ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

২০২৫ সালের বিশ্বে সবচেয়ে নিরাপদ ১০টি দেশ

প্রকাশিত: ০০:৫৩, ১২ মে ২০২৫; আপডেট: ০১:০৫, ১২ মে ২০২৫

২০২৫ সালের বিশ্বে সবচেয়ে নিরাপদ ১০টি দেশ

ছবিঃ সংগৃহীত

একটি এমন পৃথিবীতে, যেখানে প্রতিদিনের খবর শোনা যেন কোনো সর্বনাশা সিনেমার ট্রেইলার দেখার মতো, ঠিক সেখানেই কিছু দেশ রয়েছে যেখানে মানুষ রাতে দরজা না লাগিয়েও ঘুমায়, মধ্যরাতে নির্ভয়ে হাঁটে, আর পুলিশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয় গাছ থেকে বিড়াল নামানো।

স্বাগতম ২০২৫ সালের ‘গ্লোবাল সেফটি এলিট’-এ—যে দেশগুলোতে অপরাধের হার এতটাই কম যে একাউন্ট্যান্টরাও রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠেন তা বিশ্লেষণ করতে। যখন বাকিরা আরও একটি তালা লাগায় কিংবা ‘নেবারহুড ওয়াচ’ অ্যাপ সাবস্ক্রাইব করে, তখন এই দেশগুলোর নাগরিকরা ব্যস্ত থাকেন এ চিন্তায়—তাদের স্বাস্থ্যসেবা সিস্টেমটা হয়তো একটু বেশি ভালো হয়ে যাচ্ছে না তো!

গ্লোবাল পিস ইনডেক্স কী?

গ্লোবাল পিস ইনডেক্স (GPI) ২০২৪ সালে ১৬৩টি দেশের ওপর জরিপ পরিচালনা করেছে, যা বিশ্ব জনসংখ্যার ৯৯.৭% কভার করে। এতে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে ২৩টি গুণগত ও পরিমাণগত সূচক—যেমন: অপরাধের অনুভূত মাত্রা, সামরিক ব্যয়, অভ্যন্তরীণ সংঘাত এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা।

বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ দেশগুলোতে রয়েছে কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য: উচ্চ সম্পদের মাত্রা, শক্তিশালী সমাজকল্যাণ ব্যবস্থা, উন্নত শিক্ষা, কার্যকর বিচারব্যবস্থা, এবং নাগরিকদের সঙ্গে সরকারের সুসম্পর্ক। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের মধ্যে রয়েছে—দারিদ্র্যের হার কম, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি সংস্কৃতিগত শ্রদ্ধা, কঠোর অস্ত্রনিয়ন্ত্রণ আইন, ন্যূনতম অসন্তোষ, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, এবং শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা।

এবার দেখে নেওয়া যাক, ২০২৫ সালের বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ ১০টি দেশ:

১. আইসল্যান্ড — পিস স্কোর: ১.১১২

২০০৮ সাল থেকে নিরবিচারে শীর্ষে থাকা এই নর্ডিক দ্বীপদেশটিতে অপরাধের হার অত্যন্ত কম। তারা কোনো সামরিক বাহিনীই রাখে না, যা তাদের শান্তির দর্শনের অন্যতম প্রমাণ।

  • ব্যক্তিগত নিরাপত্তা: খুবই নিরাপদ, তবে প্রাথমিক সতর্কতা রাখা প্রয়োজন।

  • জনস্বাস্থ্য: গড় আয়ু ৮২.৬ বছর, স্বাস্থ্যসেবা করের মাধ্যমে পরিচালিত।

  • পরিবেশ: বায়ুর মান চমৎকার, প্রাকৃতিক বিপর্যয় তেমন ক্ষতিকর নয়।

২. আয়ারল্যান্ড — পিস স্কোর: ১.৩০৩

২০২৩ সালে তৃতীয় অবস্থানে থাকা দেশটি এবার দ্বিতীয় হয়েছে। Garda Síochána নামক জাতীয় পুলিশ বাহিনী দেশজুড়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

  • ব্যক্তিগত নিরাপত্তা: সাম্প্রতিক চুরির হার কিছুটা বেড়েছে।

  • জনস্বাস্থ্য: ২০২৫ সালে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ €২৫.৮ বিলিয়ন।

  • পরিবেশ: বায়ুর মান উন্নত, ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামানোর পরিকল্পনা।

৩. অস্ট্রিয়া — পিস স্কোর: ১.৩১৩

GDP-র মাত্র ৪.২৩% সহিংসতা খাতে ব্যয় হওয়ায় অস্ট্রিয়ার শান্তির অবস্থা অন্যতম শ্রেষ্ঠ।

  • ব্যক্তিগত নিরাপত্তা: মারাত্মক অপরাধ কম, ছোটখাটো অপরাধ বেড়েছে।

  • জনস্বাস্থ্য: সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, কর ও স্বাস্থ্যবীমার মাধ্যমে অর্থায়ন।

