
(পূর্ব প্রকাশের পর)
কোথায় ফোকাস করবো- এখানে ব্রায়োনি লজে নাকি গডফ্রের ইনার টেম্পল ঠিকানায়? এতসব ডিটেইল দিয়ে তোমাকে বোধহয় বোর করছি, ওয়াটসন। কিন্তু এসব না বললে তো সমস্যাটা ঠিক বোঝা যাবে না।’
‘আমি মোটেও বোর হচ্ছি না।’ মন্তব্য করলাম। ‘খুবই আগ্রহ নিয়ে তোমার কথা শুনছি।’
‘বেশ। তো এইসব নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে ছিলাম।’ হোমস বলতে থাকলো। ‘এমন সময় দেখি একটা ক্যাব এসে দাঁড়ালো বাড়িটার সামনে। ক্যাব থেকে লাফ দিয়ে নামলো এক ভদ্রলোক। খুব হ্যান্ডসাম, গোঁফ আছে- বুঝলাম একটু আগে এর কথাই বলেছে কোচোয়ান আমাকে। দেখে মনে হলো ভীষণ তাড়া আছে লোকটার, ক্যাবম্যানকে সে অপেক্ষা করতে বললো চেঁচিয়ে। বাড়ির মেইড দরজা খুলে দিল- তার পাশ দিয়ে দ্রুত ভেতরে ঢুকে গেলো লোকটা। বোঝা যায় এই বাড়িতে তার নিয়মিত যাতায়াত আছে।
আধ ঘণ্টার মতো বাড়ির ভেতরে কাটালো লোকটা। তাকে আমি ড্রইংরুমের জানালা দিয়ে দেখতে পেলাম- হাত নেড়ে কথা বলছে, পায়চারি করছে উত্তেজিতভাবে। ইরিনকে দেখা গেল না। একটু পর বেরিয়ে এলো লোকটা, খুব অস্থির। ক্যাবে উঠতে উঠতে পকেট থেকে ঘড়ি বের করে সময় দেখলো। ‘তুফানের বেগে ঘোড়া ছুটাও!’ চেঁচিয়ে বললো সে ক্যাবম্যানকে। ‘প্রথমে রিজেন্ট স্ট্রিট, তারপর এজওয়ার রোডে সেন্ট মনিকা চার্চে যাবে। অর্ধেক গিনি বখশিস- যদি কুড়ি মিনিটে পৌঁছাতে পারো!’
চলে গেল ক্যাব। পিছে পিছে যাবো কিনা ভাবছি, তখন একটা ল্যান্ডাউ এসে দাঁড়ালো। কোচম্যানের কোটের বোতাম খোলা, টাই ঠিকমতো পরার সময় পায়নি। ঘোড়াটা পুরোপুরি থামবার আগেই ঝড়ের বেগে বেরিয়ে এলো ইরিন এডলার। এক মুহূর্তের জন্য তাকে দেখলাম- অপরূপ সুন্দরী, এমন মেয়েদের জন্যই পুরুষরা মরতে রাজি থাকে।
‘সেন্ট মনিকা চার্চে যাও, জন।’ বললো ইরিন। ‘বিশ মিনিটে যেতে পারলে অর্ধেক মোহর বখশিস।’
দৌড়ে গিয়ে ল্যান্ডাউয়ের পিছে উঠবো কিনা ভাবছি, এমন সময় একটা ক্যাব পেয়ে গেলাম। আমার পোশাক-আশাক দেখে নিষেধ করতে যাচ্ছিলো- তার আগেই চড়ে বসলাম ক্যাবে, বললাম, ‘অর্ধেক মোহর পাবে, যদি কুড়ি মিনিটের মধ্যে সেন্ট মনিকা চার্চে যেতে পারো।’ বারোটা বাজতে তখন পঁচিশ মিনিট বাকি।
দ্রুত ছুটলো ক্যাব। পৌঁছে দেখি আমার আগেই অন্য দুজন পৌঁছে গেছে। তাদের ক্যাব আর ল্যান্ডাউ দাঁড়িয়ে আছে, ঘোড়াগুলোর গা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। ক্যাবম্যানকে ভাড়া দিয়ে চার্চে ঢুকে গেলাম। ঐ দুজন আর যাজক দাঁড়িয়ে আছে বেদির সামনে। আর কেউ নেই চার্চে। সাধারণ একজন ভবঘুরে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরতে ঘুরতে যেভাবে গির্জায় ঢুকে যায়, সেভাবে ভেতরে ঢুকে আমি একটু এগিয়ে গেলাম আইল ধরে। হঠাৎ তিনজনই ঘুরে দাঁড়ালো এবং আমাকে চমকে দিয়ে গডফ্রে নর্টন ছুটে এলো আমার দিকে। ‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।’ বললো সে হন্তদন্ত হয়ে। ‘আপনাকে পেয়েছি, আসুন আসুন এদিকে।’
‘এ কী...! কী বিষয়?’ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
‘আসুন প্লিজ, মাত্র তিন মিনিট। নইলে আইনত বৈধ হবে না।’
কিছু বুঝে উঠবার আগেই আমাকে টানতে টানতে বেদির কাছে নিয়ে গেল নর্টন। কী ঘটছে, কী ঘটনা না বুঝেই আমি পাদ্রির কথা অনুযায়ী বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়তে শুরু করে দিলাম- এইসব মন্ত্রের বিন্দু বিসর্গও আমি জানি না। বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে ইরিন এডলার আর গডফ্রে নর্টন। চোখের পলকে আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়ে গেল। একদিকে বর অন্যদিকে কনে আমাকে ধন্যবাদ দিচ্ছে, সামনে পাদ্রি তাকিয়ে আছেন হাসি মুখে।
এমন অদ্ভুত ঘটনা আমার জীবনে আর কখনো ঘটেনি ওয়াটসন- তাই হাসছিলাম একটু আগে। বিয়েতে একজন সাক্ষীর দরকার ছিল, সাক্ষী ছাড়া পাদ্রি বিয়ে দিতে পারছিলেন না। আমি এসে সবাইকে উদ্ধার করেছি। কনে আমাকে একটা মোহর দিয়েছে। ভাবছি আমার ঘড়ির চেইনের সঙ্গে মোহরটাকে লাগিয়ে নেবো- এমন একটা ঘটনার স্মৃতি হয়ে থাকবে মোহরটা।
‘সবকিছু তো ওলট-পালট হয়ে গেল।’ আমি বললাম। ‘তারপর কী হলো?’
‘তারপর তো বর-কনে গির্জা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে আর আমি ভাবছি এবার কী করবো। দেখি ওরা দুজন যার যার বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছে। ‘বিকেল পাঁচটার সময় বের হবো প্রতিদিনের মতো।’ ইরিন বললো গডফ্রেকে। ব্যস এটুকুই যথেষ্ট আমার জন্য। আমি আমার ব্যবস্থা করতে চললাম।’
‘কী ব্যবস্থা?’ কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইলাম।
‘আপাতত কোল্ড বিফ আর এক গ্লাস বিয়ার।’ আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বেল বাজালো হোমস। ‘এত ব্যস্ত ছিলাম সারাদিন খাবার কথা মনেই ছিল না। সন্ধ্যাটাও খুব ব্যস্ততায় কাটবে। ডাক্তার, তোমার সহযোগিতা আমার দরকার যে।’
‘আমি খুশি মনে রাজি।’
‘আইন ভাঙতে আপত্তি নেই তো?’
‘একটুও না।’
‘অ্যারেস্ট হওয়ার ঝুঁকি আছে কিন্তু।’
‘ভালো কাজে ঝুঁকি থাকবেই।’
‘হ্যাঁ, কাজটা খুবই ভালো এবং পরোপকারী।’
‘তাহলে আমি সদা প্রস্তুত।’
‘জানতাম তুমি রাজি হবে।’
‘কাজটা কী?’
‘মিসেস টার্নার আগে খাবারটা দিয়ে যাক, তারপর বলছি।’ ল্যান্ডলেডি একটা ট্রে দিয়ে গেলেন। ক্ষুধার্ত হোমস খাবারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। খেতে খেতে বললো, ‘সময় বেশি নেই। খেয়েই দৌড়াতে হবে ঘটনাস্থলে। এখন পাঁচটা বাজে। দু’ঘণ্টার মধ্যে মিস ইরিন...ও হ্যাঁ এখন মিসেস ইরিন- বাড়ি ফিরে আসবে। তার আগেই আমাদের ব্রায়োনি লজে পৌঁছাতে হবে।’
‘পৌঁছে তারপর?’
‘পরেরটা আমার ওপর ছেড়ে দাও। শুধু একটা বিষয় খেয়াল রাখবে- যাই ঘটুক না কেন, কোনো অবস্থাতেই তুমি ইন্টারফেয়ার করবে না।’
‘কিছুই করবো না?’
‘একদম কিচ্ছুটি না। অপ্রিয় কিছু ঘটনা ঘটতে পারে। ধারেকাছেও যাবে না। এভাবেই হয়তো বাড়ির ভেতরে ঢুকতে পারবো আমি- একটু পরেই দেখবে ড্রইংরুমের জানালা খুলে গেছে। খোলা জানালার পাশে গিয়ে পজিশন নেবে।’
‘ঠিক আছে।’ (চলবে... )
প্যানেল