ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

একতরফা সম্পর্কের মানসিক ফাঁদ থেকে বের হওয়ার উপায়!

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৩০ জুন ২০২৫

একতরফা সম্পর্কের মানসিক ফাঁদ থেকে বের হওয়ার উপায়!

ছ‌বি: প্রতীকী

অনেকেই এমন এক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন যেখানে ভালোবাসা একপাক্ষিক। সম্পর্কের শুরুতে একজন মানুষ হয়তো কিছু ভালো ব্যবহার, সহানুভূতি বা যত্ন দেখান। এতে অনেকেই তাকে ভালোবাসতে শুরু করেন এবং তাকে নিয়ে কল্পনার জগতে ঢুকে পড়েন। তবে সেই মানুষটি বাস্তবে হয়তো তেমন কিছুই ভাবছেন না বা সম্পর্কটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তবুও তাকে ভুলে থাকা সম্ভব হয় না।

এই অবস্থাকে অনেক সময় অবসেশন বা আসক্তি বলা হয়। এর পেছনে কারণ থাকে মানসিক অপূর্ণতা, ছোটবেলার ভালোবাসার অভাব বা অবহেলা। কেউ যদি ছোটবেলায় বাবা-মা বা কাছের মানুষদের কাছ থেকে শর্তহীন ভালোবাসা না পায়, পরবর্তীতে একটু সহানুভূতি পেলেই সেটাকে ভালোবাসা ভেবে ফেলে। তখন কল্পনার ভেতর তৈরি হয় এক আদর্শ মানুষ, যার সঙ্গে বাস্তব মানুষের মিল নেই। কিন্তু ওই কল্পনার মানুষটিকেই আঁকড়ে ধরতে চায় মন।

ধীরে ধীরে সেই মানুষটির প্রতি নির্ভরশীলতা এতটাই বাড়ে যে সম্পর্কটি টক্সিক হলেও ছেড়ে থাকা সম্ভব হয় না। এমনকি জানা থাকলেও যে মানুষটি ধোঁকা দিচ্ছে বা বারবার কষ্ট দিচ্ছে, তবুও তাকে নিয়েই ভাবনা ঘুরে ফিরে আসে। আত্মসম্মান নষ্ট হয়, নিজের কষ্টকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।

এই একতরফা ভালোবাসা অনেক সময় নিজের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতির কারণেও হয়। কেউ যদি নিজের মধ্যে কিছু গুণের অভাব অনুভব করে, যেমন আত্মবিশ্বাস, রসবোধ বা স্থিরতা, তখন যেকোনো একজন মানুষ যার মধ্যে এই গুণগুলো রয়েছে, তাকেই অনুসরণ করতে চায়। তখন তার প্রতি একধরনের মানসিক টান তৈরি হয়।

সমস্যা হয় তখনই, যখন এই ভালো লাগা একতরফা ভালোবাসায় পরিণত হয়। তখন বাস্তবকে না দেখে, আগের ভালো আচরণগুলোকেই ধরে রাখা হয়। ভাবা হয়, একদিন সে ঠিক হয়ে যাবে, আবার আগের মতো ব্যবহার করবে।

এই মানসিক ফাঁদ থেকে বের হতে হলে প্রথমেই বুঝতে হবে যে, বাস্তব মানুষ আর কল্পনার মানুষ এক নয়। মানুষটি একদিন সুন্দর ব্যবহার করেছে মানেই সে ভালোবাসে, এমন নয়। তার কিছু আচরণ আমাদের ভালো লাগতে পারে, তবে তার সবটা যে আমাদের উপযোগী, তা নয়।

নিজের ভালো থাকা আরেকজনের ওপর নির্ভর করা বন্ধ করতে হবে। নিজেকেই নিজের ভালো থাকার চাবি ধরে রাখতে হবে। যখন এই সত্য উপলব্ধি করা যায়, তখনই একতরফা সম্পর্ক থেকে ধীরে ধীরে বের হওয়া সম্ভব হয়। সম্পর্ক গড়ে ওঠে পারস্পরিক সম্মান আর ভালোবাসার ওপর। শুধু নিজের কষ্ট ভুলে আরেকজনকে ধরে রাখা কখনোই ভালোবাসা নয়, বরং নিজেকে ধ্বংস করার এক ধরণের উপায়।

এই কারণে আত্মচর্চা, নিজেকে ভালোবাসা এবং বাস্তবতা মেনে নেওয়া জরুরি। একতরফা সম্পর্কের ফাঁদ থেকে মুক্তি পেতে হলে, নিজের ভেতরের অপূর্ণতা ও অভাবগুলোর দিকেও নজর দিতে হবে। তবেই তৈরি হবে এক শান্ত, সুস্থ এবং পরিপূর্ণ জীবন।

এম.কে.

×