
তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে গ্রাম-শহর
সকালের সূর্যের মিষ্টি আলো গেল ক’দিন ধরেই হারিয়ে গেছে। ভোরের সঙ্গেই সূর্যি কিরণ যেন আগুন গোলার মতো বিকিরণ ছড়াচ্ছে। রোদ আর গরম বাতাসের ঝলকায় ধরনী হচ্ছে উষ্ণ। যার তীব্রতায় পুড়ছে গ্রাম-শহর-নগর। গেল তিনদিন ধরেই আগুনের মতো বাতাস আর ভ্যাপসা গরমে পুড়ছে দেশ। তবে স্বস্তির বিষয় হচ্ছে রবিবার দেশের উত্তর-পূর্বাংশের জেলাগুলোতে বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
এতে আজ সোমবার থেকেই তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে। রবিবার রাজধানী ঢাকায় তীব্র গরমে জনজীবনে ত্রাহি অবস্থা দেখা গেছে। তবে সন্ধ্যা নাগাদ হঠাৎ করেই আকাশ ঢেকে যায় মেঘে। শুরু হয়েছে মৃদুমন্দ বাতাস। এদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি। জানা যায়, দুপুরের পর জামালপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ জেলায় বৃষ্টি হয়েছে। ময়মনসিংহে ঘূর্ণিঝড়ে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হচ্ছে শক্তিশালী নতুন ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’। এটি ২৪ থেকে ২৬ মের মধ্যে খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলে তা-ব চালাতে পারে। একই সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলও তছনছ করে দিতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। রবিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এমন তথ্য দেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ মোস্তফা কামাল পলাশ।
পোস্টে তিনি লিখেন, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টির নাম দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। এটি ২৪ থেকে ২৬ মের মধ্যে স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। সম্ভাব্য আঘাতের এলাকা ভারতের ওড়িশা উপকূল থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত। তবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের খুলনা বিভাগ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূল। এতে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম-খুলনার প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ।
তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহিনুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে কোনো ধরনের লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। একই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেন তিনি।
পরে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ^বিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু পিএইডডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জনকণ্ঠকে বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তর চলতি মাসের শুরুতেই দু-তিনটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবর কথা জানায় তাদের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে। কিন্তু বর্ষার আগে আমরা এখনো কোনো লঘুচাপ বা নি¤œচাপ দেখতে পায়নি। কিন্তু গত তিন-পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান হিসাব করলে দেখা যায়, সিত্রাং, রেমাল ও আম্পান মে মাসের ২০-৩০ তারিখের মধ্যেই সংঘটিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি এখনো বলিনি বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। তবে ইউরোপিয়ান ও আমেরিকার মডেল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে এটির সম্ভাবনা অন্তত ৭০ শতাংশ। কারণ হিসেবে জানান, লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা ২৩-২৪ মে। এরপর ২৫-২৬ তারিখে এটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এরপর ২৭ মে অমাবস্যা। এদিন ঘূর্ণিঝড় শক্তির ল্যান্ড ফল হতে পারে। আগে আগে পূর্বাভাস দেওয়ার কারণ হিসেবে মানুষকে সতর্ক ও সচেতন করার কথাও জানান তিনি।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাসে জানিয়েছে, সোমবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/বৃষ্টি/ বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ১-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে। এই সময়ে চলমান তাপপ্রবাহ কিছু কিছু জায়গায় প্রশমিত হতে পারে।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল গেল কয়েক বছর ধরেই গরমের হটস্পট। যে কারণে চুয়াডাঙ্গা, যশোর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া জেলায় গরমের তীব্রতা যেমন বেশি। তেমনি শীতের সময়ও এই অঞ্চলে শীতের আধিক্যও বেশি দেখা যায়। গত চারদিন ধরে সারাদেশের অধিকাংশ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। চুয়াডাঙ্গার নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, গেল তিন দিন ধরেই জেলার তাপমাত্রা ৪০-৪২ ডিগ্রির ঘরে অবস্থার করছে।
কিন্তু দীর্ঘ গরমে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। অনেকেই ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। গরমের কারণে রোগব্যাধিও বাড়ছে। রবিবার রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি। যা এই মৌসুমের সর্বোচ্চ। এতে খেটে খাওয়া মানুষ ও শ্রমজীবীরা কষ্টে দিন পার করছেন।