ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

জাতীয়
কাজে না ফিরলে কঠোর ব্যবস্থা

কাজে না ফিরলে কঠোর ব্যবস্থা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন সব শ্রেণির চাকরিকে ‘অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেইসঙ্গে কাজে না ফিরলে আন্দোলনকারীদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।  রবিবার বিকেলে সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে সরকারের এই কঠোর অবস্থানের কথা জানানো হয়। এর আগে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা করা হয়। আলোচনায় কর্মসূচি স্থগিত না করলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টার বৈঠক বাতিল করা হয়। সেইসঙ্গে এনবিআরের চাকরি অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।  এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক না হলেও, অর্থ উপদেষ্টা রবিবার বিকেলে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে রাজস্ব বোর্ডের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনায় ব্যবসায়ীরা উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন। সে আলোকে ব্যবসায়ীদের বৈঠকেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পাঁচ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে কমিটিতে কারা আছেন এবং কমিটির কার্যপরিধি কী হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি অর্থ উপদেষ্টা।  অপরদিকে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পরপরই সরকারের পক্ষ থেকে এনবিআর পরিস্থিতি নিয়ে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রদান করা হয়। এতে বলা হয়, ‘অতি জরুরি আমদানি-রপ্তানি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের কার্যক্রম চলমান রাখার স্বার্থে সরকার এনবিআরের আওতাধীন কাস্টমস হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনগুলোর সব স্তরের চাকরি ‘অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘দেশের বাজেট বাস্তবায়নে উন্নয়নমুখী কর্মকা- পরিচালনার প্রধান অন্তরায় হলো দুর্বল রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থা। রাষ্ট্রের প্রয়োজনের তুলনায় রাজস্ব আহরণ অনেক কম, যার পেছনে রয়েছে ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি। এই বাস্তবতায় সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা সব অংশীজনের পরামর্শ অনুযায়ী নেওয়া হয়েছে।’ গত দুই মাস ধরে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার প্রেক্ষিতে কর্মবিরতি ও শাটডাউনের মতো কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন। এর ফলে দেশের আমদানি-রপ্তানি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজস্ব আদায় কার্যক্রমে চরম অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।’ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আন্দোলনের নামে চলমান এই কর্মকা- পরিকল্পিত ও দুরভিসন্ধিমূলক। এটি জাতীয় স্বার্থ এবং নাগরিক অধিকারের পরিপন্থি। সরকারের পক্ষ থেকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা প্রত্যাখ্যান করে তারা অনমনীয় অবস্থানে রয়েছে।’ সরকার এও বলেছে, ‘আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনতিবিলম্বে কর্মস্থলে ফিরে যাবেন এবং জাতীয় স্বার্থ-পরিপন্থি ও আইনবিরোধী কর্মকা- থেকে বিরত থাকবেন। অন্যথায় জনগণের স্বার্থ ও দেশের অর্থনীতির সুরক্ষায় সরকার প্রয়োজনীয় কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।’ প্রসঙ্গত, এনবিআরের চলমান অচলাবস্থা ইতোমধ্যেই দেশের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে অপূরণীয় ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া, শুল্ক আদায় ও পণ্য খালাস কার্যক্রম। অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে এনবিআর ঐক্য পরিষদের বৈঠক হয়নি ॥ কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে আন্দোলনরত এনবিআর কর্মকর্তাদের নির্ধারিত বৈঠক হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর ঐক্য পরিষদ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চলমান অচলাবস্থা নিরসনের উপায় খুঁজতে রবিবার বিকেল ৪টায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব শফিউল বাসার বাদল  বলেন, অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের বসার কথা ছিল। এজন্য আমরা মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি স্থগিত করি। আমাদের একটা প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি স্থগিত না করলে তিনি আলোচনায় বসবেন না। আমরা কর্মসূচি স্থগিত করে আলোচনায় বসব না। তিনি বলেন, আবার ষড়যন্ত্রের মধ্যে পড়তে চাই না। কর্মসূচি চলমান অবস্থায় আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, অর্থ উপদেষ্টা এমন কোনো সিডিউল দেননি। বৈঠকের বিষয়টি আমরা জানি না। শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ॥ এনবিআরের আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক না হলেও অর্থ উপদেষ্টা দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। রবিবার বিকেল পৌনে ৬টার দিকে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ বৈঠক শুরু হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে বৈঠক শেষ হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের আন্দোলনের কারণে সার্বিক আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম তথা ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা। বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পাঁচ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে কমিটিতে কারা আছেন এবং কমিটির কার্যপরিধি কী হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি অর্থ উপদেষ্টা।  তিনি বলেন, ‘এনবিআর কীভাবে সংস্কার করা যায় সে বিষয়ে কমিটি আলাপ-আলোচনা করবে। তারা সবার কথা শুনবে।’ ৫ সদস্যের কমিটিতে কারা কারা আছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, কমিটিতে কারা আছেন তাদের নাম আমি এখন বলব না। এনবিআরের ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নে কারা আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ওটা আমার কনসার্ন, ডিপার্টমেন্ট না। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান, আইসিসিবি সহ-সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী, মেট্রোপলিটন চেম্বারের (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান, এমসিসিআই সহ-সভাপতি ও ট্রান্সকম গ্রুপের সিইও সিমিন রহমান, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকিন আহমেদ প্রমুখ। বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানও উপস্থিত ছিলেন।

adbilive
adbilive
‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ করবে এনসিপি

‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ করবে এনসিপি

গতবছরের ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেখ হাসিনার পতনে এক দফার ঘোষণা দিয়েছিলেন নাহিদ ইসলাম। এবার সেই দিনটিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ও ইশতেহার পাঠ করার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) এই আহ্বায়ক।  রবিবার সকালে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি। নাহিদ ইসলাম বলেন, সরকারের জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার প্রতিশ্রুত মেয়াদ শেষ হয়েছে। সরকারের জায়গা থেকে কোনো পদক্ষেপ দেখিনি। সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তাই আমরাই জুলাই ঘোষণাপত্র দেব। ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতা ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ও ইশতেহার পাঠ করবে। সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে স্মরণ করতে আগামী ১ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত দেশের সব জেলায় জুলাই পদযাত্রা হবে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’। ১ জুলাই শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে এই পদযাত্রা শুরু হবে। এই সময়ে আমরা শহীদ পরিবারদের কাছে যাব। তাদের কবর জিয়ারত করব। আহত যোদ্ধা ও অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার সঙ্গে কথা বলব। জুলাই নিয়ে তাদের আকাক্সক্ষার কথা শুনব। জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা একসঙ্গে এই পদযাত্রা করবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জুলাই পদযাত্রা বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করেছি। এই কমিটি পুরো পদযাত্রা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমকে কমিটির আহ্বায়ক এবং যুগ্ম-আহ্বায়ক অনিক রায়কে সদস্যসচিব করা হয়েছে। কোন রুটে, কোন জেলায় পদযাত্রা হবে, তার বিস্তারিত আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জানিয়ে দেব।’ এ ছাড়া ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী শহীদ দিবস, ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র ও ইশতেহার পাঠ এবং ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার মুক্তি দিবস উদ্যাপনেরও ঘোষণা দেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আগামী ১৬ জুলাই যেদিন আবু সাঈদ শহীদ হন সেদিনকে বৈষম্যবিরোধী শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হবে। এদিন সারাদেশে শহীদদের জন্য দোয়া মাহফিল ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই পদযাত্রায় সারাদেশের মানুষের আকাক্সক্ষা ও প্রত্যাশার কথা শুনে আমরা আগস্টে জুলাই ঘোষণাপত্র ও ইশতেহার পাঠ করব।’ ছাত্র-জনতার মুক্তি দিবস উদ্যাপনের বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার মুক্তি দিবস উদ্যাপন করব। এদিন শেখ হাসিনার পালানোর মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান প্রাথমিক বিজয় অর্জন করেছিল। বাংলাদেশের মানুষ নতুন করে স্বাধীনতা ও মুক্তি লাভ করেছিল। ফলে সে মুক্তি উদ্যাপনে আমরা মুক্তি দিবস উদ্যাপন করব।’ দলের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্র দিলে সরকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে কি না এ প্রশ্নে তিনি  বলেন, ‘সরকার আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ দেওয়ার কথা বলেছে। ঐকমত্য কমিশনে সেটি নিয়ে আলোচনা চলছে। সে প্রক্রিয়ায় আমরা অংশ নিচ্ছি। আমরা আশা করব, সরকার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জুলাই সনদ রচনা করবে। যেখানে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা উল্লেখ থাকবে।’ নাহিদ ইসলাম বলেন, সরকার বারবার জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা বলেও দিতে পারেনি। সরকার যেহেতু ব্যর্থ হয়েছে, তাই আর কারও ওপর নির্ভরশীল না হয়ে ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে এই ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে। এটা ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকেই হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন, কথা বলে তাদেরও আহ্বান জানানো হবে। এতে কেউ যদি সম্মত না হয়, সেটা তাদের ব্যাপার। তারা নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন বলেও জানিয়েছেন নাহিদ ইসলাম। জুলাই পদযাত্রায় কোনো বাধা বা হামলার আশঙ্কা করছেন কি না, এ প্রশ্নে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, এ ধরনের কিছু হলে তাদের প্রস্তুতি আছে।  সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও যুগ্ম-আহ্বায়ক অনিক রায় উপস্থিত ছিলেন।

