
মিঠাপুকুরে যমুনেশ্বরী নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি,বসতভিটা
যমুনেশ্বরী নদীর অব্যাহত ভাঙনে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার কিছু এলাকার অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, ফসলি জমি, এমনকি কবরস্থানও। দিশেহারা মানুষজন সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন, আর ভাঙন প্রতিরোধের স্থায়ী সমাধান না হওয়ায় বাড়ছে জনদুর্ভোগ।
মিঠাপুকুরের ১১নং বড়বালা ইউনিয়নের আরাজি শীবপুর এলাকা যমুনেশ্বরীর ভাঙনের শিকার হওয়া অন্যতম একটি স্থান। এই এলাকার বাসিন্দারা জানান, প্রতি বছর বর্ষা এলেই ভাঙনের তীব্রতা বাড়ে। চোখের সামনে তাদের পৈতৃক ভিটা, শত কষ্টার্জিত ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
আরাজি শীবপুরের একজন বাসিন্দা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, "বাপ-দাদার আমল থ্যাকি এইখানে আছি। দ্যাখতে দ্যাখতে সব শেষ হইয়া গেইল। জমিজমা সব নদীর পেটে, এহন কই যামু জানি না।" একই এলাকার আর একজন জানান, "আমাগের ছাওয়াল-পাওয়ালগুলার ভবিষ্যৎ নিয়া টেনশন হয়। সরকার যদি একটা স্থায়ী বাঁধ না করে, তাইলে এহানে আর কিছুই থাকপেনা।
যমুনেশ্বরী নদীর এই ভাঙন কেবল আরাজি শীবপুরেই সীমাবদ্ধ নয়। মিঠাপুকুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনাও এই ভাঙনের শিকার হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়, রাস্তাঘাট-সবই যেন যমুনেশ্বরীর ক্ষুধায় বিলীন হওয়ার অপেক্ষায়।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ভুক্তভোগীরা জানান, ভাঙন প্রতিরোধে প্রতি বছরই কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। নামমাত্র জিও ব্যাগ ফেলে বা বালুর বস্তা দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হলেও তা বর্ষার তীব্র স্রোতে ভেসে যায়। তাই স্থানীয়রা সরকারের কাছে দ্রুত একটি স্থায়ী ও মজবুত বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, একমাত্র স্থায়ী বাঁধ নির্মাণই পারে যমুনেশ্বরীর করাল গ্রাস থেকে মিঠাপুকুরের মানুষকে রক্ষা করতে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নদীর গতিপথ পরিবর্তন এবং অপরিকল্পিত নদী শাসন ভাঙনের অন্যতম কারণ। দ্রুত বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে নদী ড্রেজিং এবং টেকসই বাঁধ নির্মাণের পদক্ষেপ না নিলে মিঠাপুকুরের বিরাট অংশ অচিরেই নদীগর্ভে হারিয়ে যেতে পারে।
যমুনেশ্বরীর ভাঙন কবলিত মানুষের আর্তনাদ আজ আকাশ-বাতাস ভারী করে তুলছে। তাদের একটাই চাওয়া-সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাদের ভিটেমাটি ও অস্তিত্ব রক্ষা করুক। অন্যথায়, ভিটেমাটি হারানোর বেদনা নিয়ে এই মানুষগুলো এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে।
তাসমিম