
তিন মাসে প্রায় তিন বিলিয়ন রেমিটেন্স পাঠিয়েছে প্রবাসীরা
রেমিটেন্স আহরণে এখন পর্যন্ত ছন্দপতন ঘটেনি। উল্টো আগের চেয়ে তেজিভাব দেখা যাচ্ছে রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে। গেল তিন মাসে টানা প্রায় তিন বিলিয়নের কাছাকাছি রেমিটেন্স পাঠিয়েছে প্রবাসীরা। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিটেন্সের রেকর্ড গড়ল এই অর্থবছর। ধারণা করা হয়েছিল রমজান ও ঈদকে লক্ষ্য করেই রেমিটেন্স বেশি আসছে। আসলে এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ২৫.২৭ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮.২ শতাংশ বেশি এবং দেশের ইতিহাসে অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ।
এদিকে, মে মাসের প্রথম সাত দিনে দেশের ব্যাংকিং চ্যানেলে ৭৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে, যা গত বছর একই সময়ের তুলনায় ২২.৩ শতাংশ বেশি। গত বছর মে মাসের প্রথম সাত দিনে ৬০ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। এর আগে, চলতি বছরের মার্চে ৩২৮ কোটি ৯৯ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিটেন্স এসেছে, যা মাসিক হিসাবে এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ। এপ্রিলে মোট ২৭৫ কোটি ১৯ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
এরও আগে, ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২৪.৭৭ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। এদিতে চলতি অর্থবছরে মোট রেমিটেন্স এসেছে ২৫.২৭ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে এক মাসে হাতে থাকতেই ২০২৪-২৫ অর্থবছর রেমিটেন্সে এই রেকর্ড গড়লো। ফেব্রুয়ারিতে রেমিটেন্স এলো রেকর্ড ৩১ হাজার কোটি টাকা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হুন্ডির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ, ব্যাংকিং চ্যানেল সহজ করা এবং প্রণোদনার হার বজায় রাখাসহ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে রেমিটেন্স প্রবাহে এই গতি এসেছে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে অর্থনীতির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রবাসী আয় বাড়ানো ও আমদানি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া কার্যকর নীতিগুলোই রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।
ড. আহসান এইচ মনসুর গভর্নরের দায়িত্ব নিয়েই রিজার্ভ পুনরুদ্ধারে কঠোর অবস্থান নেন। হুন্ডি দমনে মোবাইল কোর্টের মতো ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রবাসী আয় দেশে আনতে বাড়ানো হয় প্রণোদনা। বিলাসবহুল পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমদানি ব্যয়ের অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয় নজরদারিমূলক ব্যবস্থা। পাশাপাশি ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় আস্থা ফেরাতে চালু করা হয় নিরীক্ষা কার্যক্রম।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা চাই অবৈধ পন্থায় কেউ যেন দেশে টাকা না পাঠাতে পারে। কোনো প্রবাসী যদি পাঠানোর চেষ্টা করে তাহলে তারা যেন সেই সুবিধা ভোগ করতে না পারে তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মানে সঠিক পদ্ধতিতে একটি বাধার সৃষ্টি করতে চাচ্ছি যাতে প্রবাসীরা উৎসাহের সঙ্গে রেমিটেন্স পাঠায়।’
আমাদের ধারণা ছিল রমজান ও ঈদুল ফেতরকে টার্গেট করেই রেমিটেন্স বেশি আসছে। আবার আমিই বলেছিলাম এপ্রিল মাসে এর ছন্দপতন হবে আসলে আমাদের এই ধারণাটি ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এই তিন মাসে ৩ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি গিয়েছি। তার মানে আমাদের ছন্দপতন হয়নি। আমরা স্বাভাবিক পথে এগিয়ে যাচ্ছি। তবে আমাদের খুব বেশি আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা সন্তুষ্টি এই কারণে যে রেমিটেন্স আহরণের জন্য আমরা যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছি তা কাজ করছে।
আমাদের পদক্ষেপগুলো সমন্বিত পন্থা ছিল সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্যক ব্যাংক এবং বিভিন্ন একচেন্স লঞ্জচারগুলো যারা বিদেশে আছে, বিদেশের দূতাবাস ও বিদেশের কমিউনিটিগুলো তাদের মতো করে কাজ করেছে। তবে এ ধারা আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। আমরা দেখেছি বিদেশে লোক পাঠানোর সংখ্যা কিন্তু বেড়েই চলছে এখানে দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে পারলে আরও ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আরও বেশি রেমিটেন্স আসার সুযোগ রয়েছে।
যদি মধ্যপ্রাচ্যকে টার্গেট করে আমাদের কাজ করা হয় তাহলে এই ধারাবাহিতকা শুধু অব্যাহত নয় দ্বিগুণ করা কোনো বিষয় নয়। আপনারা যারা রেমিটেন্স নিয়ে ইতিবাচক খবর প্রচার করছেন প্রবাসীরা অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দেখে উৎসাহিত হন। তখন কিন্তু তাদের মধ্য প্রতিযোগিতা চলে আসে। তখন তারা মনে করে আমি গত মাসে এক হাজার দেরহাম পাঠিয়েছি এ মাসে ১২শ’ দেরহাম পাঠাব। এই সফলতার ভাগিদার কেন্দ্রীয় ব্যাংক একার এটা ভাবার কোনো কারণ নেই।