ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

সাহিত্য

সাহিত্য বিভাগের সব খবর

বোহেমিয়ার স্ক্যান্ডাল

বোহেমিয়ার স্ক্যান্ডাল

(পূর্ব প্রকাশের পর) ‘আমার দিকে লক্ষ্য রাখবে। জানালা দিয়ে আমাকে দেখতে পাবে তুমি।’ ‘ও. কে।’ ‘একটা জিনিস দিচ্ছি তোমাকে। একসময় আমি এভাবে হাত তুলবো- হাত তোলা মাত্রই জিনিসটা তুমি ছুঁড়ে মারবে ভেতরে। তারপর আগুন আগুন বলে চিৎকার-চ্যাঁচামেচি জুড়ে দেবে। ঠিক ঠিক বোঝাতে পেরেছি?’ ‘একশ’ পার্সেন্ট।’ ‘জিনিসটা ভয়ানক কিছু নয়।’ হোমস আমাকে আশ্বস্ত করলো। সিগারের মতো দেখতে লম্বা একটা জিনিস সে বের করলো পকেট থেকে। ‘এটা একটা সাধারণ স্মোক-বোম, দুই মাথায় দুটো ক্যাপ আছে- ছুঁড়ে দিলে তাতে আগুন ধরে যাবে। এটুকুই তোমার কাজ। তুমি আগুন আগুন চিৎকার দেওয়া মাত্র আরও কয়েকজন লোক তোমার সঙ্গে যোগ দেবে। এরপর তুমি রাস্তার মাথায় গিয়ে অপেক্ষা করবে। একটু পরেই আমি চলে আসবো তোমার কাছে। সব ঠিক ঠিক বুঝেছো?’ ‘আমি ইন্টারফেয়ার করবো না কোনো কিছুতে। জানালার কাছে পজিশন নেবো। ইশারা পাওয়া মাত্র স্মোকবোম জানালা দিয়ে ছুঁড়ে আগুন আগুন চিৎকার দিতে থাকবো, তারপর রাস্তার মাথায় গিয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।’      ‘একদম ঠিক।’     ‘নিশ্চিন্ত থাকো- যা বলেছো, তাই করবো অক্ষরে অক্ষরে।’     ‘চমৎকার। এবার তাহলে আমি আমার নতুন ভূমিকার জন্য প্রস্তুত হই।’

নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত ত্রিশাল অধ্যায়

নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত ত্রিশাল অধ্যায়

বাংলা সাহিত্যের বিদ্রোহী পুরুষ, মানবতার কবি ‘কাজী নজরুল ইসলাম’। তাঁর জীবনযাত্রা ছিল যেমন বর্ণময়, তেমনি সংগ্রামে  ঘেরা। তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপে যেমন কবিতার ছন্দ, তেমনি সময়ের প্রতিধ্বনি। এই অসামান্য জীবনগাথার এক মর্মস্পর্শী অধ্যায় জড়িয়ে আছে ময়মনসিংহের ত্রিশাল নামক এক নিভৃত জনপদের সঙ্গে। সেখানে দাঁড়িয়ে আছে একটি প্রাচীন বটগাছ, যা নীরব অথচ জাগ্রত, যেন নজরুলের কিশোর বয়সের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় প্রতিটি ছায়াঘন দুপুরে। এই বটগাছ শুধু প্রকৃতির অনুপম নিদর্শন নয়, এটি নজরুল স্মৃতির এক জীবন্ত ধারক। এখানেই তাঁর জীবনের এক নীরব, নিঃস্ব অথচ গভীর তাৎপর্যময় অধ্যায় অতিবাহিত হয়। দারিদ্র্য, অনিশ্চয়তা ও শিক্ষার টানাপোড়েনের মাঝেও নজরুল যে সাহস, স্বপ্ন আর সৃজনশীলতার বীজ বপন করেছিলেন, ত্রিশালের সেই মাটিতে তা আজও অনুভবযোগ্য। চাচা কাজী বজলে করিমের কাছে ফারসি শেখেন এবং তাঁর অনুপ্রেরণায় উর্দু-ফারসি মিশ্রিত মুসলমানি বাংলায় লেখালেখি শুরু করেন। লেটো দলে যোগ দিয়ে অল্প বয়সেই গীতিনাট্য, কবিগান ও প্রহসন রচনা করে ‘ছোট উস্তাদজি’ নামে পরিচিত হন। পরে লেটো দল ছেড়ে আসানসোল ইংরেজি হাইস্কুলে ভর্তি হন, কিন্তু আবারও পড়ালেখা থেমে যায়। ভবঘুরে জীবনে গান রচনা ও পরিবেশন শুরু করেন। এক খ্রিস্টান রেলগার্ড তাঁর গান শুনে চাকরি দিলেও তাতে বেশি দিন টিকতে পারেননি। পরে নানা ঘোরাঘুরি শেষে তিনি আসানসোলের এক রুটির দোকানে এসে ওঠেন। রুটির দোকানে কাজ শেষে নজরুল রাত কাটাতেন আসানসোল থানার সাব-ইন্সপেক্টর কাজী রফিজউল্লাহর বাড়ির বারান্দায়। একদিন দারোগা সাহেব তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানলেন, ছেলেটি রুটির দোকানে কাজ করে ও থাকার জায়গা নেই। ‘কাজী’ উপাধি শুনে তিনি খুশি হন এবং স্ত্রী শামসুননেসার পরামর্শে নজরুলকে বাসায় কাজের জন্য রাখেন। নজরুল কাজের ফাঁকে পড়াশোনা ও গান গাইতেন। ছুটিতে গেলে দারোগা সাহেব তাঁকে সঙ্গে করে নিজগ্রাম ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাজীর সিমলায় নিয়ে যান। কাজীর সিমলা থেকে দরিরামপুর হাইস্কুলের দূরত্ব ও কষ্টকর যাতায়াতের কথা ভেবে দারোগা রফিজউল্লাহ নজরুলের থাকার ব্যবস্থা করতে চাইলেন। হেডমাস্টার বিপিনচন্দ্র চক্রবর্তীর পরামর্শে তিনি নজরুলকে ত্রিশাল নামাপাড়ায় আত্মীয় কাজী হামিদুল্লাহর বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে হামিদুল্লাহর মাধ্যমে যোগাযোগ হয় বিচুতিয়া বেপারীর সঙ্গে। দারোগা সাহেব নজরুলকে ভালো বংশের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিয়ে তাঁর দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেন। বিচুতিয়া বেপারী আনন্দের সঙ্গে সম্মতি দেন এবং লেখাপড়ার যাবতীয় দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেন। বিদায় নেওয়ার আগে দারোগা সাহেব নজরুলকে ভালোভাবে পড়াশোনা ও আচরণের উপদেশ দিয়ে যান। প্রথম কয়েকদিন নজরুলের পরিচিতির পালাতেই কেটে গেল। অল্পদিনের মধ্যেই বিচুতিয়া বেপারীর বাড়ির সবাইকে নজরুল আপন করে নিলেন। বেপারী বাড়ির আশপাশে তাঁর কয়েকজন বন্ধুও জোটালেন। বেপারী বাড়ির খুব কাছেই ছিল শুকনি বিল। আর বিলের পাড়ে ছিল গভীর জঙ্গল। সেখানে রয়েছে বিরাট এক বটগাছ। বটের ছায়ায় বসে নজরুল বাঁশি বাজাতেন। বন্ধুদের বলতেন, বটের ছায়া খুবই ভালো। গাছটি স্কুলে যাওয়ার পথে ছিল বলে নজরুল বটের শীতল ছায়ায় বিশ্রাম নিতেন। বন্ধুদের নিচে বসিয়ে নজরুল বটগাছে উঠে বাঁশি বাজাতেন। প্রায় প্রতিদিন বিকেলেই নজরুল বাঁশি হাতে শুকনি পাড়ে চলে যেতেন। শুকনি পাড়ে বটগাছের নিচে বসে বাঁশি বাজাতেন।  ত্রিশাল ছাড়ার কিছুদিন আগে এক রাতে জায়গির বাড়িতে নিচু স্বরে কাঁদছিলেন নজরুল। বিচুতিয়া বেপারী জিজ্ঞাসা করলে নজরুল জানান, মায়ের কথা মনে পড়ে কাঁদছেন। বেপারী সান্ত¦না দিয়ে বলেন, চাইলে বাড়ি ঘুরে আসতে পারেন, তিনি পথ খরচ দেবেন। বিচুতিয়া বেপারীর বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে নজরুল দরিরামপুর হাইস্কুলে গিয়ে এক ছাত্রকে একটি চিঠি হেডমাস্টারের কাছে দিতে বলেন। চিঠি পড়ে হেডমাস্টার বললেন, ‘আমার স্কুলের মুক্তা আজ চলে যাচ্ছে, ওকে ফিরিয়ে নিয়ে এসো।’ কিন্তু মুক্তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং এভাবেই নজরুল ত্রিশাল থেকে বিদায় নিয়ে আর ফিরে আসেননি। তবে ত্রিশালের মাটি, আকাশ আর সেই অদ্ভুত মায়া ছড়ানো বটগাছ যেন আজও সাক্ষ্য দেয় নজরুলের শৈশব সংগ্রামের, স্বপ্নের এবং সৃজনশীলতার এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের। 

