ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০২ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২

জুলাই অভ্যুত্থানের আবেগেই রেমিটেন্সে জোয়ার

জুলাই অভ্যুত্থানের আবেগেই রেমিটেন্সে জোয়ার

দেশ প্রেমিক প্রবাসীরা জুলাই অভ্যুত্থানকে সম্মান জানিয়ে তাদের স্মৃতি বুকে ধারণ করে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠায়। যে কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে। দেশের গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে শহীদ ও আহত ভাইদের উৎসর্গ করে প্রবাসীরা বেশি বেশি রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে বলে মনে করেন কর্তৃপক্ষ।  বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো একক অর্থবছরে এত বেশি রেমিটেন্স দেশে আসেনি। সেই সঙ্গে এই প্রথম বাংলাদেশ রেমিটেন্স তথা প্রবাসী আয়ে ৩০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলন অতিক্রম করেছে। এই রেকর্ড রেমিটেন্সে দেশের রিজার্ভ একটি সুসংহত অবস্থার দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জনকণ্ঠকে বলেন, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ের ধারা অনেকটাই ইতিবাচক। ২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মোট ৩০ হাজার ২২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছে। আগের অর্থবছরে একই সময়ে এসেছে ২৩ হাজার ৯১২ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ২৬ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি।  তিনি বলেন, আপনারা জানেন যারা প্রবাসী তারা বেশিরভাগ বয়সে অনেক তরুণ। তারা দেখে যারা আমার চেয়ে কম বয়সী দেশের গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়ে নিজেকে উৎসর্গ করেছে। এদের মধ্যে অনেকে পঙ্গু হয়েছে। অনেকে চোখ হারিয়েছেন তাদের আত্মত্যাগের কাছে আমরা কিছুই না। প্রবাসীরা অনেকেই কায়িক পরিশ্রমী। এর পরেও তারা এই ভেবে যে আমরা দেশে থাকলে হয়তো তাদের মতোই রাজপথে থেকে আন্দোলন করতাম। এই কাজ হয়তো আমাদের করতে হচ্ছে না। আমাদের তো আর গুলির ভয় নেই। জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত শহীদ ভাইদের উৎসর্গ করে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে সঠিক ওয়েতে রেমিটেন্স পাঠিয়ে কিছুটা হলেও দায়িত্ব পালন করছে বলে মনে করেন তিনি।    বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, শুধু চলতি জুন মাসের ১ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত ২৮১৮ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় (২৫৩৯ মিলিয়ন ডলার) তা ১১ শতাংশ বেশি। গত ২৯ জুন একদিনেই দেশে এসেছে ১৬৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা প্রবাসীদের আস্থার প্রতিফলন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশ্লেষকদের মতে, বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রেরণে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা উদ্যোগ, হু-ি প্রতিরোধে কড়াকড়ি এবং প্রণোদনার বাস্তবায়ন রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রেমিটেন্স প্রবাহ শুধু প্রবাসী পরিবারের আয় বাড়ায় না বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও বড় অবদান রাখে। এদিকে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠাতে প্রবাসীদের বিভিন্ন প্রণোদনা দিচ্ছে। ডিজিটাল চ্যানেলে অর্থ পাঠানো সহজ হওয়ায় এখন অনেকেই হু-ি এড়িয়ে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেল বেছে নিচ্ছেন। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বিপুল রেমিটেন্স এলেও এখনো বড় অঙ্ক অবৈধ পথে চলে যাচ্ছে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে বৈদেশিক শ্রমবাজারে ৯ লাখ ৬ হাজার ৩৫৫ জন কর্মী যুক্ত হয়েছেন। আর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশে পাঠানো জনশক্তির অঙ্ক ছিল ১ কোটি ৬০ লাখ ৭৫ হাজার ৪৮৭ জন। এই বিপুল জনশক্তির অর্জিত আয় বৈধপথে দেশ আনতে পারলে বাৎসরিক রেমিটেন্সের অঙ্ক ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেত। রেমিটেন্স আয়ের দিক থেকে ২০২৪ সালে বিশ্বে সপ্তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। গত বছর বাংলাদেশে সাড়ে ২৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। শীর্ষে ছিল ভারত। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের একটি ব্লগের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু। ভারত ২০২৪ সালে ১২৯ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পেয়েছে। যা যেকোনো দেশের এক বছরে পাওয়া সর্বোচ্চ রেমিটেন্স।  এ ছাড়া, গত বছর বৈশ্বিক রেমিটেন্সের মধ্যে ভারত একাই নিয়ে গেছে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ। এই অঙ্কও চলতি শতকে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। গত বছর রেমিটেন্স অর্জনে দ্বিতীয় স্থানে ছিল মেক্সিকো। প্রবাসীরা দেশটিতে ৬৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ পাঠিয়েছেন। তৃতীয় স্থানে থাকা চীনা প্রবাসীরা নিজ দেশে পাঠিয়েছেন ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। চতুর্থ স্থানে ফিলিপাইন। প্রবাসীরা দেশটিতে ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ পাঠিয়েছেন। পঞ্চম স্থানে ফ্রান্স। দেশটির প্রবাসীরা গত বছর মোট ৩৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। তালিকার ষষ্ঠ স্থানে আছে পাকিস্তান।

লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১ লাখ কোটি টাকার রেকর্ড রাজস্ব ঘাটতি

লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১ লাখ কোটি টাকার রেকর্ড রাজস্ব ঘাটতি

সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক পিছিয়ে পড়েছে। এ অর্থবছরে ৪.৬৩ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। অর্থবছরের শুরুতে মূল রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪.৮০ লাখ কোটি টাকা। এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক কর্মকা-ে ধীরগতি, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন কমে যাওয়া এবং অর্থবছর শেষে এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলন ও কর্মবিরতি কর্মসূচির কারণে এই ঘাটতি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বড় অঙ্কের এই রাজস্ব ঘাটতির অন্যতম কারণ হলো মাত্রাতিরিক্ত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ। তবে তারা এ-ও বলছেন, জুলাই অভ্যুত্থানের কারণে রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও তা এতটা কমে যাওয়ার কথা ছিল না। এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান বলেন, তারা এখনো পূর্ণাঙ্গ হিসাব পাননি। আমরা আশা করছি, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে রাজস্ব আদায় ৩.৭০ লাখ কোটি টাকা হবে। কিন্তু ৩.৮০ লাখ কোটি টাকা আদায় হওয়ার কথা ছিল।  তবে ৩.৭০ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় ধরলেও প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতি দাঁড়ায় প্রায় ১.১০ লাখ কোটি টাকা। আর কমিয়ে আনা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এ ঘাটতি প্রায় ৯৪ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমত্রার তুলনায় বড় ব্যবধান হলেও গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন এনবিআর চেয়ারম্যান।