ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

সাহিত্য

সাহিত্য বিভাগের সব খবর

বোহেমিয়ার স্ক্যান্ডাল

বোহেমিয়ার স্ক্যান্ডাল

(পূর্ব প্রকাশের পর) কোথায় ফোকাস করবো- এখানে ব্রায়োনি লজে নাকি গডফ্রের ইনার টেম্পল ঠিকানায়? এতসব ডিটেইল দিয়ে তোমাকে বোধহয় বোর করছি, ওয়াটসন। কিন্তু এসব না বললে তো সমস্যাটা ঠিক বোঝা যাবে না।’ ‘আমি মোটেও বোর হচ্ছি না।’ মন্তব্য করলাম। ‘খুবই আগ্রহ নিয়ে তোমার কথা শুনছি।’ ‘বেশ। তো এইসব নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে ছিলাম।’ হোমস বলতে থাকলো। ‘এমন সময় দেখি একটা ক্যাব এসে দাঁড়ালো বাড়িটার সামনে। ক্যাব থেকে লাফ দিয়ে নামলো এক ভদ্রলোক। খুব হ্যান্ডসাম, গোঁফ আছে- বুঝলাম একটু আগে এর কথাই বলেছে কোচোয়ান আমাকে। দেখে মনে হলো ভীষণ তাড়া আছে লোকটার, ক্যাবম্যানকে সে অপেক্ষা করতে বললো চেঁচিয়ে। বাড়ির মেইড দরজা খুলে দিল- তার পাশ দিয়ে দ্রুত ভেতরে ঢুকে গেলো লোকটা। বোঝা যায় এই বাড়িতে তার নিয়মিত যাতায়াত আছে। আধ ঘণ্টার মতো বাড়ির ভেতরে কাটালো লোকটা। তাকে আমি ড্রইংরুমের জানালা দিয়ে দেখতে পেলাম- হাত নেড়ে কথা বলছে, পায়চারি করছে উত্তেজিতভাবে। ইরিনকে দেখা গেল না। একটু পর বেরিয়ে এলো লোকটা, খুব অস্থির। ক্যাবে উঠতে উঠতে পকেট থেকে ঘড়ি বের করে সময় দেখলো। ‘তুফানের বেগে ঘোড়া ছুটাও!’ চেঁচিয়ে বললো সে ক্যাবম্যানকে। ‘প্রথমে রিজেন্ট স্ট্রিট, তারপর এজওয়ার রোডে সেন্ট মনিকা চার্চে যাবে। অর্ধেক গিনি বখশিস- যদি কুড়ি মিনিটে পৌঁছাতে পারো!’ চলে গেল ক্যাব। পিছে পিছে যাবো কিনা ভাবছি, তখন একটা ল্যান্ডাউ এসে দাঁড়ালো। কোচম্যানের কোটের বোতাম খোলা, টাই ঠিকমতো পরার সময় পায়নি। ঘোড়াটা পুরোপুরি থামবার আগেই ঝড়ের বেগে বেরিয়ে এলো ইরিন এডলার। এক মুহূর্তের জন্য তাকে দেখলাম- অপরূপ সুন্দরী, এমন মেয়েদের জন্যই পুরুষরা মরতে রাজি থাকে। ‘সেন্ট মনিকা চার্চে যাও, জন।’ বললো ইরিন। ‘বিশ মিনিটে যেতে পারলে অর্ধেক মোহর বখশিস।’ দৌড়ে গিয়ে ল্যান্ডাউয়ের পিছে উঠবো কিনা ভাবছি, এমন সময় একটা ক্যাব পেয়ে গেলাম। আমার পোশাক-আশাক দেখে নিষেধ করতে যাচ্ছিলো- তার আগেই চড়ে বসলাম ক্যাবে, বললাম, ‘অর্ধেক মোহর পাবে, যদি কুড়ি মিনিটের মধ্যে সেন্ট মনিকা চার্চে যেতে পারো।’ বারোটা বাজতে তখন পঁচিশ মিনিট বাকি। দ্রুত ছুটলো ক্যাব। পৌঁছে দেখি আমার আগেই অন্য দুজন পৌঁছে গেছে। তাদের ক্যাব আর ল্যান্ডাউ দাঁড়িয়ে আছে, ঘোড়াগুলোর গা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। ক্যাবম্যানকে ভাড়া দিয়ে চার্চে ঢুকে গেলাম। ঐ দুজন আর যাজক দাঁড়িয়ে আছে বেদির সামনে। আর কেউ নেই চার্চে। সাধারণ একজন ভবঘুরে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরতে ঘুরতে যেভাবে গির্জায় ঢুকে যায়, সেভাবে ভেতরে ঢুকে আমি একটু এগিয়ে গেলাম আইল ধরে। হঠাৎ তিনজনই ঘুরে দাঁড়ালো এবং আমাকে চমকে দিয়ে গডফ্রে নর্টন ছুটে এলো আমার দিকে। ‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।’ বললো সে হন্তদন্ত হয়ে। ‘আপনাকে পেয়েছি, আসুন আসুন এদিকে।’ ‘এ কী...! কী বিষয়?’ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম। ‘আসুন প্লিজ, মাত্র তিন মিনিট। নইলে আইনত বৈধ হবে না।’  কিছু বুঝে উঠবার আগেই আমাকে টানতে টানতে বেদির কাছে নিয়ে গেল নর্টন। কী ঘটছে, কী ঘটনা না বুঝেই আমি পাদ্রির কথা অনুযায়ী বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়তে শুরু করে দিলাম- এইসব মন্ত্রের বিন্দু বিসর্গও আমি জানি না। বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে ইরিন এডলার আর গডফ্রে নর্টন। চোখের পলকে আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়ে গেল। একদিকে বর অন্যদিকে কনে আমাকে ধন্যবাদ দিচ্ছে, সামনে পাদ্রি তাকিয়ে আছেন হাসি মুখে। এমন অদ্ভুত ঘটনা আমার জীবনে আর কখনো ঘটেনি ওয়াটসন- তাই হাসছিলাম একটু আগে। বিয়েতে একজন সাক্ষীর দরকার ছিল, সাক্ষী ছাড়া পাদ্রি বিয়ে দিতে পারছিলেন না। আমি এসে সবাইকে উদ্ধার করেছি। কনে আমাকে একটা মোহর দিয়েছে। ভাবছি আমার ঘড়ির চেইনের সঙ্গে মোহরটাকে লাগিয়ে নেবো- এমন একটা ঘটনার স্মৃতি হয়ে থাকবে মোহরটা। ‘সবকিছু তো ওলট-পালট হয়ে গেল।’ আমি বললাম। ‘তারপর কী হলো?’ ‘তারপর তো বর-কনে গির্জা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে আর আমি ভাবছি এবার কী করবো। দেখি ওরা দুজন যার যার বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছে। ‘বিকেল পাঁচটার সময় বের হবো প্রতিদিনের মতো।’ ইরিন বললো গডফ্রেকে। ব্যস এটুকুই যথেষ্ট আমার জন্য। আমি আমার ব্যবস্থা করতে চললাম।’ ‘কী ব্যবস্থা?’ কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইলাম। ‘আপাতত কোল্ড বিফ আর এক গ্লাস বিয়ার।’ আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বেল বাজালো হোমস। ‘এত ব্যস্ত ছিলাম সারাদিন খাবার কথা মনেই ছিল না। সন্ধ্যাটাও খুব ব্যস্ততায় কাটবে। ডাক্তার, তোমার সহযোগিতা আমার দরকার যে।’ ‘আমি খুশি মনে রাজি।’ ‘আইন ভাঙতে আপত্তি নেই তো?’ ‘একটুও না।’ ‘অ্যারেস্ট হওয়ার ঝুঁকি আছে কিন্তু।’ ‘ভালো কাজে ঝুঁকি থাকবেই।’ ‘হ্যাঁ, কাজটা খুবই ভালো এবং পরোপকারী।’ ‘তাহলে আমি সদা প্রস্তুত।’ ‘জানতাম তুমি রাজি হবে।’ ‘কাজটা কী?’ ‘মিসেস টার্নার আগে খাবারটা দিয়ে যাক, তারপর বলছি।’ ল্যান্ডলেডি একটা ট্রে দিয়ে গেলেন। ক্ষুধার্ত হোমস খাবারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। খেতে খেতে বললো, ‘সময় বেশি নেই। খেয়েই দৌড়াতে হবে ঘটনাস্থলে। এখন পাঁচটা বাজে। দু’ঘণ্টার মধ্যে মিস ইরিন...ও হ্যাঁ এখন মিসেস ইরিন- বাড়ি ফিরে আসবে। তার আগেই আমাদের ব্রায়োনি লজে পৌঁছাতে হবে।’ ‘পৌঁছে তারপর?’ ‘পরেরটা আমার ওপর ছেড়ে দাও। শুধু একটা বিষয় খেয়াল রাখবে- যাই ঘটুক না কেন, কোনো অবস্থাতেই তুমি ইন্টারফেয়ার করবে না।’ ‘কিছুই করবো না?’ ‘একদম কিচ্ছুটি না। অপ্রিয় কিছু ঘটনা ঘটতে পারে। ধারেকাছেও যাবে না। এভাবেই হয়তো বাড়ির ভেতরে ঢুকতে পারবো আমি- একটু পরেই দেখবে ড্রইংরুমের জানালা খুলে গেছে। খোলা জানালার পাশে গিয়ে পজিশন নেবে।’ ‘ঠিক আছে।’ (চলবে... )

ছায়া মন্ত্রিসভা

ছায়া মন্ত্রিসভা

২৯ অক্টোবরের ট্র্যাজেডি। ৫০৪ জন বিখ্যাত লোকের রহস্যজনক মৃত্যু। সাড়া পড়ে বিশ্বে। অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সবাই। প্রতেক্যেই নিজ নিজ জায়গায় রাতে সুস্থ শরীরে ঘুমিয়ে সকালে জেগে ওঠেননি। কেউই সাধারণ নন। সেনা বাহিনীর উচ্চপদস্থ জেনারেল, পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার অতি গুরুত্বপূর্ণ লোক, গণমাধ্যেেমর বিখ্যাত সব সাংবাদিক। সবার বায়োডাটায় একটি জিনিস কমন, সবাই দেশের নিরাপত্তা ও অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। বিশ্বজয়ী ডিটেকটিভরা কোমর বেঁধে নামে। কিন্তু কূলকিনারা কিছুই করতে পারে না।  দুবছর পর। বৃষ্টির শব্দে ঢাকা পড়ে যাচ্ছিল পত্রিকা অফিসের কীবোর্ডের ঠকঠক শব্দ। মোহাম্মদ রাফির বয়স ত্রিশ ছুঁই ছুঁই, চোখে ক্লান্তির ছাপ, কিন্তু দৃষ্টি একেবারে তীক্ষ্ণ। শহরের গুটিকয়েক সাহসী অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের একজন সে। পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার তিনি। এক সন্ধ্যায় একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে তার ফোনে? – “আপনি কি মোহাম্মদ ওাফি?”  – “হ্যাঁ, বলুন।”  – “কাল রাত তিনটায় জাতীয় গ্রন্থাগারের পেছনে আসবেন। কিছু আছে, যা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যদি সাহস থাকে, আসবেন।” তারপর সংযোগ বিচ্ছিন্ন। রাফি অবাক হয়, কল আসছে অথচ কোন নাম্বার নেই। সেই গম্ভীর কণ্ঠ- ঠান্ডা, অনুশীলিত, যেন কোনো থিয়েটারের স্ক্রিপ্ট পড়ে শুনিয়েছে? পরদিন গভীর রাতে, রাফি যখন সেই নির্জন জায়গায় পৌঁছায়, বৃষ্টির ছাঁট তখনো পড়ছিল। হঠাৎ একটি ছায়ামূর্তি এগিয়ে আসে, অন্ধকারে মুখ দেখা যায় না। হাতে একটি বাদামি খাম। – “এই ফাইলটা... এটা আপনার সত্যি দরকার হবে... ‘ছায়া মন্ত্রিসভা’ বলে একটা টার্ম শুনেছেন?”  – “না।”  – “শুনবেন... কিন্তু হয়তো বাঁচবেন না।” ছায়ামূর্তি অদৃশ্য হয়ে যায়। রাফি খাম খুলে দেখে সেখানে একাধিক সিক্রেট ক্যাবিনেট মিটিং-এর নথি, ভুয়া ঘএঙ-এর অর্থপ্রাপ্তির রেকর্ড, ও একটি লিস্ট: “ভবিষ্যৎ ঝুঁকির তালিকা”- সবার নিচে তার নিজের নাম!  ঘরের দরজা বন্ধ করে মোহাম্মদ রাফি ফাইলগুলো বিছানার ওপর ছড়িয়ে দেয়। বাতি নিভিয়ে, কেবল ডেস্ক ল্যাম্প জ্বেলে পড়ে সে এক এক করে। নথিগুলো পুরাতন টাইপ রাইটারে লেখা, কিছু জায়গা কালি ফেটে উঠে গেছে। মাঝে মাঝে ইংরেজি আর বাংলার অদ্ভুত মিশ্রণ-“Strategic Elimination under Shadow Protocol B”, “জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে গোপন ক্লিনজিং