একজন ব্যক্তি পর পর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না- এমন বিধান তৈরিসহ রাষ্ট্র সংস্কারে সেক্টর অনুযায়ী আলাদা আলাদা ১০টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটি আগামী নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণের পাশাপাশি ভোটের আনুপাতিক হারে আসন নির্ধারণের প্রস্তাবও রেখেছে।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত ‘রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা।
জামায়াতে ইসলামী জানিয়েছে, এই ১০ খাতের প্রস্তাব শুধু অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য। নির্বাচিত কোনো সরকারের জন্য নয়। এই সরকারের কাছে আসলে আমাদের মোট ৪১টি প্রস্তাব। তার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাব গণমাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। খাতগুলো হলো- আইন ও বিচার বিষয়ক সংস্কার, সংসদ বিষয়ক সংস্কার, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা সংস্কার (পুলিশ বাহিনীর সংস্কার, র্যাব বিষয়ক সংস্কার), জনপ্রশাসন সংস্কার, দুর্নীতি, সংবিধান সংস্কার, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সংস্কার (বিরাজমান সমস্যার আলোকে শিক্ষা সংস্কার প্রস্তাব, সংস্কৃতি সংস্কার), পররাষ্ট্র বিষয়ক সংস্কার ও ধর্ম মন্ত্রণালয় সংস্কার।
আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসুক, এটি জামায়াত চায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, তারা কি নির্বাচন করেছিল? না। তারা ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। তারা নির্বাচন চায়নি। এজন্য রাতের অন্ধকারে ভোট করেছিল পুলিশ আর প্রশাসন দিয়ে। যারা নির্বাচন চায় না, তাদের ওপর নির্বাচন চাপিয়ে দিলে তো জুলুম হবে। এটাও একটা বৈষম্য হবে।
আগে নির্বাচন, না আগে সংস্কার? এমন প্রশ্নে জামায়াত আমির বলেন, দুটি রোডম্যাপ হবে। একটা সংস্কারের আর একটা নির্বাচনের। তবে সময় যেন অতিদীর্ঘ না হয়, আবার অতিসংক্ষিপ্ত না হয়। দেশে অনেক রাজনৈতিক দল আছে। একটি বর্ণাঢ্য সংসদের জন্য জনগণের কোনো ব্যক্তিকে নয়, ভোট দিতে হবে দলকে।
সংবিধান পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে যে সংবিধান রচিত হয়েছিল তা ভারতে বসে রচিত। এটি বাংলাদেশে বসেও রচনা করা যেত। জন্মভূমি হিসেবে সংবিধান বাংলাদেশের ভূখ- পায়নি। আমরা লক্ষ্য করলাম মুজিব সাহেব থাকা অবস্থায় পার্লামেন্টে ৭ মিনিটের বক্তব্যের পর বাকশাল কায়েম হলো। আমাদের সংবিধান যেন মতলবি সংবিধান না হয়। শুধু নির্বাচন নয়, সমগ্রিক সমাজ কাঠামো ধরে সংবিধান হতে হবে। অনুষ্ঠানে জামায়াত আমির বলেন, গণহত্যায় জড়িত যারা পালিয়ে গেছে, তাদের ফিরিয়ে এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দের সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ সাবেক এমপি, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ও মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন ও মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন,আমরা সকলেই জানি দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর একটি দল ও তাদের দোসররা ক্ষমতায় ছিলেন। তারা দেশকে যে কোন উপহার দিয়েছিলেন তা বাংলাদেশের মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। এর লক্ষ্যবস্তু বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক হয়েছিলেন। তাদের অপশাসনের হাত থেকে কেউই রেহাই পায়নি। এমনকি রাস্তার ভিক্ষুকও তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। শিশু-বৃদ্ধ সকলেই এই কুশাসনের নজরে পড়েছিলেন। গত জুন মাসে ছাত্ররা বৈষম্যবিরোধী কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে।