জম্মু ও কাশ্মীরের পাহলগামে পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ২২ মিনিটের ভাষণে তিনি জানিয়ে দেন, “অপারেশন সিন্দুর এখনও শেষ হয়নি, এটি শুধু স্থগিত রাখা হয়েছে।” একই সঙ্গে পাকিস্তানকে সতর্ক করে তিনি বলেন, “আমাদের হামলা বাতিল হয়নি—পাকিস্তান প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে আবারও প্রতিক্রিয়া হবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পাকিস্তানকে বুঝতে হবে, ভারতের প্রতিক্রিয়া কেবল বিরতি নিয়েছে, বন্ধ হয়নি। যদি তারা প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসে বা প্রতারণা করে, তাহলে ফের আঘাত আসবে।”
মোদি জানান, ভারতের চালানো ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাত্রা এতটাই উচ্চ ছিল যে, তা পাকিস্তানের কল্পনার বাইরে। তার ভাষায়, “পাকিস্তান আতঙ্কে পড়ে আন্তর্জাতিক মহলে ফোন করে হস্তক্ষেপ চাইতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত ডিরেক্টর জেনারেল মিলিটারি অপারেশন (DGMO)-স্তরের আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির অনুরোধ জানায়।”
তিনি বলেন, “ভারত কেবল তখনই যুদ্ধবিরতির বিবেচনা করে, যখন পাকিস্তান ভবিষ্যতে সন্ত্রাস বা সামরিক উসকানি দেবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়।”
হুমকির সুরে মোদি বলেন, “পাকিস্তান ভারতের সীমান্তে হামলার চেষ্টা করেছিল, আমরা তাদের বুকে আঘাত করেছি। আমাদের নিখুঁত ও শক্তিশালী প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান দিশেহারা হয়ে পড়েছে।”
তিনি পাকিস্তানের ভাওয়ালপুর ও মুরিদকেসহ বিভিন্ন “সন্ত্রাস বিশ্ববিদ্যালয়ের” কথা উল্লেখ করে বলেন, “৯/১১ থেকে লন্ডন বোমা হামলা, কিংবা ভারতের একাধিক হামলার শেকড় ওই অঞ্চলেই গাঁথা।”
‘অপারেশন সিন্দুর’ প্রসঙ্গে মোদি বলেন, “এটি শুধু একটি সামরিক অভিযান নয়, এটি ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী নীতির মৌলিক পরিবর্তনের প্রতীক। ভারত এখন যেখানে সন্ত্রাসের ঘাঁটি দেখবে, সেখানেই আঘাত করবে। আর কেউ ভারতের দিকে চোখ তুলে তাকালে, জবাব হবে চূড়ান্তভাবে।”
পারমাণবিক হুমকির প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন, “ভারত কোনো ধরনের পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল বরদাস্ত করবে না। পারমাণবিক ঢালের আড়ালে থাকা সন্ত্রাসের ঘাঁটিতে ভারত নিখুঁতভাবে আঘাত হানবে।”
ভারতের ‘মেইড ইন ইন্ডিয়া’ প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের কার্যকারিতা নিয়েও মোদি সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “অপারেশন সিন্দুর প্রমাণ করে দিয়েছে, মরুভূমি হোক বা পাহাড়—ভারতের আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের শ্রেষ্ঠত্ব এখন অপ্রতিরোধ্য।”
শেষে মোদি পুনরায় সতর্ক করে বলেন, “পাকিস্তানের সরকার ও সেনাবাহিনী সন্ত্রাসকে যেভাবে উসকে দিচ্ছে, একদিন তা তাদের নিজেদের ধ্বংসের কারণ হবে। যদি তারা টিকে থাকতে চায়, তবে সন্ত্রাসের পরিকাঠামো ধ্বংস করতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।”
নিজের বহুল আলোচিত মন্তব্যকে পরিমার্জন করে মোদি বলেন, “এটি যুদ্ধের যুগ নয়— এবং এটি সন্ত্রাসের যুগও নয়। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সই হবে একটি উন্নত বিশ্বের গ্যারান্টি।”
সূত্র: এনডিটিভি