প্রোগ্রাম”, “অভ্যন্তরীণ শত্রু নিধন প্রকল্প: মডেল ‘চিহ্নিত রক্ত’। রাফির গলা শুকিয়ে আসে। হঠাৎ চোখে পড়ে একটা পেইজ: মেমো নম্বর: CMÑSX/11 প্রেরক: ছায়া মন্ত্রিসভা, দপ্তর: গোপন অভ্যন্তরীণ স্থিতি। বিষয়: পর্যবেক্ষণ ও অপসারণ - MMZ (Mohammad Zari)  রাফির দেহ শীতল হয়, সে নিজেই টার্গেট! কিন্তু কে পাঠিয়েছে এগুলো? কেন পাঠিয়েছে? বিছানার পাশে রাখা ফোনটা হঠাৎ করে অনবরত কম্পন করতে শুরু করে। স্ক্রিনে কিছু আসে না, শুধু ব্ল্যাক স্ক্রিন। এরপর ভেতর থেকে এক ভয়ানক চাপা গলার রেকর্ডেড শব্দ: – “তুমি যা পেয়েছো, তা জানার অনুমতি তোমার ছিল না। এখন ফেরার পথ নেই। তুমি দেখবে তারা কেমন।” সঙ্গে সঙ্গে ফ্যান নিজে নিজে বন্ধ হয়ে যায়। আলো নিভে যায়। ঘর ঠান্ডা হয়ে আসে। জানালার পর্দা কাঁপতে থাকে, যেন বাইরের অন্ধকার ভেতরে ঢুকতে চাইছে। রাফি চিৎকার করে উঠে- কে আছো?” কোনো উত্তর নেই। শুধু দেওয়ালের দিক থেকে একটা চাপা ফিসফিস-  “আমরা তো সবখানেই আছি... ছায়া কোথায় নেই?”  ঢাকার গলিঘুঁজির ভেতরে এক সময়কার আলোচিত মন্ত্রী রাশিদ খসরু-এর পুরনো বাসভবন। এখন সেখানে কেউ থাকে না। কেবল একটা কেয়ারটেকার, যে বলে, “স্যার কারো সঙ্গে দেখা করেন না।” কিন্তু মোহাম্মদ রাফিকে দেখে সে চুপ হয়ে যায়। “আপনি... আপনি কি রাফি সাহেব?” কেয়ারটেকার ধীরে বলে।  রাফি কাঁধে ঝোলা টেনে হ্যাঁ বলে।  “স্যার আপনার জন্য ওয়েট করছেন।” রাফি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কীভাবে জানেন আমি আসছি? কেয়ারটেকার একটা শুকনো হাসি হেসে বললো, -উনি সব জানেন, ওনাকে জানতে হয়। একটা হুইলচেয়ারে বসে আছেন রাশিদ খসরু-চোখে কালো চশমা, মুখভর্তি দাড়ি। -তুমি এসে গেছ, রাফি? -আমি ২৯ জুলাই সম্পর্কে জানতে চাই মি. খসরু। বৃদ্ধ হোহো করে হেঁসে উঠে। জানলে মৃত্যু আসে। ঐ ৫০৪ জন, ওরা জেনেছিল। রাফি থমকে যায়। “ছায়া মন্ত্রিসভা কি সত্যিই আছে?”  খসরু হাসেন না, কাঁপা গলায় বলেন-  “ওটা আসলে নেই- এই ‘না থাকা’ই ওদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র।  তুমি জানো কারা সত্যকে বেশি জানে? মৃতরা। আর ওরা মৃতদের নিয়েই সরকার চালায়।”  “মানে?”  “ছায়া মন্ত্রিসভার সদস্যরা কেউ বেঁচে নেই- কাগজে নেই, টিভিতে নেই, তবে আদেশ দেয়, নিয়ন্ত্রণ করে। এরা তথ্যের গভীরে বাস করে, ডেটা, মনিপুলেশন, এবং হরর দিয়ে কাজ চালায়।” হঠাৎ করেই ছাদের আকাশে বিদ্যুৎ চমকায়। একটা ছায়ামূর্তি রাশিদ খসরুর পেছনে এসে দাঁড়ায়-  চেহারা নেই, শুধু ঝাপসা কালো কুয়াশার মতো আকৃতি। “তুমি বেশি জেনে গেছো রাফি।” খসরুর চোখ দুটো ফাঁকা হয়ে যায়। শরীর ধীরে ধীরে গলে যেতে থাকে।  ছায়াটা হাসে।