শুদ্ধ ও মননশীল সাহিত্যপ্রেমী

শুদ্ধ ও মননশীল সাহিত্যপ্রেমী

তাঁর লেখার স্বতন্ত্র্য, তথ্যবিন্যাস ও ভাষাভঙ্গি পাঠকের চেতনাকে আলোড়িত করে। তিনি প্রকৃত অর্থে একজন সব্যসাচী লেখক, গবেষক ও সম্পাদক। তাঁর রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থসংখ্যা ১৫০টি। মান্নান সৈয়দ শুধুমাত্র ‘কবি’ হয়ে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি; সে কারণে নিজেকে প্রবন্ধ রচনা, আলোচনা ও সম্পাদনায় ব্যাপৃত রেখেছিলেন। তাঁর গল্পগ্রন্থ ‘সত্যের মতো বদমাশ’ গল্পটি (১৯৬৮) সালে প্রকাশিত হলে তারুণ্য ও নতুন প্রজন্ম তা সঙ্গে সঙ্গে লুফে নেয়। তাঁর গল্প-উপন্যাসের ভাষা কবিতাময়ী, ব্যতিক্রমধর্মী, রূপকধর্মী বিবরণ ও চরিত্রের মধ্য দিয়ে তিনি বারবার ফিরে এসেছেন নিজের কাছে, তাঁর পাঠকের কাছে। তিনি ছিলেন নীলকণ্ঠী। কষ্টের এক জীবনের পরতে পরতে বিষাদ, বেদনা ও আনন্দকে তিনি একসঙ্গে ধারণ করেছেন। ষাট দশকে মান্নান সৈয়দ ‘মাতৃ হননের নান্দী পাঠ’ গল্পে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠেন। তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘সত্যের মতো বদমাশ’ প্রকাশিত হলে গ্রন্থটি পাকিস্তান সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। স্বাধীনতার পর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। আবদুল মান্নান সৈয়দের ২৮টি গল্প নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘আবদুল মান্নান সৈয়দের গল্পসংগ্রহ। ‘জলপরি’, ‘কে তুমি’ ও ‘চোখ’ অন্তর্জগতের কথায় অগ্রগণ্য হয়েছে। ‘চলো যাই পরোক্ষে’ গল্পে তিনি পাঠককে নতুন ভাবনায় দীক্ষিত করেছেন। গতিশীল, মার্জিত ও কাব্যিক ভাষার সাহিত্য জগতে প্রবেশ করেছিলেন তিনি। গ্রাম্যতাবর্জিত চিত্তজয় করা গল্প তাঁর মতো কেউ বলতে পারেননি। গল্পে নিরন্তর পরীক্ষা, নিরীক্ষা, উপস্থাপন ভাঙা গড়া ‘মাতৃ হননের নান্দী পাঠ’ থেকে ‘এক অমানুষের’ গল্পে কুশলতা বিস্তৃত হয়েছে। বুনন, গঠন ও কারুকাজ মান্নান সৈয়দের গল্পের প্রাণশক্তি। আনন্দ পাঠ তাঁর গল্পে পাঠকের বাড়তি পাওনা। কথাসাহিত্যে মান্নান সৈয়দ সমানভাবে উপস্থিত।  ১৯৭২ সালে জীবনানন্দ দাশ সম্পর্কে তাঁর রচিত প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘শুদ্ধতম কবি’ প্রকাশিত হলে সে সময় তিনি নিজেকে সাহিত্যের সব শাখাতেই উন্মোচন করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১), কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬), মোহিতলাল মজুমদার (১৮৮৮-১৯৫২), ফররুখ আহমদ (১৯১৮-১৯৭৪), শাহাদাৎ হোসেন (১৮৯৩-১৯৫৩), সৈয়দ মুজতবা আলী (১৯০২-১৯৮১), বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-১৯৭৪), অজিত দত্ত (১৯০৭-১৯৭৯), সমর সেন (১৯১৬-১৯৮৭), শামসুর রাহমান (১৯২৯-২০০৬), আল-মাহমুদ (১৯৩৬-২০১৯), শহীদ কাদরী (১৯৪২-২০১৬) ইত্যাদি সাহিত্যকর্ম নিয়ে তিনি ব্যাপক আলোচনা করেছেন। এদের সঙ্গে তাঁর উৎসাহী দৃষ্টিতে উঠে এসেছিল ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার সাহিত্যিকদের সাহিত্য দর্শন, তত্ত্ব ও তথ্য। জীবনানন্দ দাশের পাশাপাশি কবি কাজী নজরুল ইসলামের দিকে তাঁর মনোযোগ বেশি ছিল। জীবনানন্দ দাশের অপ্রকাশিত রচনা উদ্ধার করে তিনি ‘শিল্পকলা ও কণ্ঠস্বর’ পত্রিকায় বহুমাত্রিক ভাবনার ঋদ্ধ প্রবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর রচিত প্রবন্ধের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র গ্রন্থ তালিকাগুলোর কথাই এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে :  জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে তাঁর রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থ : শুদ্ধতম কবি (১৯৭২), জীবনানন্দ দাশের কবিতা (১৯৭৪), সমালোচনা সমগ্র: জীবনানন্দ দাশ (১৯৮৩ সম্পাদিত), জীবনানন্দ (১৯৮৪), জীবনানন্দ-১ (১৯৮৪ সম্পাদিত), কিছুধ্বনি (জীবনানন্দ সংখ্যা ১৯৯৩ সম্পাদিত), সমগ্র কবিতা: জীবনানন্দ দাশ (১৯৯৩ সংকলিত সম্পাদিত), জীবনানন্দ দাশের পত্রাবলী (কবির স্বহস্তে লিখিত ৪৮টি পত্র ও তাকে লেখা ৫টি পত্রের সংকলন ১৯৮৭-তে সম্পাদিত), জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৮৯ সম্পাদিত), প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত কবিতা সমগ্র: জীবনানন্দ দাশ (১৯৯৪ সম্পাদিত), বনলতা সেন: জীবনানন্দ দাশ (১৯৯৬ সম্পাদিত) ও রূপসী বাংলা: জীবনানন্দ দাশ (১৯৯৬ সম্পাদিত) ইত্যাদি গ্রন্থমালা মান্নান সৈয়দের উল্লেখিত গ্রন্থ। মান্নান সৈয়দের উল্লেখিত  গবেষণা প্রবন্ধ: কবি ও কবিতা (১৯৭৭), আমার বিশ্বাস (১৯৮৪), ছন্দ (১৯৮৫), চেতনায় জল পড়ে শিল্পের পাতা নড়ে (১৯৮৯), পূর্ণবিবেচনা (১৯৯০), দরোজার পর দরোজা (১৯৯১), বিবেচনা-পূর্ণবিবেচনা (১৯৯৪), রবীন্দ্রনাথ (২০০১), ঈশ্বর গুপ্ত থেকে শহীদ কাদরী (২০০৭) ও বিংশ শতাব্দীর শিল্প আন্দোলন (২০০৮)। শুদ্ধতম কবির প্রথম অধ্যায়ের ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ ইংরেজি কবিতা ও জীবনানন্দ দাশ। ইংরেজি ও ফরাসি কবিতার সঙ্গে জীবনানন্দের কবিতার অনুকরণীয় বিষয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ‘উত্তরবৈরিক ক্যারাভান’ প্রবন্ধ অন্নদাশঙ্কর রায় (১৯০৪-২০০২), ধূর্জটি প্রসাদ মুখোপাধ্যায় (১৮৯৬-১৯৬০), বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-১৯৭৪) অমিয় চক্রবর্তী (১৯০১-১৯৮৬), বিষ্ণু দে (১৯৯০), সুধীন দত্ত, জীবনানন্দ দাশ পর্যন্ত কবিদের আধুনিকতা, বিষয় প্রকরণ ও বক্তব্যকে স্পর্শ করেছে। তাঁর রচনার অনিবার্য উপকরণ শামসুর রাহমান, আল-মাহমুদ প্রমুখ। শামসুর রাহমানের কবিতার ‘কলা কুশলতা’ শীর্ষক প্রবন্ধে ১৯৭৬-এ প্রকাশিত ছন্দ, শব্দ, চিত্রকল্পের বিস্তার লক্ষ্য করা যায়। শামসুর রাহমান একজন নাগরিক কবি। নাগরিক কবির প্রেম, বেদনাবোধ, অশ্রু ও আনন্দ নিয়ে মান্নান সৈয়দ গভীরে প্রবেশ করেছেন। আল-মাহমুদের কবিতায় গ্রাম, প্রকৃতি, সৌন্দর্য বর্ণনা তাঁর কাছে সমর্পিত হয়েছে। এমনকি তাঁর বিশ্বাস রাজনৈতিক অবস্থানের পাশাপাশি অন্তর্লোকেরও পরিবর্তন মান্নান সৈয়দ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। ‘আল-মাহমুদের সাম্প্রতিক কবিতা’ প্রবন্ধে তিনি আল-মাহমুদের কাব্যজগতকে আবিষ্কার করেছেন। মান্নান সৈয়দ রচিত কাজী নজরুল ইসলাম বিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ: নজরুল ইসলামের কবিতা ও কবিতাগুচ্ছ (১৯৭৭), নজরুল ইসলাম: কালজ কালোত্তর (১৯৮৭), নজরুল ইসলামের কবিতা (২০০৩)। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে তাঁর লিখিত একটি প্রবন্ধ পাঠক প্রিয় হয়ে ওঠে। মান্নান সৈয়দ ও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্য নিয়ে তাঁর অভিসন্দর্ভ রচনার কাজ করেছিলেন কিন্ত শেষ করেননি। শ্রমলব্ধ তাঁর গবেষণা প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তবু তিনি বিনয়ের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন, ‘দীর্ঘ সযত্ন নিরন্তর মনোযোগে যাদের বিষয়ে উৎসাহি থেকেছি মোটামুটি ধারাক্রম অনুযায়ী তারা হলেন, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, নজরুল ইসলাম, ফেদেরিকা গারথিয়া লোরকা, জীবনানন্দ দাশ, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, ফররুখ আহমদ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ও শাহাদাৎ হোসেন। তাদের কারো বিষয়ে এমন গ্রন্থ রচনা বা সম্পাদনা করেছি যে কোনো লেখাই আমার বিবেচনায় এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ হয়নি (আমার গদ্য, আমার বিশ্বাস)। তাঁর রচিত সাহিত্য শিল্পসুষমায় সমৃদ্ধ। আমরা আশা করি নতুন কোনো গবেষক তাঁর গবেষণার নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবেন ভবিষ্যতে।  ৫০ বছর ধরে মান্নান সৈয়দ সমালোচনা সাহিত্য রচনায় নিবেদিত থেকেছেন। তাঁর মতো জ্ঞানগর্ভ ও বিষয়ের অন্তরালে প্রবেশ করে তথ্য উদঘাটন প্রায় কম সাহিত্যিকই করেছেন। তিনি ছিলেন প্রজ্ঞাবান, অনতিক্রম্য একজন। প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস ছাড়াও তিনি লিখেছেন প্রচুর আত্মজৈবনিক রচনা। এর মধ্যে ‘বিষাদময় স্মৃতি, কাছের-দূরের মানুষ’ ও ‘মানবের ভেতরের বিষয়াবলী’ প্রাধান্য পেয়েছে।  আবদুল মান্নান সৈয়দ কবিতায় শহর, গ্রামের প্রকৃতি, দৃশ্যমান বস্তু, প্রেম- বিরহের কথা ও অন্তর্জগতের পরিবর্তনকে নিষ্ঠার সঙ্গে, অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সুচারুরূপে তুলে ধরেছেন তাঁর লেখালেখিতে। তাঁর কথামালা, উপস্থাপনের ভঙ্গি আকর্ষণীয় ও অনবদ্য। মান্নান সৈয়দ যতোদিন জীবনযাপন করেছেন তার পুরোটায় লেখালেখি ও সম্পাদনার কাজে ব্যয় করেছেন। এটা ছিল তাঁর নৈমিত্রিক কাজের মধ্যে একটা। মৌলিক রচনার কাজে কিংবা প্রুফ করায় ব্যস্ত, নিমগ্ন থাকতেন দিনের পর দিন। কবিতায় তিনি নতুন ভাবনা ও বিষয়বস্তুকে সহজ-সরলভাবে অনায়াসেই অনুপ্রবেশ করিয়েছেন। তাঁর সময়ের লেখকরা তাঁর দেয়া তথ্য ও বক্তব্যের ওপর আস্থা রেখেছেন। তাঁর মতো কোনো বিকল্প গবেষক আজো তৈরি হয়নি। তিনি আজো সবার কাছে সমানভাবেই অনুকরণীয় হয়ে আছেন।  পরাবাস্তব কবিতা, দীর্ঘ কবিতা ও ভিন্নধারার কবিতা রচনায় তাঁর নিবিষ্ট মনোযোগ ছিল। তাঁর কবিতা ভাবনা ‘কবিতা মানে রূপান্তর, কবিতা মানে বদল, কবিতা মানে পরিবর্তন’, কবিতা মানে অবৈকল্য নয়, কবিতা মানে তির্যকতা। কবিতা নয় বস্তু ফলক, এমনকি কল্পনা ফলকও নয়। কবিতা বস্তুকে তো রূপান্তরিত করেই এমনকি কল্পনাকেও পরিবর্তন করে ফেলে [করতলে মহাদেশ]। ‘মাছ সিরিজ (১৯৮৪)’, কাব্যগ্রন্থে কবির অন্তর্গত আবেগ, ভাষা ও বক্তব্য অনন্য। জন্মান্ধ কবিতা গুচ্ছে ‘জোৎস্না রৌদ্রের চিকিৎসা’, ‘সংবেদন ও জলতরঙ্গ’, কবিতা কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড, পার্ক স্ট্রিটে একরাত্রি, গ্রন্থে তির্যক দৃষ্টিতে আলো ফেলেছিলেন তিনি। ৪২টি ‘চতুর্দশপদী’ কবিতা তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতায় গ্রন্থাবদ্ধ হয়েছিল। কবি, প্রাবন্ধিক, গল্পকার, গবেষক বহুমাত্রিক পরিচয়ে পরিচিত মান্নান সৈয়দ ছিলেন অতলস্পর্শী। মান্নান সৈয়দ রচিত  জন্মান্ধ কবিতা কাব্যগ্রন্থে কবিতাগুচ্ছ টানা গদ্যে লেখা। অনেকে এ গ্রন্থভুক্ত কবিতাগুলোকে ‘কন্টিনেন্টাল প্রোজ পোয়েম’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ছয় দশক কবিতার যে নতুন ধারা বাংলা সাহিত্যে সূচিত হয়েছিল তাতে তিনি ছিলেন অগ্রগণ্য। তাঁর রচিত কবিতার সমন্বিত ধারায় বিষয়ের সংমিশ্রণ ঘটেছে। উপমা প্রতীক ব্যবহারে পাশ্চাত্য রীতি-নীতিকে তিনি অনুসরণ করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি তাঁর সমসাময়িক কবিদের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। তাঁর কবিতার চিত্র মানুষের জন্য এক নতুন আলোর দরোজা উন্মুক্ত করেছিল তখন। তাই তাঁর পরাবাস্তব কবিতায় নতুন সংযোজন লক্ষ্য করা যায়: জোৎস্না ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছে দরোজায়, সব দরোজায়, আমার  চারদিকে যতোগুলো দরোজা আছে সময়ের নীলিমার পাতালে জ্বলছে গাছ সকল সবুজ মশাল, বাস একটি নক্ষত্র, পুলিশ একটি নক্ষত্র, দোকান একটি নক্ষত্র আর সমস্তের উপর বরফ পড়ছে। এরকম দৃশ্যে আহত  হয়ে আমি শুয়ে পথের উপর, আমার পাশের দুচোখ চাঁদ ও সূর্যের মতো অন্ধ হয়ে গেল, আর যে আমার জন্ম হলো তোমাদের করতলে মনোজ সে, অশোক সে। জোৎস্না তাঁর কাছে ভূত, কিন্তু একটি গানের উপর, দরোজা  তার কাছে পুলিশ কিন্তু একটি জন্মের উপর মৃত্যু তার কাছে দোজখ কিন্তু একটি ফুলের উপর। [অশোক কানন: জন্মান্ধ কবিতাগুচ্ছ]

পরম্পরা

পরম্পরা

ফাঁকা বিলের মধ্যে গ্রাম। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে এক নদী। এ নদীতে বেশির ভাগ সময় ভাটা চলে। জোয়ার আসে দীর্ঘ সময় পর। সকাল বেলা রোদ এলে, পুরো লোকালয় আলোকিত হয়। আর আলোকিত হয় সাপখালী নদী। নদীর জল ঝিকমিক করে জ্বলে ওঠে? সেদিকে তাকালে চোখে জ্বালাপোড়া করে। নদীর তীর ঘেঁষে জেলেপাড়া। সিধু, হরি, রাখাল নৌকায় ভেসে নদীতে বেড় জাল ফেলছে। হরি তার ভেজা হাত লুঙ্গিতে মুছে একটা বিড়ি বের করে মুখে দিয়ে বলে, গ্যাস লাইটটা দেরে, রাখাল। রাখাল তার গেঞ্জির পকেট থেকে গ্যাস লাইটটা বের করে হরিকে দেয়। বলে, নদীতে আর মাছ নাই মনে কয়, সব মাছ ধরা হয়ে গেছে। আগে নদীতে জাল ফেললে কেমন মাছ লাফাইত। এখন আর কোনো মাছের দেখা নাই। কথা যা বলেছিস, ঠিকিরে। সিধু বলে। এই নদীকে জলাশয় করে মাছ চাষ করা, একজন মানুষের স্বপ্ন। লোকটার নাম আবুল মোড়ল। সে সরকারের দপ্তর মহলে নদী ডিড নেওয়ার ব্যাপারে তদবির করে চলেছে। তার তদবির সফল হয়েছে কিনা জানা গেল না। তবে ইদানীং তিনি সাপখালী নদীকে নিজের বলে দাবি করছে। একদল লোক রেখেছে নদী পাহারার জন্য। লোকগুলো এ গাঁয়ের কেউ না। অপরিচিত। তাদের হাতে সময়ে অসময়ে রাইফেল দেখা যায়। নদীর সাথে জেলেদের সম্পর্ক জীবন-মরণের। এখন তাদের অবস্থা দুর্বিষহ। জেলেদের রান্নাঘরগুলোতে উনুন জ্বলছে এক বেলা করে, কারো কারো দুবেলা করে। সন্ধ্যার সাথে সাথে পাড়া কেমন নিস্তব্ধ হয়। আগে তাদের রাতভর নদীতে মাছ শিকারে আসা যাওয়া চলত। সন্ধ্যে বেলা সিধুর ছেলে নিধু নদীতে খেওলা জাল ফেলতেই, তাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে মোড়লের লোক। মোচওয়ালা একজন লাঠিয়াল বলে, “চাষের মাছ ধইরতে চাও জাইল্যার, পুত। একবারে গুলি কইরা বুক ফুটো কইরা, নদীতে ভাসায়া দিমু।” নিধুকে চারপাশ দিয়ে লাঠি দিয়ে আঘাত করতে থাকে। নিধু অচেতন হয়ে গোড় খেয়ে নদীর জলে পড়ে। অজ্ঞান হওয়ার পূর্বে তার শেষ কথা ছিল, “ভগবান, তুমি দেখো। মোড়ল কত নিকৃষ্ট? তার বিচার একমাত্র তুমি পারো করতে।” তার শরীর ফেটে রক্তে লাল হয় জলের কিছু অংশ। তখনও চলতে থাকে মোড়লের লোকজনের পাশবিকতা। এরপর আরও অনেকে মার খেল মোড়লের হাতে।  নদীর সাথে জেলেদের সম্পর্ক ছিন্নের বিষয় নিয়ে গ্রামের এক আউলা কিশোরের মনে শোকের মাতম। তার মনে চিন্তা কিভাবে সাপখালী নদীকে মোড়লের হাত থেকে অবমুক্ত করা যায়? সে সাতক্ষীরা শহরের এক পত্রিকা সম্পাদককে সাপখালী নদী নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে অনুরোধ করল। সম্পাদক তার মন জোগাতে বললেন, আপনাদের মতো সুন্দর মনের মানুষ আছে বলেই পৃথিবী এত সুন্দর। আপনারা দেশের মানুষের কথা ভাবেন বলেই এই দেশ সকল শ্রেণির মানুষের জন্য, শ্যামল ভূমি।  আউলা কিশোর বলল, আপনারা সাংবাদিকতায় সাহসিকতা দেখালে দেশটা মানুষের জন্য স্বর্ণভূমি হবে।  সম্পাদক সাহেব বললেন, আমি সাপখালী নদীর সংবাদটা নিজে লিখে প্রকাশ করব। সম্পাদক সাহেবের বয়ান নিছক মিথ্যা হয়ে গেল। সংবাদ প্রকাশ না করে  মোড়লের কাছ থেকে মোটা অর্থ গ্রহণ করল। যার কারণে সংবাদটা টাকার নিচে চাপা পড়ে গেল।  আউলা কিশোর সাপখালী নদী দখল নিয়ে একটা প্রতিবেদন লিখল। লেখাটা সে মোবাইলে টাইপ করে  ..... পাঠাল। কাকতালীয় ভাবে লেখাটা পরদিন ....... সম্পাদকীয় পাতার নিচের দিকে তার নামে ছাপা হলো। শিরোনাম, “সাপখালী নদীতে বেড়া দিয়ে মাছ চাষ”। এই সংবাদ প্রকাশের পর, সেটা মোড়লের চোখে পড়ল। মোড়ল রাগে আউলা কিশোরকে খুন করার পরিকল্পনা করল। বলল, এই শালা এত সাহস কেমনে পাইল? ওরে জবাই কইরা নদীতে ভাসাইয়া দাও।  একজন লাঠিয়াল বলে, বস মাথা ঠান্ডা করেন। এমন ভাবে কাজ করতে হবে। যেন সাপও মরে, আবার লাঠিও না ভাঙে। আউলা কিশোর নিঃসঙ্গ মানব। একাকিত্ব তার প্রিয় অনুষঙ্গ। তাকে মোড়লের গুণ্ডারা অনুসরণ করে। তাকে হত্যার সুযোগ খুঁজতে থাকে। এক রাতে আউলা কিশোর বাড়িতে ঘরে জানালার কাছে শুয়েছিল। মোড়লের এক গুণ্ডা রামদা দিয়ে আউলা কিশোরের মাথা নিশানা করে কোপ মারে। জোরে শব্দ হয়। ওর ঘুম ভেঙে যায়। গুণ্ডারা পালায়। আউলা কিশোর উঠে আলো জ্বালিয়ে দেখে, জানালার শোলা কেটে দুভাগ হয়ে গেছে। আউলা কিশোরের মা বলে, এটা মোড়লের গুণ্ডাদের কাজ। তুমি এই রাঘববোয়ালের লেজে কেন আগুন লাগাতে গেলে? আউলা কিশোর কিছু বলে না। কিছু সময় পর বলে, আম্মা তুমি যাও, ঘুমাও।  রাতটা সে একাকী বসে কাটায়। এ ঘটনার কথা ভেবে, পরদিন রাতেও তার ঘুম আসেনি। মাঝরাতে তার চোখে ভাতঘুম এসেছিল। সে স্বপ্ন দেখে। মোড়লের লোকজন তাকে মেরে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে। তার এই দুঃস্বপ্নের কিছুদিন পর, একদিন ইউএনও, ওসি সাহেব এসে সাপখালী নদী অবমুক্ত করে দিয়ে গেলেন। সাপখালী ফিরে পেল তার পুরনো দিন। জেলেদের জীবনে ফিরল স্বাচ্ছন্দ। বছর খানেক পর- আউলা কিশোর পত্রিকা পড়ছিল। তার চোখে পড়ে একটা শিরোনাম, “বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে নাসিরনগরে তরুণ লেখককে পিটিয়ে হত্যা”। সে ভাবতে থাকে এই ঘটনাটা তার সাথেও ঘটতে পারত। তখন হয়ত শিরোনাম হতো, “সাপখালী নদীতে বেড়া দিয়ে মাছ চাষ প্রতিবাদ করায় তরুণ লেখককে কুপিয়ে হত্যা”। সবি নিয়তির লিখন! নদীতে নৌকায় ভেসে বেড় জাল ফেলছে সিধু, হরি, রাখাল। রাখালের কণ্ঠে সূর তোলা গান, আমায় ভাসাইলিরে, আমায় ডোবাইলিরে। গানের সুরে আউলা কিশোরের মনে মুক্ত ডানায় একদল পাখি উড়ে গেল? সাপখালীর তীরের জলপাখিদের এখন আর কেউ শিকার করতে পারে না!

প্রকৃতির অপরূপ সাজ

প্রকৃতির অপরূপ সাজ

ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। গ্রীস্মের কঠোর অগ্নি তাপে দত্ত প্রকৃতিতে বর্ষা নিয়ে আসে শীতল ও সজীবতা সকল প্রাণ যেন ফিরে পায় স্বস্তির নিশ্বাস। বিভিন্ন ঋতুর আগমনে অতুলনীয় প্রাকৃতিক লীলা বৈচিত্র্য ঘটে। বর্ষা ঋতুর আগমনে প্রকৃতি যেন নব যৌবন ফিরে পায়। বর্ষাকালের অন্যতম সৌন্দর্য হলো কদমফুল। কদমফুল দিয়ে শিশুরা মালা গাঁথে।  কদম ফুলের সৌরভ বাতাসে বাতাসে ভেসে বেড়ায় দিগন্তে। বৃষ্টি ভেজা কদমফুল যেন সবার মন কাড়ে। বর্ষাকালে হাসনাহেনা, গন্ধরাজ, কদমফুল, কেয়া, জুঁই, চামেলী কলাবতী, কামিনী, জারুল প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে। বর্ষাকালে টিনের চালে টাপুরটুপুর শব্দে মনটা উদাস হয়। দূরের সবুজ শ্যামল গ্রামের পুরো মাঠে জলরাশি আকাশে ঘন কালো মেঘ, দূরের আকাশে সাদা বক পাখিরা উড়ে যায় দূর অজানায়। নৌকা নিয়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ও কৃষকরা আনন্দ করে বর্ষার পানিতে বর্ষার রূপ যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে। বর্ষার পানিতে শাপলা পদ্ম ফুল ফুটে থাকে। শাপলা ফুল তুলে ছেলেমেয়েরা খুব আনন্দ করে। সাদা সাদা শাপলা যেন রূপের মুগ্ধতা ছড়ায়। বর্ষার আকাশ খুব ব্যস্ত সারাদিন আকাশে মেঘের ঘনঘটা মেঘের আড়ালে সূর্য লুকোচুরি খেলে। বর্ষাকালে বাংলার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে তাকালে দেখা যায় সবুজ আর সবুজ। গাছপালা ও প্রকৃতিতে একটা সজীবতা ভাব বিরাজ করে। আকাশ দেখলে মনে হয় আকাশের বুক ফেটে যেন এখনই বৃষ্টি হবে। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতার ভাষায় বলেছেন।