ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

চাঁনখারপুলে ৬ খুনের  মামলার পরবর্তী শুনানি বৃহস্পতিবার

ছাত্রদল নেতা হত্যায় ৬২ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:৩৯, ৩০ জুন ২০২৫

ছাত্রদল নেতা হত্যায় ৬২ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ

ছাত্রদল নেতা মো. নুরুজ্জামান জনি

পুলিশ হেফাজতে ‘কথিত বন্দুকযুদ্ধে’ ছাত্রদল নেতা মো. নুরুজ্জামান জনির মৃত্যুর ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। রবিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে জনির বাবা ইয়াকুব আলী এ অভিযোগ দায়ের করেন। অন্যদিকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গত ৫ আগস্ট রাজধানীর চাঁনখারপুলে গুলি করে ছয়জনকে হত্যা করা হয়।

এ ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রবিবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক  অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল -১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। 
ছাত্রদল নেতা মো. নুরুজ্জামান জনির মৃত্যুর ঘটনায় ৬২ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি খিলগাঁও এলাকায় পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে নুরুজ্জামান জনি নিহত হন। এর প্রায় ১০ বছর পর ২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জনির বাবা ইয়াকুব আলীর দায়ের করা খিলগাঁও থানার মামলায় সাবের হোসেন চৌধুরীসহ ৬২ জনের নাম উল্লেখ  করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের ১৯ জানুযারি সকাল আনুমানিক ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে নুরুজ্জামান জনি ও তার সহপাঠী মইনসহ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছোট ভাই মনিরুজ্জামান হীরাকে দেখতে যান। কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফেরার পথে আসামিরা জনি ও মইনকে ডিবি পরিচয় দিয়ে অবৈধভাবে আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে নির্যাতন চালায়। পরে তাদের ডিবি ঢাকা মেট্রোপলিটন দক্ষিণ কার্যালয়ে নিয়েও নির্যাতন চালানো হয়।
তখন নুরুজ্জামান জনির সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মুনিয়া পারভিনসহ আত্মীয়-স্বজনরা খিলগাঁও থানা, ডিবি দক্ষিণ অফিস, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অফিসসহ বিভিন্ন থানায় খোঁজ নেন। আসামিরা জনিকে আটক করেননি বলে জানান। দুদিন ধরে খোঁজাখুঁজির পরও জনির কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এরপর ২০ জানুয়ারি রাত আনুমানিক ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে খিলগাঁও থানার জোড়াপুকুর খেলার মাঠের আশপাশের মানুষজন চিৎকার শুনতে পান। নির্যাতিত ব্যক্তিটি ‘পানি পানি’ বলে চিৎকার ও ‘মা মা’ বলে আর্তনাদ করতে থাকেন। ঘটনাস্থলের এলাকার পাশে সি-ব্লকের বাসিন্দা লাভলী বেগম ওই রাতের কান্নার শব্দ শুনেছেন বলে জানান। এ-ব্লকের বাসিন্দা সাইফুদ্দিনের স্ত্রী সানজিদা আক্তার সেতু জানান, রাত ৩টার দিকে ‘ও মাগো, মা, মা.. বাঁচাও’ বলে কয়েকবার চিৎকার শুনেছেন।
ভোর রাতে বাদীসহ সাক্ষী ও প্রতিবেশীরা খিলগাঁও থানার জোড়াপুকুর মাঠের দিকে গিয়ে পুলিশের উপস্থিতি দেখতে পান। আসামিরা বলেন, নুরুজ্জামান জনি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। তার মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। বাদী ও সাক্ষীরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে যান এবং সেখানে গিয়ে দেখতে পান নুরুজ্জামানের বুকের বামে, ডান দিকে, দুই হাতের তালুতে ১৬টি গুলির চিহ্ন। তার পুরো শরীর গুলিতে ঝাঁজরা করে ফেলেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জিজ্ঞাসা করলে তারা গালিগালাজ করেন। মরদেহ গ্রহণ না করলে মামলা দেওয়ার হুমকি দেন।
চাঁনখারপুলে ৬ জনকে হত্যা: ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গত ৫ আগস্ট রাজধানীর চাঁনখারপুলে গুলি করে ছয়জনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৩ জুলাই দিন ঠিক করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রবিবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেলে এই মামলার চার আসামিকে হাজির করা হয়। পরে ট্রাইব্যুনাল এ দিন নির্ধারণ করে আদেশ দেন।
এদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন চেয়ে শুনানি শেষ করেন। ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন সংক্রান্ত প্রথম কোনো শুনানি শুরু হওয়ায় আজকের দিনটিকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর। অন্যদিকে, এ মামলায় আসামিপক্ষে অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন শুনানির জন্য সময় চাওয়া হয়। এরপর শুনানির জন্য পরবর্তী দিন ঠিক করেন আদালত। আসামিপক্ষের করা অব্যাহতির আবেদন শুনানির জন্য আগামী বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করা হয়।
এর আগে মামলার পলাতক চার আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে গত ৩ জুন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। যাদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় তারা হলেন- ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।

তদন্ত প্রতিবেদনের অভিযোগে বলা হয়, রাজধানীর চাঁনখারপুল এলাকায় আসামিরা নিরস্ত্র ও শান্তিপুর্ণ  আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক এবং মানিক মিয়াকে গুলি করে হত্যা করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে আসামি করা হয় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আটজনকে। তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার আছেন ইন্সপেক্টর আরশাদ, কনস্টেবল মো. সুজন, কনস্টেবল ইমাজ হোসেন ইমন ও কনস্টেবল নাসিরুল ইসলাম।

×