শিল্পের ব্যক্তিত্ব

শিল্পের ব্যক্তিত্ব

শিল্প কী? আর্ট কাকে বলে? না, এটি আজকের প্রশ্ন নয়। তাহলে শিল্প কি কেবল রঙের খেলা, সুরের ছোঁয়া, কিংবা শব্দের বিন্যাস? নাকি শিল্প নিজেই এক ধরনের ব্যক্তিত্ব? আজকের আলোচনা এই ব্যক্তিত্ব নিয়ে। শিল্পের ব্যক্তিত্ব। আর্টের কি কোন পার্সোনালিটি আছে? শিল্পের কি কোন ব্যক্তিত্ব আছে? থাকলে সেটা কী?  এই প্রশ্ন আমার মাথায় প্রথম আসে এক বিকেলে। ছুটির বিকেলে। সামারের এক বিকেলে লন্ডনের এক ছোট আর্ট গ্যালারিতে। এক অচেনা শিল্পীর ক্যানভাসের দিকে তাকিয়ে মনে হলো আমি যেন কারও চোখের দিকে তাকিয়েছিলাম। ক্যানভাসটি নীরব ছিল, কিন্তু তার নীরবতা ছিল উচ্চকিত। যেন কেবল দেখার নয়, শোনার মতোও কিছু ছিল ওটায়। ছবিটি যেন আমার সাথে কথা বলছিল। আমরা অনেক সময় ভাবি, আর্টকে বুঝতে হলে, শিল্পকে চিনতে হলে বিশেষজ্ঞ হতে হবে। কিন্তু আমি মনে করি- শিল্প বোঝার জন্য দরকার হৃদয়। আর্ট বুঝতে হলে তার দিকে হার্ট দিয়ে তাকাতে হয়। অনেকটা ভালোবাসা বোঝার মতো। ভালোবাসা যেমন চোখের ভাষায় বলে ওঠে, শিল্পও তেমনি এক নিঃশব্দ ভাষায় কথা বলে। আমরা যদি মন খুলে শুনি, শিল্পও তখন নিজের গল্প বলে।

একশ ডলার চিনেছি এবার তোমাকে!

