
ছবি : প্রতীকী
অভিভাবকত্ব একটি কঠিন কাজ। বাবা-মার সামান্য ভুল লালন-পালনের ফলে শিশুর ওপর যে প্রভাব ফেলে তা বোঝা সহজ নয় যতক্ষণ না এর দৃশ্যমান লক্ষণগুলো শিশুর ব্যক্তিত্বের ওপর প্রতিফলিত হয়।
সব মা-বাবাই চান তাদের সন্তান সুশিক্ষার সঙ্গে বড় হোক। এজন্যই মাঝে মাঝে তারা বকাবকি করা বা মার দেওয়ার আশ্রয় নেন। তবে সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে সব মা-বাবাই সন্তানকে এমন কিছু কথা বলে বসেন, যা তাদের মনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। পরবর্তীকালে সেই সব কথা তারা ভুলতেও পারে না। একটি কঠিন জীবনের প্রতিকূলতা পিতা-মাতা এবং সন্তান উভয়ের ওপর প্রভাব ফেলে।
তাই মা-বাবা হিসাবে আপনি কেবল আপনার সন্তানকে সর্বোত্তম জিনিস শেখাবেন না, তাকে বিশ্বের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর শক্তিও দিতে হবে। অভিভাবকত্ব মানে প্রতিটি প্রতিকূলতাকে সাহসী করার জন্য সন্তানের মধ্যে প্রাকৃতিক ঢাল তৈরি করে দেওয়া। তাই শিশু অবস্থায় তাদের লালন - পালনে বিশেষ সতর্ক হতে হয় বাবা- মাকে ।
বাচ্চাদের দুঃখকে ঠাট্টা করবেন না
মনোবিজ্ঞানীদের পরামর্শ, অভিভাবকদের উচিত নয় নিজের সন্তানকে কখনও হেয় করা বা ঠাট্টা করা। বাচ্চাদের কষ্টকে ছোট করে দেখবেন না। আবার তাদের অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করাও উচিত নয়। সন্তানের ওপর তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও মা-বাবার ত্যাগ করা উচিত। সামান্য খাবার-দাবারের ক্ষেত্রেও তাদের পছন্দের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করবেন না।
সব সময় সমালোচনামূলক বা নেতিবাচক হবেন না
যদিও মা-বাবার কাজ সন্তানের প্রতি সুরক্ষামূলক হওয়া এবং তাদের অধিকার ও অন্যায় সম্পর্কে শেখানো, তবে অতিরিক্ত সমালোচনার নিজস্ব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাদের জীবনে অত্যধিক হস্তক্ষেপ এবং অতিরিক্ত প্রশ্রয় দিয়ে আপনি তাদের সৃজনশীল স্থান সংকুচিত করে দেন। যদিও জ্ঞানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার গুরুত্ব উড়িয়ে দেওয়া যায় না, তবে শিশুরা তাদের ভুল থেকে অনেক ভালো শিখতে পারে।
সবসময় বিচারক হবেন না
আপনার বিবেচনার ভিত্তিতে সন্তানের আবেগকে বাতিল করবেন না। আপনি একটি শিশুর চেয়ে অনেক বেশি পার্থিব জিনিস দেখেছেন এবং অনুভব করেছেন। এমন সময় হতে পারে যখন সন্তানের আচরণ বোঝা আপনার পক্ষে কঠিন হবে এবং তা বোঝার পরিবর্তে পুরোপুরি বাদ দিতে বলবেন। এভাবে আপনার এবং সন্তানের মধ্যে সঠিক যোগাযোগের পথ বন্ধ হয়ে যাবে।
সন্তানকে ভয় দেখাবেন না
তুচ্ছ বিষয়ে আপনার সন্তানকে ভয় দেখাবেন না। এটি আপনার সন্তানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং আপনাদের দুজনের মধ্যে যোগাযোগ কমিয়ে দিতে পারে। শিশুকে ভয় দেখালে তা শিশুটিকে মা-বাবার প্রতি বিদ্বেষী করে তুলবে। শিশুটি পরিবারের বাইরে সাহচর্য খুঁজবে এবং ভুল লোকেদের সঙ্গে মিশে বিপথগামী হতে পারে!
বাচ্চাদের মিথ্যে বলবেন না
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, ‘বাচ্চাদের কখনো এমন কোনো মিথ্যে কথা বলবেন না, যার সত্যতা ভবিষ্যতে তারা জেনে যেতে পারে।’ এর ফলে বাচ্চাদের মনে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। বাচ্চাদের ঘন ঘন মিথ্যে বললে তারা মা-বাবার প্রতি বিশ্বাস হারাতে শুরু করে। এর ফলে তাদের পুরো জীবন প্রভাবিত হয়।
ভাই-বোনের সঙ্গে তুলনা করবেন না
একাধিক সন্তান থাকলে একে অপরের সঙ্গে তুলনা করেন প্রায় সব মা-বাবা। বাচ্চা কোনো কাজ করতে না পারলে বা ব্যর্থ হলে তাকে ছোট করবেন না। বাচ্চার সামনে আত্মীয়দের কাছে তাদের সম্পর্কে খারাপ কথা বলবেন না। আবার ভাই-বোনের মধ্যে তুলনার প্রবণতাও ত্যাগ করুন।
কটু কথা শুনাবেন না
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, বাচ্চাদের কখনও বলবেন না যে আপনি তাকে ভালোবাসেন না বা তাকে জন্ম দিয়ে ভুল করেছেন। বাচ্চাদের মনে এমন কোনও নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা এলে তারা পরিবারের সদস্যদের থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করে।
অতিরিক্ত আদর না করা
অনেক বাব-মা সন্তানদের অতিরিক্ত আদর করতে গিয়ে তাদেরকে ভুল পথে ঠেলে দেয়। অতিরিক্ত আদর আর ছোট বড় সব আবদার মেটাতে গিয়ে বাবা-মারা তাদের সন্তানদের জেদি বানিয়ে ফেলেন। ফলে তারা সৌজন্য আচরণ, জীবনে সেক্রিফাইস ও নিজেকে মানিয়ে নেবার ক্ষমতা হারাতে থাকে।
সা/ই