টা পদক্ষেপ শুধুমাত্র জবাবি হামলা নয়, বরং এটি মনস্তাত্ত্বিক বার্তাও। এক সূত্রের ভাষায়, “সন্ত্রাসীদের জন্য আর কোনো জায়গা নিরাপদ নয়।” এমনকি মুরিদকে হামলার পর নিহত লস্করের সদস্যদের জানাজায় সেনা কর্মকর্তা ও লাহোরের উপকমিশনার উপস্থিত ছিলেন — যা পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদ ও রাষ্ট্রের জটিল সম্পর্ককে উন্মোচিত করে।
চূড়ান্তভাবে, ৪ দিনের সংঘর্ষ শেষে দুই দেশের ডিজিএমও শান্তি আলোচনা শুরু করে। তবে ভারতীয় সূত্রগুলো বলছে, যুদ্ধবিরতির এই সিদ্ধান্ত ভারত নিজে নিয়েছে, কারও চাপে নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সন্ধ্যা ৫:৩০টায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন, যা ভারত কিছুক্ষণ পর নিশ্চিত করে।
একটি সূত্র মন্তব্য করে বলেন, “পাকিস্তান থেমেছে, কারণ আকাশ থেকে জিনিস পড়ছিল এবং ভয়ঙ্কর শব্দ করছিল — কারণ কেউ ইংরেজিতে ফোন করে থামতে বলেনি।”
এই অপারেশনকে অনেকে বলছেন ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মোড়, যেখানে শুধু সীমান্ত পেরিয়ে নয়, বরং পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডেই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইকে বাস্তব করে তোলা হয়েছে।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
মুমু