একশ ডলার চিনেছি এবার তোমাকে!

একশ ডলার চিনেছি এবার  তুমি যে কত দামি! ছাব্বিশ বছর কেটে গেলো- চিনিনি তোমাকে আমি! উৎসবে গেছি, সমাবেশে, মিলেছে তো হাততালি, তোমাকে দিতে পারে না বলেই অনেকের জোটে গালি। অপমানটা দিয়েছে ব‍্যথা যখন হাতটা খালি  কেউ চেনেনি আমাকে প্রিয়  আমি কি বোধের মালি! দাতা ছিলাম স্পন্সর  সহানুভূতির সাথে কথার শুলেও ঝরেছে আঁখি  তিমিরের বহুরাতে! কালের গায়ে টিকলো কি তা যার হয় ঢালাঢালি ব‍্যথিতের ব‍্যথা খোঁজে না অনেকে  দু’হাত যখন খালি! বন্ধু বলতো- জীবনটা পুরো তোমার  যদি পকেটে থাকে টাকা কেউবা বলতো যদি থাকে  বড়লোক কোন কাকা! প্রেম জমে না শুদ্ধ প্রাণের  রূপে-রসে ঢালা-ঢালি ধনীদের তবে দেখেছি এবার পকেটের জোরাতালি। তবে এবার বইমেলা  স্মৃতি হলো অস্টিনে কোন কবিতার নতুন কথায় রেখেছি সবারে চিনে কেউবা এখানে নতুন করে রাখলো আমাকে ঋণে জ্ঞান বাগিচায় জল দিলো যে তৃষ্ণার এই দিনে। আমি কেন যে করিনি যত্ন নতুন করে খুঁজলাম! এবার তবে বুঝলাম, একশ ডলার মানে প্রিয়  বিশাল কারো রত্ন! যার বিহনে অনেক কিছুই থাকে তো নিছক স্বপ্ন! ডলার যেখানে স্পন্সর সেখানে জাগে প্রাণ  এখন থেকে মূল্য পাবে- আমার প্রতিটি দান! প্রবাসের এই মরুভূমিতে ডলারের নাম টাকা শত সাধনার শ্রমে-ঘামে ক‍্যানভাসে ছবি আঁকা!

মৃত্যুভয়

মৃত্যুভয়

যদি করি আঁখিদ্বয় বন্ধ  দেখি মৃত্যুর কূপে ভাসছে তরঙ্গ  ফের খুললে চোখসজল দেখা যায় মৃত্যুর ক্ষেত ফসল। সকালে সূর্য ওঠে জীবন স্বরূপ  মৃত্যুরূপে বিকেলে ডুবে যায়  শয়নে আধা মৃত্যু  জাগরণে প্রাণ ফিরে আয়  মৃত্যুকে নিয়ে হয় গান  ঈমানে সুর লয়ে ওঠে তান আস্তিক নাস্তিক যে বা আছে সব  এইখানে এসে নেই কোনো ভেদ  নিতে হবে মৃত্যুর স্বাদ আবার যখনি আসে সিলেকশন অর নিয়তির তর্ক মৃত্যুকে করে তারা  নানা অর্থে অর্থবিভেদ সে করুক না হয় বিতর্ক  মানুষ কেবলি ধায়  মৃত্যুপানে প্রতিনিয়ত  জন্মিলে মরিতে হইবে একথা মানেনি কে কবে  তবু ভাবলে না  জীবনকে নিয়ে তবু পেলেনা ভয়  মৃত্যুর দুয়ারে যে মৃত্যু ডাকে সর্বনাশ, অনামিশা কাল কিংবা আলোর ঝলক  কাটায় পৃথিবীর জঞ্জাল

হেমিলির না বলা কথা

হেমিলির না বলা কথা

‎"নাই প্রতিবাদ, তবুও শব্দে  ‎লেগে থাকে ক্ষীণ ব্যথা,  ‎বাবা-মা, জানো কি  ‎নিঃশব্দও বলে যায় বহু কথা!?" ‎  ‎একটি গ্রামে বাস করত একটি মেয়ে, একটি কিশোরী, হেমিলি।  ৩ বোনের ছোট সে। ভাই নেই, তাই বাবা মা ছিল বেশ দুশ্চিন্তায়! যখন হেমিলির বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে যায়, তখন সব দায়িত্ব যেন এসে পরে হেমিলির ওপরে। হেমেলির  মা ছিল ভীষণ  অসুস্থ। তার বাবা বাসায় থাকে না কারণ তিনি ছিলেন খুব ব্যস্ত একজন মানুষ। হেমিলির কথা বলার সাথী তার মা।  ‎ ‎অযথা বাহিরে যায় না হেমিলি। সব সময় তার যে মায়ের দেখাশোনা করতে হয়। যখন সে স্কুলে যায়, তখন তার মায়ের জন্য অনেক চিন্তা হয়। কারণ তার মা অনেক অসুস্থ। বাসায় কোনো কাজের লোক রাখতে পারে না তারা। কারণ এই সমাজে বিশ্বাসী লোকেরও যে বড় অভাব।  বোনরা কখনো বেড়াতে এলে কিছুটা নির্ভার থাকতে পারে সে।  ‎ ‎ হেমেলি পড়াশোনাতে খুব একটা ভালো না, অন্তত সবাই তাই বলে! কিন্তু তার ইচ্ছা সে লিখবে। সে একজন কাজী নজরুল হতে চায়, যার লেখায় থাকবে প্রতিবাদ, ভালোবাসা  আর বিদ্রোহ! ‎ ‎কিন্তু তার বাবা চায় সে অন্য কিছু হোক! ‎ ‎হেমিলি স্কুলেও যায় কম। কারণ তার কোনো মনের মতো বন্ধু নেই, যে তাকে বুঝবে। হেমিলির  বুক ভরা হতাশা।  কিন্তু তাও তার কোন অভিযোগ নেই; কারো কাছে, কারো বিরুদ্ধে!  ‎  ‎হেমিলি তার বাবা এবং মা কে অনেক ভালোবাসে।  ‎ ‎হেমিলি নিজের লেখার প্রতি খুব মনোযোগী। যখন সে অবসর পায়, তখন সে তার লেখায় সেই সময়টুকু লাগিয়ে দেয়। ‎  ‎হেমিলি অনেক বড় একজন লেখিকা হতে চায়! ‎ ‎শুধু কি এতটুকু কথাতেই জীবন সীমাবদ্ধ?  ‎ ‎না! ‎ ‎হেমিলি গায়ের রং চাপা । এইতো, সাদা-কালোর মাঝামাঝি! হরিণের মতো চোখ তার, কিন্তু কে দেখে? এই সমাজে এখনো যে সাদা চামড়ার দামই বেশি! ‎ ‎হেমিলি এই নিয়ে অনেকের অনেক মন্তব্যের শিকার হয়। অনেক ফিসফাস তাকে নিয়ে। কিন্তু এতে তার দোষ কি? সৃষ্টিকর্তা তাকে নিজের মতো করে বানিয়েছে! দোষ হলে তার হবে! এটা সবাই বোঝে না!   ‎ ‎হেমিলি একজন কাজী নজরুল হতে চায়, যার লেখায় থাকবে প্রতিবাদ, ভালোবাসা  আর বিদ্রোহ!!