  • পরিবেশ: গত তিন দশকে নির্গমন ৫% বেড়েছে, তবে ২০৪০ সালে কার্বন নিউট্রাল হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

৪. নিউজিল্যান্ড — পিস স্কোর: ১.৩২৩

এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশটি।

  • ব্যক্তিগত নিরাপত্তা: পারিবারিক ও প্রবাসীদের জন্য অত্যন্ত নিরাপদ।

  • জনস্বাস্থ্য: প্রায় সবাই বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পায়, বাজেট NZ$১৬.৬৮ বিলিয়ন।

  • পরিবেশ: উপকূলীয় প্লাবন বাড়ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে নিঃসরণ শূন্যের পরিকল্পনা।

৫. সিঙ্গাপুর — পিস স্কোর: ১.৩৩৯

২০২৩ সালে ষষ্ঠ ছিল, এবার পাঁচে উঠে এসেছে।

  • ব্যক্তিগত নিরাপত্তা: অপরাধের হার খুব কম, আইন কঠোর।

  • জনস্বাস্থ্য: উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা, পূর্ব অনুমতি ছাড়া ওষুধ আনা নিষিদ্ধ।

  • পরিবেশ: মৌসুমি ধোঁয়াশা ও বৃষ্টির ঝুঁকি থাকে।

৬. সুইজারল্যান্ড — পিস স্কোর: ১.৩৫৭

নিরপেক্ষতা রক্ষায় ১৮১৫ সাল থেকেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এই দেশ।

  • ব্যক্তিগত নিরাপত্তা: অত্যন্ত কম সহিংসতা, পুলিশ দৃশ্যমান ও সম্মানজনক।

  • জনস্বাস্থ্য: গড় আয়ু ৮৪.৩ বছর, বিশ্বসেরা স্বাস্থ্যসেবা।

  • পরিবেশ: বর্জ্য পুনর্ব্যবহার ৭০%-এরও বেশি, কার্বন শূন্য লক্ষ্য ২০৫০।

৭. পর্তুগাল — পিস স্কোর: ১.৩৭৫

অর্থনৈতিক সংস্কারের পর এখন পশ্চিম ইউরোপের শান্তির প্রতীক।

  • ব্যক্তিগত নিরাপত্তা: অপরাধের হার ধারাবাহিকভাবে কমছে।

  • জনস্বাস্থ্য: সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, মাদকনীতি উদার ও কার্যকর।

  • পরিবেশ: আগুন ও উপকূল ক্ষয় চ্যালেঞ্জ, বায়ুমান উন্নত।

৮. ডেনমার্ক — পিস স্কোর: ১.৩৮৩

শান্তি ও সুখের সামঞ্জস্যে বিশ্বের প্রথম সারির দেশ।

  • ব্যক্তিগত নিরাপত্তা: অপরাধ প্রায় নেই বললেই চলে।

  • জনস্বাস্থ্য: অপেক্ষাকৃত কম অপেক্ষার সময়, উন্নত সেবা।

  • পরিবেশ: কার্বন নিঃসরণ কমাতে ২০৩০ সালের লক্ষ্য নির্ধারণ।

৯. স্লোভেনিয়া — পিস স্কোর: ১.৩৯৬

১৯৯১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর দ্রুত উন্নতি করেছে।

  • ব্যক্তিগত নিরাপত্তা: অপরাধ প্রায় নেই, পুলিশের প্রতি আস্থা রয়েছে।

  • জনস্বাস্থ্য: সাশ্রয়ী ও সার্বজনীন সেবা, গড় আয়ু ৮১.৯ বছর।

  • পরিবেশ: ৬০% বনাঞ্চল, পরিবেশ রক্ষায় কঠোর আইন।

১০. মালয়েশিয়া — পিস স্কোর: ১.৪০৩

২০২৩ সালের ১৯তম স্থান থেকে এবার শীর্ষ দশে উঠে এসেছে।

  • ব্যক্তিগত নিরাপত্তা: সহিংস অপরাধ কমেছে ৪০% পর্যন্ত।

  • জনস্বাস্থ্য: দুই স্তরের ব্যবস্থা, ৪% GDP ব্যয়ে কার্যকর কাঠামো।

  • পরিবেশ: বন আগুন ও বৃষ্টির মৌসুমে ঝুঁকি, দূষণ রোধে আইনি কঠোরতা।

শেষ কথা

এই নিরাপদ দেশগুলোর বাসিন্দারা তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে বরং সময় কাটান কাজ ও জীবনের সুষম ভারসাম্য বজায় রাখতে, পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যের নিখুঁত বাছাইয়ে, কিংবা নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে তর্ক করতে।

বিশ্ব হয়তো একেক প্রান্তে একেক রকম, তবে এই দেশগুলো প্রমাণ করে—শান্তি, নিরাপত্তা ও সুস্থ জীবনযাপন একসাথে সম্ভব।

সূত্রঃ https://aviationa2z.com/index.php/2025/05/10/safest-countries-in-the-world-2025/

ইমরান

×