এনবিআর কর্মকর্তাদের শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহার

এনবিআর কর্মকর্তাদের শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহার

ব্যবসা-বাণিজ্যের বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা দেশব্যাপী শাটডাউন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রবিবার রাতে ঢাকায় বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাসান মোহাম্মদ তারেক রিকাবদার এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। এ ছাড়া এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের মহাসচিব সেহেলা সিদ্দিকাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় এনবিআর সংস্কার পরিষদ তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে বলে জানা গেছে। সন্ধ্যায় অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ আন্দোলনরত এনবিআর কর্মকর্তাদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে ব্যবসায়ীরা এনবিআর সংস্কার এবং আন্দোলনকারীদের দাবি-দাওয়া সমাধান করার জন্য ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান। সেই সঙ্গে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে তাদের কাজে যোগদানের অনুরোধ জানান।  সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ তাদের চলমান শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন। পরে তাদের এই সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানান।  এর আগে সরকারের সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো সমাধান না হওয়ায় আগের ঘোষণা অনুযায়ী মার্চ টু এনবিআর ও কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছিল এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। রবিবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রধান কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব ও অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা এই ঘোষণা দিয়েছিলেন।

দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স

দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষ হওয়ার দুদিন আগেই প্রবাসীরা দেশে ৩০.০৫ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৫ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। একক অর্থবছর হিসাবে এটাই বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রবাসী আয়ের রেকর্ড। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো একক অর্থবছরে আর এত বেশি রেমিটেন্স দেশে আসেনি। সেই সঙ্গে এই প্রথম বাংলাদেশ রেমিটেন্স তথা প্রবাসী আয়ে ৩০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। এই রেকর্ড রেমিটেন্সে দেশের রিজার্ভ একটি সুসংহত অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের এই রেকর্ড রেমিটেন্স আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫.৫০ শতাংশ বেশি। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ২৮ জুন পর্যন্ত দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৩.৭৪ বিলিয়ন ডলার।  এর আগে একক অর্থবছর হিসেবে সর্বোচ্চ পরিমাণে রেমিটেন্সে রেকর্ড হয় ২০২০-২১ অর্থবছরে। সেই সময়ে কোভিডের কারণে হুন্ডির চ্যানেলগুলো বন্ধ থাকায় প্রবাসীরা ২৪.৭৭ বিলিয়ন ডলার আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে বা ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠান। এদিকে চলতি জুন মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ২.৫৩ বিলিয়ন ডলার; যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ২.৩৭ বিলিয়ন ডলার। রবিবার  বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি জুন মাসের প্রথম ২৮ দিনে ২৫৩ কোটি ৯২ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছে দেশে। এর মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন লাখ ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩৬ কোটি ১২ লাখ ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৬১ কোটি ৬১ লাখ ৪০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৫৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এর আগেও প্রবাসী আয় প্রবাহে ইতিবাচক ধারা ছিল। গত মে মাসে দেশে এসেছে ২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তারও আগে মার্চ মাসে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিটেন্স এসেছে। আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। পরের মাস নভেম্বরে এসেছে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৪ কোটি ডলার। এরপর চলতি বছরের জানুয়াতে ২১৯ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছে। এ ছাড়া মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে আসে ২৭৫ কোটি ডলারের রেমিটেন্স। সবশেষ মে মাসে ২৯৭ কোটি ডলারের রেমিটেন্স পাঠান প্রবাসী বাংলাদেশিরা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রেমিটেন্স প্রবাহ শুধু প্রবাসী পরিবারের আয় বাড়ায় না বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও বড় অবদান রাখে। এদিকে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠাতে প্রবাসীদের বিভিন্ন প্রণোদনা দিচ্ছে। ডিজিটাল চ্যানেলে অর্থ পাঠানো সহজ হওয়ায় এখন অনেকেই হুন্ডি এড়িয়ে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেল বেছে নিচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান,  বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠাতে নানা উদ্যোগ, উৎসবকেন্দ্রিক আয় বৃদ্ধি ও অবৈধ পথে প্রেরণ নিরুৎসাহিত করায় এই প্রবাহ বাড়ছে। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বিপুল রেমিটেন্স এলেও এখনো বড় অঙ্ক অবৈধ পথে চলে যাচ্ছে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে বৈদেশিক শ্রমবাজারে ৯ লাখ ৬ হাজার ৩৫৫ জন কর্মী যুক্ত হয়েছেন। আর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশে পাঠানো জনশক্তির অঙ্ক ছিল ১ কোটি ৬০ লাখ ৭৫ হাজার ৪৮৭ জন। এই বিপুল জনশক্তির অর্জিত আয় বৈধপথে দেশ আনতে পারলে বাৎসরিক রেমিটেন্সের অঙ্ক ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেত।  রেমিটেন্স আয়ের দিক থেকে ২০২৪ সালে বিশ্বে সপ্তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। গত বছর বাংলাদেশে সাড়ে ২৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। শীর্ষে ছিল ভারত। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের একটি ব্লগের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু। ভারত ২০২৪ সালে আনুমানিক ১২৯ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পেয়েছে। যা যেকোনো দেশের এক বছরে পাওয়া সর্বোচ্চ রেমিটেন্স। এ ছাড়া, গত বছর বৈশ্বিক রেমিটেন্সের মধ্যে ভারত একাই নিয়ে গেছে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ।