
ছবিঃ এমডি সাব্বির
ইসলামে ভ্রমণের গুরুত্ব অপরিসীম। কুরআন ও হাদিসে ভ্রমণের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং একে জ্ঞান অর্জন, আত্মশুদ্ধি, আল্লাহর নিদর্শনাবলী পর্যবেক্ষণ, ধর্ম প্রচার এবং জীবিকা উপার্জনের একটি মাধ্যম হিসেবে উৎসাহিত করা হয়েছে।
১. জ্ঞান অর্জন ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি:
ইসলাম জ্ঞান অর্জনের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে। ভ্রমণ জ্ঞান অর্জনের একটি অন্যতম মাধ্যম। ভ্রমণের মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন সংস্কৃতি, সভ্যতা, ভাষা এবং জীবনযাপন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারে । আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন: "বলো, তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো এবং দেখো, যারা (সত্যকে) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে তাদের পরিণাম কী হয়েছে।" (সূরা আন'আম, ৬:১১)। এর মাধ্যমে মানুষ পূর্ববর্তী জাতিগুলোর ইতিহাস ও তাদের পরিণতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
২. আল্লাহর নিদর্শনাবলী পর্যবেক্ষণ ও ঈমান বৃদ্ধি:
ভ্রমণের মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্টিগত নিদর্শনাবলী পর্যবেক্ষণ করা যায়, যা মানুষের ঈমান ও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসকে সুদৃঢ় করে । পর্বতমালা, সাগর, মরুভূমি, বিভিন্ন জীববৈচিত্র্য - এসবই আল্লাহর অসীম কুদরত ও মহিমার প্রমাণ। কুরআনুল কারীমে এরশাদ হয়েছে: "তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না? তাহলে তারা দেখত তাদের পূর্ববর্তীদের কী পরিণতি হয়েছিল?" (সূরা ইউসুফ, ১২:১০৯)।
৩. আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক উন্নতি:
ভ্রমণ মানুষকে জাগতিক মোহ থেকে মুক্ত করে এবং আত্মশুদ্ধিতে সাহায্য করে। নতুন পরিবেশে গিয়ে মানুষ নিজের সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করতে পারে এবং আল্লাহর উপর তার নির্ভরতা বৃদ্ধি পায়। এতে একঘেয়েমি দূর হয় এবং মন প্রফুল্ল হয়।
৪. ধর্ম প্রচার ও দাওয়াত:
ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই দাওয়াত ও ধর্ম প্রচারের জন্য ভ্রমণের গুরুত্ব অপরিসীম ছিল। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এবং তাবেয়ীরা (রহ.) ইসলাম প্রচারের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ করেছেন। এটি মুসলিমদের উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
৫. জীবিকা উপার্জন:
জীবিকা উপার্জনের জন্যও ইসলামে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য বা হালাল উপায়ে অর্থ উপার্জনের জন্য ভ্রমণ একটি স্বীকৃত পদ্ধতি। আল্লাহ তায়ালা বলেন: "তিনিই তো তোমাদের জন্য পৃথিবীকে সুগম করেছেন; অতএব তোমরা তার দিগন্তে বিচরণ করো এবং তাঁর দেওয়া রিজিক থেকে আহার করো।" (সূরা মূলক, ৬৭:১৫)।
৬. মানসিক শান্তি ও বিনোদন:
ক্লান্তি দূর করা এবং মানসিক প্রশান্তি লাভের জন্যও ভ্রমণ গুরুত্বপূর্ণ। তবে তা হতে হবে ইসলামি শরীয়তের সীমারেখার মধ্যে। বিনোদনের নামে যাতে কোনো অনৈসলামিক কার্যকলাপে লিপ্ত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৭. অসুস্থতার পর আরোগ্য লাভ:
অনেক সময় ভ্রমণের মাধ্যমে পরিবেশ পরিবর্তন অসুস্থতা থেকে আরোগ্য লাভে সহায়ক হয়। কিছু মুসলিম পণ্ডিত অসুস্থ ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্য ভ্রমণের পরামর্শ দিয়েছেন।
৮. পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন:
ভ্রমণের মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সাথে মেলামেশা হয়, যা পারস্পরিক সম্পর্ক, সহমর্মিতা এবং বোঝাপড়া বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।
ইসলামে ভ্রমণের গুরুত্ব এতটাই যে, হাদিসে শিক্ষামূলক সফর, জিহাদের সফর এবং হজের সফরকে বিশেষভাবে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তবে, ভ্রমণের সময় অবশ্যই ইসলামিক নীতিমালা ও নৈতিকতা মেনে চলা উচিত।
সাব্বির